Ajker Patrika

ভারত ভেঙে ফেলার ডাক, অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদের এক্স অ্যাকাউন্ট বন্ধ করল মোদি সরকার

কলকাতা প্রতিনিধি  
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৪
অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদ গুন্টার ফেলিঙ্গার। ছবি: এক্স
অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদ গুন্টার ফেলিঙ্গার। ছবি: এক্স

ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণাত্মক মন্তব্য করার অভিযোগে অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদ গুন্টার ফেলিঙ্গারের এক্স অ্যাকাউন্ট ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিতে একটি পোস্ট করেন, যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ বলে অভিযুক্ত করেন এবং খালিস্তানিদের স্বাধীনতার পক্ষে প্রকাশ্য আহ্বান জানান। তাঁর পোস্টে লেখা ছিল, ‘ভারতকে ভেঙে ফেলার ডাক দিচ্ছি। নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার কাছের মানুষ। খালিস্তানিদের স্বাধীনতার জন্য আমাদের বন্ধু প্রয়োজন।’

এ বক্তব্য ভারতের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নজরে আসতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দ্রুত এক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ও আইনি ভিত্তিতে তাঁর অ্যাকাউন্টটি ভারতে বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। ফলস্বরূপ, এখন ভারতে তাঁর এক্স প্রোফাইল খোলার চেষ্টা করলে একটি বার্তা দেখা যাচ্ছে—‘এই অ্যাকাউন্ট আইনি কারণে ভারতে বন্ধ রয়েছে।’

গুন্টার ফেলিঙ্গার অস্ট্রিয়ার সেই কমিটির সভাপতি, যেটি ইউক্রেন, কসোভো, বসনিয়া ও অস্ট্রিয়ার ন্যাটো সদস্যপদের জন্য লড়াই করছে। অর্থাৎ, তিনি ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় হলেও সরাসরি কোনো সরকারি দায়িত্বে নেই। এ কারণে নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে দিয়েছে, অস্ট্রিয়া সরকারের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানানো হবে না, কারণ, তাঁকে সরকারি পদমর্যাদার প্রতিনিধি হিসেবে দেখা হচ্ছে না। তবে তাঁর মন্তব্য ভারতের সামাজিক মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে এবং নীতিনির্ধারক মহলেও প্রশ্ন উঠেছে যে, বহির্বিশ্ব থেকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এমন হস্তক্ষেপমূলক বক্তব্যকে কীভাবে দেখা উচিত।

বিশেষ করে, খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদ নিয়ে ভারত অতিমাত্রায় সংবেদনশীল, কারণ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রবাসী খালিস্তানি সংগঠনগুলোর বিভিন্ন কার্যকলাপ দিল্লিকে একাধিকবার কূটনৈতিক চাপে ফেলেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিদেশি নাগরিকের প্রকাশ্য আহ্বানকে ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

অন্যদিকে সমালোচকদের মতে, সামাজিক মাধ্যমে মতপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণের এ ধারা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সরকারের নীতিকে স্পষ্ট করে। বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করে আসছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করা হচ্ছে। যদিও সরকারি সূত্রগুলো বলছে, বিদেশি নাগরিকের উসকানিমূলক প্রচারণাকে আটকানো কখনোই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছরের জুলাইয়ে অস্ট্রিয়া সফর করেছিলেন, যা চার দশকের মধ্যে প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিয়েনা সফর ছিল। সে সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।

এ ঘটনার কূটনৈতিক তাৎপর্যও কম নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারত এখন একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় শক্তির কাছে কৌশলগত অংশীদার, অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গেও ঐতিহাসিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ফেলিঙ্গারের বক্তব্যে মোদির রাশিয়া-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে যে সমালোচনা করা হয়েছে, তা ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত