Ajker Patrika

মামলা প্রত্যাহার, শিগগির দেশে ফিরছে বাংলাদেশে আটক ৯৫ ভারতীয় জেলে

অনলাইন ডেস্ক    
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৩৫
Thumbnail image
বাংলাদেশে আটক ভারতীয় জেলেরা শিগগির নিজ দেশে ফিরে যাবেন। প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক ভারতের ৯৫ জেলে দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। গত অক্টোবরে ছয়টি ট্রলার নিয়ে সামুদ্রিক সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে তাদের আটক করা হয়। তবে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করায় তাদের দেশে ফেরার পথ সুগম হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আটক এই ৯৫ ভারতীয় জেলেদের বেশির ভাগই পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪-পরগনা জেলার বাসিন্দা। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার ফল।

এই আলোচনায় ভারত সরকার দেশটিতে আটক প্রায় ৯০ জন বাংলাদেশি জেলেকে হস্তান্তরের ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে। যারা ভারতের জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে বন্দী ছিলেন। দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মতপার্থক্যের মধ্যেও এই শুভেচ্ছা প্রদর্শন দুই দেশের জেলে সম্প্রদায়ের জন্য ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।

এর আগে, ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিবের জারি করা এক আদেশে ৯৫ জন জেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা সমস্ত মামলা প্রত্যাহারের এবং তাঁরা যে ছয়টি ট্রলারে ছিল সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

দক্ষিণ-পরগনার সাগরদ্বীপ সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা আদেশ পেয়েছি, যেখানে আমাদের জেলেদের বিরুদ্ধে সমস্ত ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের ভারতে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি আমাদের জন্য বড় স্বস্তির বিষয়। কারণ, এই দরিদ্র জেলেরা অক্টোবরের শুরু থেকে বাংলাদেশে কারাবন্দী ছিলেন।’

সতীনাথ পাত্র জানান, ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশে যাবেন তাদের সহকর্মীদের প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। তিনি বলেন, ‘সরকার আটক করা ট্রলারগুলোকেও মুক্তি দেবে। আমরা আশা করছি, তারা নতুন বছরের শুরুতেই বাড়ি ফিরবে।’

এর আগে, গত অক্টোবরে, চারটি ট্রলারে থাকা ৬৪ জন জেলেকে বাগেরহাট জেলায় আটক করা হয় এবং পরে আরও দুইটি ট্রলারে থাকা ৩১ জনকে বাংলাদেশের পটুয়াখালীর জলসীমায় আটক করা হয়। এর পর থেকে তারা সবাই বাংলাদেশে কারাবন্দী।

বাংলাদেশ সরকার আটক জেলেদের প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করার পরই ভারত সরকারও অনুরূপ অভিযোগে আটক বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।

গত ৯ ডিসেম্বর ওডিশার পারাদ্বীপের কাছে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করার অভিযোগে ৭৮ জন বাংলাদেশি জেলেকে ভারতীয় কোস্ট গার্ড আটক করে। এর আগে, বাংলার সুন্দরবন থেকে ১২ জন বাংলাদেশি জেলে আটক হয়। এই পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ১২ জন জেলে ইতিমধ্যেই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং বর্তমানে কাকদ্বীপের প্রশাসনের নিরাপদ হেফাজতে আছে। আমরা আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করব।’

ভারতীয় কোস্ট গার্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে একটি বিনিময় কর্মসূচি হবে—যেখানে ভারত ও বাংলাদেশের জেলেদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে এবং তাদের জব্দ করা ট্রলারও ফেরত দেওয়া হবে। সূত্র জানিয়েছে, তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি, তবে এটি খুব শিগগিরই হবে।

বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে গুরুতর ফৌজদারি মামলা দায়ের করে দীর্ঘ সময়ের জন্য কারারুদ্ধ করায়—পশ্চিমবঙ্গের জেলে সম্প্রদায় দাবি করেছে, ঢাকার নতুন সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি কঠোর। সামুদ্রিক সীমানা অতিক্রম করা দুই দেশের জেলেদের জন্য প্রায়শই রুটিন ব্যাপার।

মৎস্যজীবী সংগঠনগুলোর মতে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে উপকূল প্রশাসন ভারতীয় জেলেদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল এবং বিশেষ করে ইলিশ ধরার সময় যদি তারা ‘অজান্তে’ আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমানা অতিক্রম করত, তখন তাদের সাধারণত ফেরত পাঠানো হতো। বাংলাদেশের অনেক মাছ ধরার নৌকাও বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার জন্য নিয়মিত ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করত বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত