Ajker Patrika

সুইডেনের কাছ থেকে ১৫০টি পঞ্চম প্রজন্মের গ্রিপেন–ই যুদ্ধবিমান কিনছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ১৫
সুইডেনের কাছ থেকে ১৫০টি গ্রিপেন যুদ্ধবিমান কিনছে ইউক্রেন। ছবি: সংগৃহীত
সুইডেনের কাছ থেকে ১৫০টি গ্রিপেন যুদ্ধবিমান কিনছে ইউক্রেন। ছবি: সংগৃহীত

সুইডেন ইউক্রেনকে সর্বোচ্চ ১৫০টি নিজস্বভাবে তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের গ্রিপেন যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে পারে। দুই দেশ এই বিষয়ে একটি ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ বা ‘ইচ্ছাপত্রে’ সই করেছে দেশটি। গতকাল বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর এই তথ্য জানিয়েছেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ সুইডেনের লিনশপিং শহরে দুই নেতার বৈঠক হয়। এরপর তাঁরা সফর করেন গ্রিপেনের উৎপাদক ‘সাব–SAAB’—এর কারখানায়। এই প্রতিষ্ঠানই তৈরি করে জেএএস ৩৯ গ্রিপেন যুদ্ধবিমান, গ্লোবালআই নজরদারি বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, অ্যান্টি-ট্যাংক অস্ত্র এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম।

সংবাদ সম্মেলনে ক্রিস্টারসন জানান, দুই দেশ আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা চুক্তি করেছে। এই সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে ১০০—১৫০টি নতুন গ্রিপেন–ই মডেলের যুদ্ধবিমান রপ্তানির সম্ভাবনা, যা সুইডেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিমান রপ্তানি অর্ডার হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, সামনে পথটা দীর্ঘ। কিন্তু আজ থেকে আমরা ইউক্রেনকে বিপুলসংখ্যক গ্রিপেন যুদ্ধবিমান সরবরাহের সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’

গত দুই বছর ধরে ইউক্রেনে গ্রিপেন সরবরাহের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। তবে গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান হাতে পাওয়ার পর আপাতত সেটির ওপর মনোযোগ দিতে এই পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হয়। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ইউক্রেনের জন্য গ্রিপেন পাওয়ার কাজ শুরু করেছি। ভবিষ্যৎ চুক্তিতে আমরা কমপক্ষে ১০০টি বিমান অর্জন করতে পারব বলে আশা করছি।’

তিনি আরও জানান, ইউক্রেনীয় পাইলটরা ইতিমধ্যে সুইডেনে গিয়ে গ্রিপেন পরীক্ষা করেছেন, যাতে ভবিষ্যতে বিমান রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ হয়। গ্রিপেন তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল এবং টেকসই—যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ এর মতো উন্নত বিমানের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী বিকল্প। জেলেনস্কির আশা, আগামী বছর থেকেই ইউক্রেন গ্রিপেন যুদ্ধবিমান পাবে এবং ব্যবহার শুরু করবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য গ্রিপেন অত্যন্ত জরুরি। বিষয়টি অর্থ, কৌশল ও গতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত।’

ক্রিস্টারসন জানান, এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন বিমানের উৎপাদন ও সরবরাহ শুরু হতে তিন বছর লাগতে পারে। পুরোনো গ্রিপেন মডেল পাঠানোর বিষয়টি এখনো খোলা রয়েছে, যদিও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী জানান, বিমান ক্রয়ের অর্থায়ন হতে পারে পশ্চিমা দেশগুলোতে থাকা রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদ থেকে এবং ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’—এর অন্তর্ভুক্ত মিত্র দেশগুলোর সহায়তায়। তবে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের আগে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (RUSI) বিমানযুদ্ধ বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেন, এই সম্ভাব্য চুক্তি দেখায় যে ইউক্রেন কেবল যুদ্ধের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন নয়, বরং যুদ্ধোত্তর বিমানবাহিনীর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েও ভাবছে।

বর্তমানে ইউক্রেনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ এবং ফ্রান্সের তৈরি মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান রয়েছে। ব্রঙ্ক বলেন, গ্রিপেন ই এই দুইয়ের তুলনায় অনেক বেশি সক্ষম মধ্য-ওজনের যুদ্ধবিমান হতে পারে। এর উন্নত রাডার, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা এবং দূরপাল্লার মিটিওর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেবে।

১৯৯৬ সাল থেকে গ্রিপেন সক্রিয় রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২৮০টি বিমান তৈরি করেছে সাব। বুধবার এই খবর প্রকাশিত হওয়ার আগেই কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য বেড়েছে ৩.৩ শতাংশ। সুইডেন নিজেই সর্বশেষ গ্রিপেন–ই মডেলের ৬০টি বিমান অর্ডার করেছে। লিনশপিংয়ের কারখানায় সাব উৎপাদনক্ষমতা বাড়াচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে বছরে ২০–৩০টি বিমান তৈরির লক্ষ্য নিয়েছে তারা। প্রতিষ্ঠানটি ব্রাজিলেও গ্রিপেন নির্মাণ করছে।

লিনশপিংয়ে পৌঁছানোর আগে জেলেনস্কি অল্প সময়ের জন্য নরওয়ের রাজধানী অসলোতে থামেন। সেখানে নরওয়ে সরকার ঘোষণা দেয়—তারা ইউক্রেনকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের জন্য আরও দেড় বিলিয়ন নরওয়েজীয় ক্রোন (প্রায় ১৪৯.৪ মিলিয়ন ডলার) অনুদান দেবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি

এলাকার খবর
Loading...