Ajker Patrika

ট্রাম্পের শুল্ক ও কংগ্রেসের ভোট কারচুপির অভিযোগে বিপর্যস্ত মোদি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২০: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর ১১ বছরের শাসনকালের অন্যতম কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চিরশত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে বিতর্কিত যুদ্ধবিরতি, বয়স নিয়ে নতুন করে সমালোচনা এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বহুল প্রচারিত সৌহার্দ্য থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক শীতলতা—সব মিলিয়ে তাঁর নেতৃত্বের জন্য বিরাট পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই চ্যালেঞ্জগুলোর পাশাপাশি মোদিকে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোট কারচুপির বিরোধী দল কংগ্রেসের অভিযোগেরও জবাব দিতে হচ্ছে। এসব কিছুই জটিল আকার ধারণ করেছে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য বিহারে কঠিন নির্বাচনী লড়াইয়ের ঠিক আগে।

আসন্ন বিহার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা একজন নেতার ভাবমূর্তিতে বড় ধরনের আঘাত হানবে।

এই সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। এর ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর সংকটে পড়েছে। অথচ মাত্র ছয় মাস আগেও ট্রাম্প ও মোদি পরস্পরকে আলিঙ্গন করে নিজেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করছিলেন।

নয়াদিল্লিভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরাতি জেরাথ বলছেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অনেকটাই ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত বোঝাপড়ার ওপর নির্ভর করছিল। তাই এখন যখন সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে, মোদির কাছে কোনো কূটনৈতিক ‘বাফার’ নেই। এমন এক শক্তিশালী নেতা হয়েও তিনি তাঁর প্রচারিত দৃঢ়তা ও সাহসিকতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন—এ নিয়ে হতাশা রয়েছে।

তবে মোদি পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, দেশের কৃষকদের পাশে থাকার জন্য যেকোনো মূল্য চুকাতে তিনি প্রস্তুত। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৃষি ও দুগ্ধ খাত উন্মুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা বা শুল্ক কমানোর প্রসঙ্গ আনেননি।

মোদি এক জনসভায় বলেন, ‘ভারত কখনোই তার কৃষক, পশুপালক ও জেলেদের স্বার্থে আপস করবে না। আমি ভালোভাবেই জানি, এর জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অনেক বড় মূল্য দিতে হতে পারে, তবে আমি প্রস্তুত।’

বিজেপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি গ্রাফিক চিত্র প্রকাশ করেছে। যেখানে মোদির পিঠে পাথর, ইট ও শুল্ক ছুরির আঘাত করছে। আর তিনি ঢাল হয়ে লাঙল কাঁধে হেঁটে চলা এক কৃষককে রক্ষা করছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন বিহারের নির্বাচনে প্রচারণার মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক দ্বন্দ্ব। সাম্প্রতিক এক জরিপে ভোটভাইব সংস্থা জানিয়েছে, কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে মোদির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে হিমশিম খাবে।

তবে ভোটভাইবের প্রতিষ্ঠাতা অমিতাভ তিওয়ারি মনে করেন, ট্রাম্পবিরোধী কোনো জাতীয়তাবাদী প্রচারণা ভোটারদের তেমন প্রভাবিত করবে না, কারণ, বিহারের নির্বাচন ‘অত্যন্ত স্থানীয় ইস্যু’-নির্ভর। বেকারত্ব ছাড়া কোনো সর্বজনীন ইস্যু এখানে নেই।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে মোদি আগামী সপ্তাহগুলোতে চীন সফরের পরিকল্পনা করছেন। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শুল্ক ইস্যু নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গেও মোদি টেলিফোনে কথা বলেছেন। ব্রিকসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এই দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। রাশিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকাও ব্রিকসের অন্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

মোদি এখনো বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সরকারপ্রধান। ডেটা ইন্টেলিজেন্স সংস্থা মর্নিং কনসাল্টের তথ্যমতে, তাঁর জনপ্রিয়তা ৭৫ শতাংশের বেশি। তবে এ বছর মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে আকস্মিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী সমর্থকগোষ্ঠী হতবাক হয়েছে।

এই যুদ্ধবিরতি দেশ-বিদেশে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি মোদি সরকার বারবার অস্বীকার করেছে। ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি বাণিজ্য আলোচনার প্রভাবে এই যুদ্ধবিরতি করাতে পেরেছেন। পরে ট্রাম্প পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছেন এবং পাকিস্তান প্রকাশ্যে তাঁকে সংঘাত শেষ করার কৃতিত্ব দিয়েছে। বিষয়টি ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও জটিল করেছে।

এদিকে দেশের ভেতরে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস দাবি করেছে, মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও নির্বাচন কমিশন ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ‘ভোটার তালিকায় ভুয়া নাম যুক্ত করে ভোট কারচুপি ও চুরি’ করেছে। তাদের হাতে এসবের প্রমাণ রয়েছে।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দলের মাধ্যমে এ দেশে একটি বিরাট অপরাধমূলক প্রতারণা চলছে।

বিজেপি এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, কংগ্রেসের বারবার নির্বাচনে পরাজয়ের হতাশা থেকে এমন দাবি করা হচ্ছে। বিজেপি এক্সে লিখেছে, রাহুল গান্ধী যখন প্রতারণা করে ক্ষমতায় যেতে পারেন না, তখনই তিনি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন।

নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীকে ‘অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ও ভারতীয় নাগরিকদের বিভ্রান্ত করা’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

আগামী মাসে ৭৫তম জন্মদিনের দিকে এগোতে থাকা মোদির বয়সও এখন আলোচনায় এসেছে, কারণ, অনেক বিজেপি নেতাকে এই বয়সসীমার পর পদচ্যুত করা হয়েছিল। তবে বিজেপি জানিয়েছে, দলের নেতাদের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক অবসরের বয়স নেই।

সব মিলিয়ে বিশ্লেষকদের মতে, মোদির সামনে এখন কঠিন দায়িত্ব। নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভিজিটিং ফেলো রশিদ কিদওয়াই বলেন, মোদির ব্র্যান্ড ভ্যালু খুব দ্রুত কমছে, তাঁকে নতুনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে। বিশেষ করে, যদি বিহার নির্বাচনে তিনি হেরে যান, তবে তাঁর জনপ্রিয়তার জৌলুশ ম্লান হয়ে যাবে। কারণ, ভারতে সবকিছুই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের তিন পদে অতিরিক্ত: তিনজনে একজন বাড়তি

ট্রেনের কেবিনের বালিশ, চাদর, কম্বলের ভাড়া দ্বিগুণ করার চিন্তা

ভারতে পোশাকের অর্ডার স্থগিত করছে মার্কিন ক্রেতারা, বাংলাদেশ-ভিয়েতনামে কারখানা স্থানান্তরের পরামর্শ

মোবাইল-টাকা ছিনতাইয়ের পর দুই তরুণীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩

ডোপ টেস্টে পজিটিভ, চবিতে শিক্ষকতা থেকে বাদ দুই প্রার্থী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত