Ajker Patrika

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কোনো প্রক্সি নেই: খামেনি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ০৭
Thumbnail image
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ছবি: ইরনা

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কোনো প্রক্সি নেই। মূলত, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের পর ইরান মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রক্সি হারিয়েছে—বিভিন্ন নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই মন্তব্য করেছেন। ইরানের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা ইরনার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা প্রক্সি না থাকার বিষয়টি অস্বীকার করলেও বিশ্বজুড়ে, এমনকি খোদ ইরান যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিজেদের নেতৃত্বের প্রতিরোধ অক্ষের কথা স্বীকার করে থাকে। প্রতিরোধ অক্ষ বা রেজিস্ট্যান্স এক্সিস বলতে সাধারণত, মধ্যপ্রাচ্যের একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক ও সামরিক জোটকে বোঝানো হয়। যা ইসরায়েল এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠিত। এই অক্ষটি—ইরান, সিরিয়া, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীসহ অন্যান্য কিছু গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত।

এই জোটের মূল লক্ষ্য হলো নিজেদের অঞ্চলে পশ্চিমা হস্তক্ষেপ ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের মোকাবিলা করা। এটি ইরানের নেতৃত্বে পরিচালিত এবং সামরিক ও আদর্শিকভাবে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নীতিমালা দ্বারা অনুপ্রাণিত।

আজ রোববার ইসলাম ধর্মের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর কন্যা হজরত ফাতিমার (রা. ) জন্মবার্ষিকীতে একটি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় আয়াতুল্লাহ খামেনি এ কথা বলেন। সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সর্বোচ্চ নেতা চলমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দেশে একটি ‘শক্তিশালী ও সম্মানজনক’ আন্দোলন আবির্ভূত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।

আলী খামেনি বলেন, ‘আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি যে সিরিয়ায়ও একটি শক্তিশালী ও সম্মানিত দেশের কাতারে উঠে আসবে। একজন সিরিয়ান তরুণের হারানোর কিছু নেই—তার বিশ্ববিদ্যালয় অনিরাপদ, তার স্কুল অনিরাপদ, তার বাড়ি অনিরাপদ, তার রাস্তা অনিরাপদ, তার পুরো জীবনই অনিরাপদ। সে কী করবে?’

ইরান-সিরিয়া সম্পর্কের ইতিহাস মূলত ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর শুরু হয়। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পিতা হাফিজ আল-আসাদের শাসনের সময় ইরানের সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলে দামেস্ক। বিশেষ করে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়। ২০০০ সালে বাশার আল-আসাদ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও সিরিয়া ইরানকে তার মূল কৌশলগত সহযোগী হিসেবে ধরে রাখে। ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ইরান বাশার আল-আসাদের শাসন রক্ষায় সামরিক সহায়তা প্রদান করে। ইরান শিয়া মিলিশিয়া গঠন এবং ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ তৈরি করে, যা এখনো সিরিয়ায় ইরানের প্রভাব বজায় রাখছে।

ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির ইতিহাস দীর্ঘ ও জটিল। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান একটি ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং একপর্যায়ে বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ক্ষমতায় আসেন। বিপ্লবের মাধ্যমে ইরান রাজতন্ত্রের পরিবর্তে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে এবং পশ্চিমা শক্তির প্রভাব, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়।

এদিকে, ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর চরম অবনতি ঘটে। ইরান ইসরায়েলকে বৈধ রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেয়নি এবং ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দিতে শুরু করে। ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করলে ইসরায়েল উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। কারণ, তারা মনে করে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে। ইরান ইসরায়েল বিরোধী গোষ্ঠী যেমন হিজবুল্লাহ, হামাস এবং হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে তার আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করে। বর্তমানে, ইরান ইসরায়েলের অস্তিত্ব অস্বীকার করে এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সমর্থন জানায়, ইসরায়েলও ইরানকে তার প্রধান শত্রু হিসেবে দেখে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত