Ajker Patrika

মোদি-ট্রাম্পের ‘ব্রোম্যান্সে’ ছেদ, ভারতের ওপর মার্কিন শুল্কের খড়্গ, এরপর কী

অনলাইন ডেস্ক
কোলাকুলি করছেন নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
কোলাকুলি করছেন নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পুরোনো ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ভারতে আশাবাদ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যেই সেই সম্পর্ক নতুন উত্তেজনার মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ট্রাম্প-মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে ‘ব্রোম্যান্স’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হতো। সেই ব্রোম্যান্সে ছেদ পড়েছে।

জুলাইয়ের শেষে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। এরপর রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি বন্ধে চাপ দিতে সেই শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ইউক্রেনে কতজন রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রে মারা যাচ্ছে, তা ভারতীয়রা পাত্তা দেয় না। তাই ভারতের ওপর বাড়তি শুল্ক চাপিয়ে দেব।’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়া জবাব দিয়ে বলেছে, ‘আমাদের আমদানি বাজারভিত্তিক এবং ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ অবিচার, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য।’ সোজা কথায় ভারত এখনো পর্যন্ত মার্কিন চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি খুব একটা। দেশটি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনেই যাচ্ছে। এমনকি, দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে, মস্কো সফরে গিয়েছেন ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরপরই এই বিষয়ে ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়েত বলেন, ‘ট্রাম্প চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু ভারত তা মানছে না। কারণ, আমাদের এমএসএমই খাত ও কৃষিকে রক্ষা করতে হবে।’ তবে বিষয়টি অতটাও সহজ না। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের আকার বিশাল। প্রাথমিকভাবে মোদি এক ধরনের স্বদেশি আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। যেখানে তিনি ভারতীয়দের দেশীয় পণ্য কেনার আহ্বান জানিয়েছেন। মোদি এক জনসভায় বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি এক অস্থির সময় পার করছে। কিন্তু আমরা যা-ই কিনি, একটাই নীতি হবে—যা ভারতের ঘামে তৈরি, আমরা সেটাই কিনব।’

এ থেকে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। এমনকি গুজরাটের আহমেদাবাদ স্টেডিয়ামে মোদি ট্রাম্পকে ‘মাই ফ্রেন্ড বা আমার বন্ধু’ বলে সম্বোধন করলেও সেই বন্ধুত্ব এখন আর টের পাওয়া যাচ্ছে না। বাণিজ্য বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ ধর বলেন, ‘সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়।’

এই অবস্থায় ভারত আরও বেশি বেশি রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। রাশিয়া ভারতের অন্যতম প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী এবং মোদিকে ২০২৪ সালে রাশিয়ার সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার দেন পুতিন। যুদ্ধের পর ভারত রুশ তেল আমদানি অনেক বাড়িয়েছে। ভারতের এই আমদানি বন্ধের কোনো ইচ্ছা সম্ভবত নেই। আর তাই ভারত অজিত দোভালকে মস্কোয় পাঠিয়েছে। পাশাপাশি, এত দিন ভারত চীনা নেতৃত্বের সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা—এসসিও-কে পাত্তা না দিতে চাইলেও এখন দিচ্ছে। ভারত জানিয়েছে, মোদি আগামী ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠেয় এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যাবেন। যেখানে আবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও হাজির থাকবেন। ভারত আশা করছে, সেখানে পুতিনের পাশাপাশি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির। এসবই যে, যুক্তরাষ্ট্র পেছন থেকে সরে যাওয়ায় ভারতের শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা সে বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও মার্কিন থিংক ট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘ট্রাম্প ভারতকে তাঁর কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন নীতি থেকে সরাতে চাচ্ছেন...কিন্তু দিল্লি কোনোভাবেই এই স্বায়ত্তশাসন ছেড়ে দেবে না।’

ভারত জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে পশ্চিমাদের নীতি দ্বিমুখী। ইউরোপের রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ভারতের চেয়ে বেশি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ভারত তার অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।’ বিশ্লেষক জয়তী ঘোষ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ কি তাদের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ছেড়ে দিতে পারবে? তাহলে ভারত কেন দেবে?’

ত্রিগুনায়েত বলেন, ‘ভারতের জন্য এখন কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ...এটি আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ডিএনএর অংশ।’ কুগেলম্যানের ভাষায়, ‘ভারত ভারসাম্য রক্ষা করতে চেয়েছে, কিন্তু ট্রাম্প সেই চেষ্টার জন্যই ভারতকে শাস্তি দিচ্ছেন—যা বাইডেন প্রশাসন কখনো করেনি।’

তিনি মনে করেন, যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্পের ক্ষোভও কমে যেতে পারে। তাই ভারত এখন রাশিয়ার ওপর যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ বাড়াতে পারে। কুগেলম্যান বলেন, ‘কারণ, আপাতত ট্রাম্প পুতিনের ওপর রাগ ঝাড়ছেন ভারতের ওপর।’

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

নির্বাচনের আগে এসআই-এএসআইদের ব্যক্তিগত তথ্য তালাশে পুলিশ

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত