Ajker Patrika

দিল্লির বাঙালি বস্তিতে পানি-বিদ্যুৎ বন্ধ, বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ মমতার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, ১১: ৩৯
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

‘বাংলাভাষী মানেই বাংলাদেশি নয়’—বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলাভাষীদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে দমন-পীড়নের প্রতিবাদে এ মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার দিল্লির ‘জয় হিন্দ কলোনিতে’ বাংলাভাষী শ্রমিকদের ওপর পুলিশি অভিযান এবং তাঁদের বস্তিতে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া এ তথ্য জানিয়েছে।

মমতা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘নিজেদের দেশেই যদি বাংলাভাষীরা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত হন, তাহলে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে আমাদের অবস্থান কোথায়?’ তিনি আরও বলেন—বাসস্থান, পানি, বিদ্যুৎ মানুষের মৌলিক অধিকার। এসব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অর্থ মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা চুপ থাকব না।’

সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে দেড় কোটিরও বেশি অভিবাসী শ্রমিক আছেন এবং তাঁরা এখানে সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করছেন। কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোয় বাংলাভাষীদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলায় কথা বলা মানেই কেউ বাংলাদেশি—এই ধারণা বিভ্রান্তিকর এবং জাতিগত বৈষম্যমূলক। অন্য যেকোনো ভারতীয়র মতো বাংলাভাষীরাও এই দেশেরই নাগরিক।

মমতার অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের বঞ্চিত করতে ব্যর্থ হয়ে বিজেপি এখন পরিকল্পিতভাবে দেশজুড়ে ‘বাংলাবিরোধী’ এজেন্ডা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গুজরাট, মহারাষ্ট্র, ওডিশা এবং মধ্যপ্রদেশ থেকেও বাংলাভাষীদের হয়রানির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এবার সেই একই চিত্র দেখা গেল দেশের রাজধানীতেও।’

দিল্লির ‘জয় হিন্দ কলোনি’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই কলোনিতে মূলত বাংলা ভাষাভাষী অভিবাসী শ্রমিকেরা থাকেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির নির্মাণ ও পরিষেবা খাতে অবদান রাখছেন। অথচ বিজেপি শাসিত সরকারের নির্দেশে সেখানে হঠাৎ করেই পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বিদ্যুৎ মিটার তুলে নেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিজেদের টাকায় আনা পানির ট্যাংকও পুলিশ ও আরএএফ কর্মীরা আটকে দিয়েছেন। আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও জবরদস্তি উচ্ছেদ চলছে।’

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি স্তরে বিষয়টি তোলা হবে এবং বাংলার মানুষকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে অপমানের বিরুদ্ধে সব রকম প্রতিবাদ করবে।

প্রসঙ্গত, আগামী শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি হ্যাবিয়াস করপাস (বন্দীকে আদালতে উপস্থাপন) মামলার শুনানি নির্ধারিত রয়েছে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে—সরকার বীরভূম জেলার ছয়জন বাসিন্দাকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। তারা দিল্লিতে আবর্জনা সংগ্রাহক (র‍্যাগপিকার) হিসেবে কাজ করতেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ১৮ জুন দিল্লি পুলিশ ‘পরিচয় যাচাই’-এর অজুহাতে তাদের আটক করে এবং ২৬ জুন সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাদের বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করে। এ ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

হ্যাবিয়াস কর্পাস হলো সেই আইনি উপায়, যার মাধ্যমে যদি কাউকে বেআইনিভাবে আটক বা গুম করা হয়, তাহলে তাঁর পরিবারের সদস্য বা অন্য কেউ আদালতে আবেদন করতে পারেন, যাতে আটক ব্যক্তিকে আদালতে উপস্থাপন করে তাঁর আটক বা গ্রেপ্তারের বৈধতা যাচাই করা হয়।

মুখ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভাষা ও পরিচয়ের ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকদের বিভাজন ও হেনস্তা করার একটি ধারাবাহিক রাজনৈতিক কৌশল এটি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত