Ajker Patrika

হাইকোর্ট আটকাল চার তৃণমূল নেতার জামিন, তীব্র হচ্ছে কেন্দ্র–রাজ্য দ্বন্দ্ব

প্রতিনিধি
হাইকোর্ট আটকাল চার তৃণমূল নেতার জামিন, তীব্র হচ্ছে কেন্দ্র–রাজ্য দ্বন্দ্ব

কলকাতা: ভারতে তীব্র হচ্ছে কেন্দ্র সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। সদ্য নির্বাচিত সরকারের দুই মন্ত্রীসহ চার নেতাকে জেলে ভরাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তৃণমূল–বিজেপি সংঘাত। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতার বদলে কেন্দ্র ও রাজ্যের দ্বন্দ্বে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই উত্তেজনার মধ্যেই সদ্য শপথ নেওয়া দুই মন্ত্রীর জামিন আটকে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে তাদের হাজতবাস দীর্ঘ হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যকার বিরোধ ফের প্রকাশ্যে এসেছে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হয়েও মমতা সরকারের সমালোচনায় মুখর। আর মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দাবি তুললেন রাজ্যপালের অপসারণের। এরই মধ্যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কটাক্ষ, ‘মোদি সিস্টেমে গ্রেপ্তার হওয়া যতো সহজ, ততো সহজে টিকা মিললে দেশের কোভিড পরিস্থিতি এতো ভয়ানক হতো না।’

২০১৬ সালের নারদ স্টিং অপারেশনে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গতকাল সোমবারই ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা (সিবিআই) গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি ও ফিরহাদ হাকিম, বিধায়ক ও সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোধ্যায়কে। চার হেভিওয়েট নেতার মধ্যে ফিরহাদ, সুব্রত ও শোভন কলকাতার মেয়রও ছিলেন। ফিরহাদের হাতে এখন আবাসন ও পরিবহনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ছাড়াও রয়েছে কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক দায়িত্বও।

শোভন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর ভোটের মুখে বিজেপিও ছাড়েন তিনি। এই নারদ কেলেঙ্কারিতে শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায় ও শঙ্খুদেব পান্ডার নামও আছে। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই।

তৃণমূলের অভিযোগ, শুভেন্দু-মুকুলরা বিজেপিতে যোগ দেওয়াতেই তাঁদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। শুভেন্দু ছাড় পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্টিং অপারেশনের মূল মাথা ম্যাথু স্যামুয়েল। তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দুও টাকা নিয়েছেন। সেই প্রমাণও আছে।

তৃণমূলের পাশাপাশি বাম–কংগ্রেসও বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তুলেছে।

গতকালই মমতা জানিয়েছিলেন, আইনি লড়াই চলবে। সেইমতো গতকাল নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান চার নেতা। কিন্তু এরপরই কলকাতা হাইকোর্ট সেই জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। আজ ফের হাইকোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হলেও হাইকোর্ট জানিয়েছেন, বুধবার শুনানি হবে এই মামলার। ফলে আজও জেলে থাকতে হবে চার জনকে। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে সুব্রত, শোভন ও মদন বর্তমানে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি।

সদ্য বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার এ ধরনের ‘আক্রমণাত্মক মনোভাব’-এর বিরোধিতা শুরু হয়েছে। আজ ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ধনখড়ের জন্মদিন। তাঁকে শুভেচ্ছার বদলে নেটদুনিয়ায় ভেসে আসছে কটাক্ষ। ভেড়ার পাল নিয়ে রাজভবন ঘেরাও কর্মসূচিও পালিত হয়। পরে অবশ্য কলকাতা পুলিশের সক্রিয়তায় রাজভবনের দরোজা থেকে হঠে যায় ভেড়ার পাল।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার রাজ্যপালকে হঠাতে সক্রিয় হয়েছেন। চিঠি দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে। বিধানসভায় বিলও আনতে পারেন তিনি। তৃণমূলের অভিযোগ, অগণতান্ত্রিকভাবে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের এখতিয়ারে নাক গলাচ্ছে। কংগ্রেস, সিপিএম ছাড়াও বিভিন্ন আঞ্চলিক দলও তৃণমূলের আইনি লড়াইকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে।

কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙভি এগিয়ে এসেছেন আইনিযুদ্ধে। তৃণমূলের সাংসদ ও আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, কোভিড পরিস্থিতিতে সংবিধান অমান্য করে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বিজেপি। ভোটে হারার পর পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বিপাকে ফেলতেই বিজেপি এই জঘন্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

কোভিড পরিস্থিতিতে কলকাতার পুরপ্রশাসক ফিরহাদ জেলে থাকায় শহরের মানুষ বিপাকে পড়েছেন বলেও মন্তব্য করেন কল্যাণ।

এদিন প্রেসিডেন্সি জেলে বসেও ফিরহাদ বলেছেন, ‘কলকাতার এই বিপদের দিনে মানুষের পাশে থাকতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে।’ তাঁর মেয়ে সাংবাদিকদের একথা জানান।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গে কোভিড পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। ভারতের অন্যান্য অংশের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও পশ্চিমবঙ্গে বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। গোটা দেশে এই সময়ে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৩২৯। অক্সিজেন ও টিকার জন্য চলছে হাহাকার।

কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় আজই বাংলাদেশ সরকার সাহায্য পাঠিয়েছে ভারতে। বেনাপোল সীমান্তে বাংলাদেশের পাঠানো চিকিৎসা সরঞ্জাম গ্রহণ করেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনার তৌফিক হাসান। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই বন্ধুদেশ ভারতকে এই চিকিৎসা সহায়তা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংসদ নির্বাচন: মনোনয়নের সংকেত পেয়ে প্রচারে বিএনপির প্রার্থীরা

নতুন যুগের ১০টি সম্ভাবনাময় পেশা

জাকির নায়েক বিতর্কে ভারতের প্রতিক্রিয়ার যে জবাব দিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

আজকের রাশিফল: প্রাক্তনের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটবেন না, মুরাদ টাকলার সঙ্গে দেখা হবে

মির্জা ফখরুলের কণ্ঠ নকল করে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগ বিএনপির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কেনিয়ায় ভারী বৃষ্টিপাতে ভূমিধস, ২১ জনের মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
৩০ জনেরও বেশি মানুষের এখনো সন্ধান মেলেনি বলে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। ছবি: কেনিয়া সরকার
৩০ জনেরও বেশি মানুষের এখনো সন্ধান মেলেনি বলে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। ছবি: কেনিয়া সরকার

কেনিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে ভারী বৃষ্টির পর ভূমিধসে অন্তত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দেশটির সরকার নিশ্চিত করেছে। গত শুক্রবার গভীর রাতে মারাকওয়েট ইস্ট এলাকায় এ ভূমিধসের ঘটনা ঘটে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিপচুমবা মুরকোমেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে জানান, নিহতদের মরদেহ কাছের একটি এয়ারস্ট্রিপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর গুরুতর আহত ২৫ জনকে চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে অন্যত্র পাঠানো হয়েছে।

নিখোঁজ হিসেবে পরিবারের পক্ষ থেকে রিপোর্ট করা ৩০ জনেরও বেশি মানুষের এখনো সন্ধান মেলেনি বলে জানান তিনি।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কেনিয়ার সরকার অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত করে। আজ রোববার পুনরায় অনুসন্ধান শুরুর কথা রয়েছে।

উদ্ধার তৎপরতার সমন্বয়কারী কেনিয়ান রেড ক্রস জানিয়েছে, কাদা ও আকস্মিক বন্যার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এখনো সড়কপথে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুরকোমেন জানান, ভুক্তভোগীদের জন্য খাদ্যসহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের প্রস্তুতি চলছে। সামরিক ও পুলিশ হেলিকপ্টারের মাধ্যমে এই ত্রাণসামগ্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কেনিয়ায় বর্তমানে বছরের দ্বিতীয় বর্ষা মৌসুম চলছে। বছরের শুরুতে দীর্ঘ ও ভারী বর্ষার তুলনায় এটি কিছু সপ্তাহের স্বল্পস্থায়ী বৃষ্টিপাতের সময়। রেড ক্রস জানিয়েছে, বুলামবুলি জেলায় নদীতীরবর্তী বেশিরভাগ গ্রামই ভয়াবহভাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্যদিকে টানা ভারি বৃষ্টিপাতে আসতিরি ও সিপি নদী উপচে পড়েছে। যার ফলে বাড়িঘর, ফসলের ক্ষেত ও স্থানীয় অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

শুক্রবার যেসব অঞ্চলে ভূমিধস হয়েছিল এবং নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বসবাসরত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার।

এদিকে, কেনিয়া সীমান্তের কাছে উগান্ডাতেও গত বুধবার থেকে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল শনিবার উগান্ডা রেড ক্রস জানায়, দেশটির পূর্বাঞ্চলের কাপসোমো গ্রামে ভূমিধসের ঘটনায় চারজন নিহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংসদ নির্বাচন: মনোনয়নের সংকেত পেয়ে প্রচারে বিএনপির প্রার্থীরা

নতুন যুগের ১০টি সম্ভাবনাময় পেশা

জাকির নায়েক বিতর্কে ভারতের প্রতিক্রিয়ার যে জবাব দিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

আজকের রাশিফল: প্রাক্তনের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটবেন না, মুরাদ টাকলার সঙ্গে দেখা হবে

মির্জা ফখরুলের কণ্ঠ নকল করে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগ বিএনপির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাশিয়ার ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে পাত্তাই পাচ্ছে না ইউক্রেনে মার্কিন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৬
রাশিয়ার ইস্কান্দার–এম ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার ইস্কান্দার–এম ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার ইস্কান্দার-এম ক্ষেপণাস্ত্রে নতুন নতুন কৌশল যোগ করা হয়েছে। ফলে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা এখন ভিতুর মতো হার মানছে। এমনকি দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও একে ধরতে পারছে না কার্যকরভাবে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সাফল্য মাত্র ৬ শতাংশ।

আমেরিকান কনজারভেটিভের সাংবাদিক অ্যান্ড্রু ডে কিয়েভ থেকে ফিরে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা এতটা অনিশ্চিত যে ‘প্রায় নেই বললে চলে’। তিনি বলেছেন, রাতের আঁধারে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের স্রোত এলে ন্যাটো প্রদত্ত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কখনো চালু হয়, কখনো হয় না। এই পর্যবেক্ষণ সামরিক প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলে যায়। সেপ্টেম্বরের পর থেকে ইউক্রেনের পশ্চিমা সরবরাহকৃত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা ৩৪ শতাংশ থেকে নেমেছে প্রায় ৬ শতাংশে কিংবা তারও নিচে।

বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রুশ ৯কে৭২০ ইস্কান্দার-এম এবং এই জাতীয় অন্যান্য ব্যবস্থাকে ঠেকাতে গিয়ে রীতিমতো কাঁপছে। এখানে অনেক কারিগরি ও কৌশলগত কারণ কাজ করছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন প্রায় এক বছর ধরে স্থবির। কিন্তু দুই পক্ষই দ্রুত কৌশল ও প্রযুক্তি বদলাচ্ছে। দুই পক্ষ একে অন্যের দুর্বলতা খুঁজে বের করে তা কাজে লাগাতে চায়। রাশিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন পর্যন্ত বেশি ফল দেওয়ায় তারা সুবিধা পাচ্ছে বেশি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রের ফ্লাইট বা উড্ডয়নরত অবস্থায় এর গতিপথ বদলে দিচ্ছে রাশিয়া। সরল ব্যালিস্টিক ট্রাজেক্টরি না রেখে এখন ‘কোয়াসি-ব্যালিস্টিক’ গতিপথে এগোয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো। মাঝপথে ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ধীর হয়ে যেতে পারে, দিক পরিবর্তন করতে পারে, খাড়া তীব্রভাবে নিচে নামতে পারে বা একদম শেষ পর্যায়ে এসে আচমকা ম্যানুভার করে টার্গেটের দিকে যেতে পারে।

প্যাট্রিয়ট সিস্টেম এবং অন্য পশ্চিমা সামরিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মূলত কোনো টার্গেটের সম্ভাব্য ফ্লাইট অনুমান করে সেটি লক করে আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়। কিন্তু কোনো লক্ষ্যবস্তু গতিপথ হঠাৎ পাল্টালে প্রতিরক্ষার সফটওয়্যার ও ইন্টারসেপ্টরগুলোর জন্য তা ধরার সময় এই সিস্টেমের থাকে না। ফলে ইস্কান্দারের মতো হাই-টেক ক্ষেপণাস্ত্র এমন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সফলভাবে লক্ষ্য ভেদ করতে ব্যর্থ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ইউনিট। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ইউনিট। ছবি: সংগৃহীত

কোনো কোনো প্রতিবেদন বলছে, রুশ প্রকৌশলীরা ইস্কান্দার-এম-এ এমন রাডার-ডিকয় ডিভাইস বসিয়েছেন, যা শেষ মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভুয়া রাডার সিগন্যাল ফেরত দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করে। এতে ভূমিতে থাকা আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার রাডার ও ট্র্যাকিং সফটওয়্যার বিভ্রান্ত হয়। ইন্টারসেপ্টর ভুয়া সংকেতের দিকে রকেট/ক্ষেপণাস্ত্র পাঠালে বিপক্ষের মূল ক্ষেপণাস্ত্র সহজে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।

আরও এক সমস্যা হলো, ইস্কান্দারের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে হঠাৎ নিচে দ্রুতগতিতে নামতে থাকার বা ম্যানুভার করার কৌশল। এই আচরণ প্যাট্রিয়ট ব্যাটারির রাডার আর সেন্সরগুলোর ফাঁকফোকরকে কাজে লাগায়। ফলে প্রথমবার শনাক্তকরণের পর থেকে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময়; অর্থাৎ টার্গেট ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে রকেট পাঠানোর সময় এত কম হয়ে পড়ে যে সফলভাবে আগত ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে।

প্রযুক্তিগত বিষয়ের বাইরে রয়েছে পরিমাণগত হিসাব। রাশিয়া ক্রমাগত ইস্কান্দার ও অনুরূপ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে চলেছে। অপর দিকে ইউক্রেন নির্ভরশীল পশ্চিমা, বিশেষত মার্কিন ও ইউরোপের ওপর, যাদের মজুত সীমিত। প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি ও ইন্টারসেপ্টর সীমিত পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে কিয়েভকে।

রাশিয়া এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণের কৌশল বুঝে নিয়েছে। তারা একবারে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়লে ইউক্রেনের সীমিত প্রতিরক্ষা বেশির ভাগই আটকাতে পারে না। অতিরিক্ত নতুন কোয়াজি-ব্যালিস্টিক পন্থা ও ডিকয় যোগ হলে সমস্যা আরও বাড়ে। ফলত ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে।

প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়ে তাত্ত্বিকভাবে এখনো কিছু ব্যালিস্টিক লক্ষ্যবস্তু ঠেকানো সম্ভব। কিন্তু রাশিয়ার কৌশল-উন্নয়ন প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে। ইউক্রেন ও তার মিত্রদের প্রয়োজন আরও ব্যাটারি, আরও ইন্টারসেপ্টর, ভালো রাডার কাভারেজ এবং প্যাট্রিয়ট সিস্টেমের সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার আপগ্রেড।

দুর্ভাগ্যবশত, এসব সহজে মিলছে না। পশ্চিমা প্রতিরক্ষা শিল্পশক্তি এখন এত দুর্বল ও ধীর যে প্রয়োজনীয় সরবরাহ দ্রুত করা যাচ্ছে না। অনেক বিশ্লেষক বলছে—মূল্য, সরবরাহ এবং শিল্পক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ইউক্রেনকে কেড়ে নিচ্ছে সময় ও সুযোগ। এই প্রেক্ষাপটে কিয়েভ আমেরিকান টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের টমাহক পেলে ইউক্রেন দূর থেকে রাশিয়ার ভেতরের টার্গেটে আঘাতের চেষ্টা করবে, যাতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ সম্ভব হয়।

তবে এই কৌশলও সমস্যা পুরোপুরি মিটিয়ে দেবে কি না, সন্দেহ আছে। রাশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রাকৃতিক সুবিধা এবং তাদের সামরিক প্রকৌশল ইউক্রেনের এবং পশ্চিমাদের সীমিত সম্পদকে দ্রুত নির্জীব করে দিচ্ছে। রাশিয়ার এই পরিবর্তনগুলো তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল। কিন্তু এগুলো প্রতিহত করতে ইউক্রেনকে বড় বিনিয়োগ, সময় ও সরবরাহ দরকার, যা মিটছে না।

ফলে সামগ্রিক ব্যাখ্যাটি পরিষ্কার—রাশিয়ার ইস্কান্দার-সংক্রান্ত নতুন উদ্ভাবন ও কৌশল ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যকারিতা তীব্রভাবে কমিয়ে দিচ্ছে। সংখ্যাগত অসাম্য, রাডার বিভ্রান্তি, কোয়াসি-ব্যালিস্টিক ম্যানুভার ও পশ্চিমা অস্ত্রশিল্পের সীমাবদ্ধতা—সব মিলিয়ে প্যাট্রিয়ট সিস্টেম এখন যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে নিঃশব্দ দর্শকের মতো।

সূত্র: দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংসদ নির্বাচন: মনোনয়নের সংকেত পেয়ে প্রচারে বিএনপির প্রার্থীরা

নতুন যুগের ১০টি সম্ভাবনাময় পেশা

জাকির নায়েক বিতর্কে ভারতের প্রতিক্রিয়ার যে জবাব দিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

আজকের রাশিফল: প্রাক্তনের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটবেন না, মুরাদ টাকলার সঙ্গে দেখা হবে

মির্জা ফখরুলের কণ্ঠ নকল করে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগ বিএনপির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদানে বিদ্রোহী আরএসএফকে চীনা ড্রোন–কামান দিচ্ছে আরব আমিরাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ০৪
দারফুর অঞ্চলের এল–ফাশেরে আরএসএফ বাহিনীর কিছু সদস্য। ছবি: এএফপি
দারফুর অঞ্চলের এল–ফাশেরে আরএসএফ বাহিনীর কিছু সদস্য। ছবি: এএফপি

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সম্প্রতি চীনা ড্রোনসহ নানা ধরনের অস্ত্র সুদানের বিদ্রোহী আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কাছে সরবরাহ বাড়িয়েছে। এমনটাই দাবি করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ ছাড়া, মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, আরব আমিরাত আরএসএফ–কে বোমা ও হাউইটজার পাঠাচ্ছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের গোয়েন্দা বিভাগ এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত এই অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধির তথ্য পেয়েছে। এই অস্ত্রগুলো সেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে যাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে দারফুরে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরবরাহকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে আরব আমিরাতের অর্থায়নে কেনা উন্নত মানের চীনা তৈরি ড্রোন, হালকা অস্ত্র, ভারী মেশিনগান, যানবাহন, কামান, মর্টার এবং গোলাবারুদ। আরএসএফের প্রতি আরব আমিরাতের সমর্থনের বিষয়টি আগেও বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এই তথ্যের অনেকটাই লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর আগের প্রতিবেদনগুলোর সঙ্গে মিলে গেছে।

মিডল ইস্ট আই ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জানিয়েছিল, আরব আমিরাত এক জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লিবিয়া, চাদ, উগান্ডা এবং সোমালিয়ার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল হয়ে আরএসএফের কাছে অস্ত্র পাঠাচ্ছে। এ ছাড়া, গত মে মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, আরব আমিরাত চীনের তৈরি জিবি–৫০এ গাইডেড বোমা এবং ১৫৫ মিলিমিটার এইচ-৪ হাউইটজার কামান দারফুরে পাঠাচ্ছে। ওই অঞ্চলে আরএসএফ সে সময় অনেকগুলো শহর অবরোধ করে রেখেছিল।

গত সপ্তাহে আরএসএফ উত্তর দারফুরের শহর এল-ফাশেরে হামলা চালায়। পরে তারা সেখানকার বেসামরিক মানুষদের হত্যার ভিডিও প্রকাশ করে। আরএসএফের এই অভিযানের খবর প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শুরু হওয়া শান্তি আলোচনার ভেঙে যাওয়ার পরপরই।

গত সপ্তাহে আরএসএফ উত্তর দারফুরের শহর এল-ফাশেরে হামলা চালায়। পরে তারা সেখানকার বেসামরিক মানুষদের হত্যার ভিডিও প্রকাশ করে। আরএসএফের এই অভিযানের খবর প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শুরু হওয়া শান্তি আলোচনার ভেঙে যাওয়ার পরপরই।

মিডল ইস্ট আইকে একটি সূত্র জানিয়েছে, আরএসএফের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইউএই এল-ফাশেরের অবরোধ নিয়ে কোনো অবস্থান নেয়নি। শহরটি ৫০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ। আলোচনা গত শুক্রবার ভেঙে পড়ে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চের পর আরব আমিরাতের অস্ত্র সহায়তা আরও বাড়ে। তখন ইরান, তুরস্ক ও মিসরের সমর্থনে সুদানি সেনাবাহিনী রাজধানী খার্তুমের পুরো নিয়ন্ত্রণ পুনরায় নেয়।

সংবাদমাধ্যমটি জানায় মে মাসে জানায়, আরএসএফ আরব আমিরাতের কাছ থেকে চীনা ড্রোন ব্যবহার করে সরকার-নিয়ন্ত্রিত বন্দরনগরী পোর্ট সুদানে হামলা চালায়। এতে তুর্কি সেনা বিশেষজ্ঞ দলের কয়েকজন আহত হন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্যানুসারে, এখন আরব আমিরাত আরএসএফকে চীনা সরকারি ঠিকাদার ‘চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি করপোরেশন’-এর তৈরি ‘রেইনবো সিরিজ’ ড্রোন সরবরাহ করছে। এর মধ্যে ‘সিএইচ-৯৫’ মডেলের ড্রোন ২৪ ঘণ্টা টানা উড়তে পারে এবং সুনির্দিষ্ট হামলা চালাতে সক্ষম। এটি দূরপাল্লার নজরদারি ও বিমান হামলার জন্য ব্যবহারযোগ্য।

খার্তুমে পরাজয়ের পর আরএসএফ আবার দারফুর অঞ্চলে আক্রমণ শুরু করে। এই অঞ্চলেই আরএসএফের উত্থান—তাদের পূর্বসূরি ছিল ঘোড়সওয়ার ‘জানজাওয়িদ’ মিলিশিয়া। এই বাহিনী ওমর আল বশিরের সরকারের পক্ষে অনারবদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।

আরএসএফ নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি ‘হেমেদতি’ নামে পরিচিত, আরব আমিরাতের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাঁর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের কেন্দ্র দুবাইয়ে। হেমেদতি ও তাঁর পরিবার দারফুরের স্বর্ণখনি থেকে উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ আরব আমিরাত হয়ে পাচার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংসদ নির্বাচন: মনোনয়নের সংকেত পেয়ে প্রচারে বিএনপির প্রার্থীরা

নতুন যুগের ১০টি সম্ভাবনাময় পেশা

জাকির নায়েক বিতর্কে ভারতের প্রতিক্রিয়ার যে জবাব দিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

আজকের রাশিফল: প্রাক্তনের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটবেন না, মুরাদ টাকলার সঙ্গে দেখা হবে

মির্জা ফখরুলের কণ্ঠ নকল করে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগ বিএনপির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশে আটক সোনালীকে নিয়ে এবার বেকায়দায় মোদি সরকার, ভোটার তালিকায় বাবা-মায়ের নাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ১৪
সোনালী খাতুন ও তাঁর স্বামী দানিশ। ছবি: সংগৃহীত
সোনালী খাতুন ও তাঁর স্বামী দানিশ। ছবি: সংগৃহীত

অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে অন্তঃসত্ত্বা সোনালী খাতুন এবং তাঁর পরিবারকে গত জুনে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করার ঘটনায় নতুন মোড়। সোনালীর বাবা-মা গতকাল শনিবার ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক প্রকাশিত ২০০২ সালের পশ্চিমবঙ্গ ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম খুঁজে পেয়েছেন। এই তথ্য সামনে আসার পর সোনালীর পরিবার প্রশ্ন তুলেছে—তাঁদের মেয়ে ও জামাইকে দেশে ফেরাতে আর কী প্রমাণ লাগবে?

বীরভূম জেলার পাইকর গ্রাম থেকে সোনালীর বাবা ভদু শেখ মোবাইল ফোনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘এখন আমাদের নাম তালিকায় পাওয়া গেছে। আমার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে এবং তার পরিবারকে ঘরে ফেরানোর জন্য আর কী লাগবে? কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, এমনকি বাংলাদেশের একটি আদালতও তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এখনো কিছুই হয়নি।’

সোনালীর মা জ্যোৎস্না বিবি মেয়ের স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওখানে জেলে আমার মেয়ের কী ধরনের যত্ন হচ্ছে, আমরা জানি না। ওকে ফিরে এসে ভারতেই সন্তান প্রসব করতে হবে। আমরা ওর জন্য খুবই চিন্তিত।’

সোনালীর প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী নিশ্চিত করেছেন, সোনালীর বাবা-মায়ের নাম বীরভূম জেলার মুরারাই বিধানসভা কেন্দ্রের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় পাওয়া গেছে। পাইকর গ্রামের পাইকর প্রাথমিক বিদ্যালয়কে তাঁদের ভোটকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

রঘুনাথ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সোনালী এবং তাঁর পরিবার এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি, এটা দুঃখজনক। অন্তঃসত্ত্বা সোনালীর বিষয়টিও উদ্বেগের কারণ।’ তিনি আরও দাবি করেন, এই নতুন তথ্য সোনালী খাতুন দম্পতির মামলাকে আরও শক্তিশালী করেছে। তাঁর মতে, সোনালীর সন্তান যদি বাংলাদেশেও জন্মগ্রহণ করে, তাহলেও সে ‘বংশগতভাবে’ ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে।

বর্তমানে সোনালী, তাঁর স্বামী দানিশ এবং আট বছরের ছেলে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে কারাগারে বন্দী আছেন। দিল্লি পুলিশ আটক করার পর গত ২৬ জুন তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। এই পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারটি প্রায় ২০ বছর ধরে দিল্লিতে আবর্জনা কুড়ানোর কাজ করত।

গত সেপ্টেম্বরে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, সোনালী এবং তাঁর পরিবারের পাশাপাশি সুইটি বিবি (৩২) ও তাঁর দুই ছেলে—যাদের একই অভিযোগে একই সময়ে আটক করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল—সবাইকে এক মাসের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনতে হবে। যদিও কেন্দ্র সরকার এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে।

এদিকে, সোনালীর বাবা-মা হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও তাঁদের মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে ‘ব্যর্থ হওয়ায়’ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একটি আদালত অবমাননার মামলাও করেছেন। সোনালীসহ ছয়জনকে ফিরিয়ে আনার জন্য হাইকোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ২৪ অক্টোবর শেষ হয়ে গেছে। এর আগে ৩ অক্টোবর বাংলাদেশের একটি আদালতও তাঁদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করে ভারতে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল।

এই ঘটনা সামনে আসতেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্র সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে। তৃণমূল দাবি করেছে, সোনালীর বাবা-মা ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত ভারতীয় নাগরিক। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে তৃণমূল কংগ্রেস এটিকে নির্বাচনী তালিকার বিশেষ সংশোধন (এসআইআর)-এর নামে ‘বাংলার এবং এর জনগণের ওপর আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছে।

তৃণমূল লিখেছে, ‘যে অন্তঃসত্ত্বা বাঙালি নারীর বাবা-মা ২০০২ সালের নির্বাচনী তালিকায় ভারতীয় নাগরিক হিসেবে নথিভুক্ত, তাঁকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী তকমা দিয়ে নির্বাসিত করা প্রশাসনিক ভুল নয়; এটি জাতীয়তাবাদের নামে একটি নৈতিক পতন।’

তৃণমূল সাংসদ এবং পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান সমীরুল ইসলাম বলেন, ‘এটি কেন্দ্রের মুখে আরও একটি চপেটাঘাত।...শুধু দরিদ্র বাংলাভাষী পরিযায়ী হওয়ার কারণে তাঁদের অবৈধ বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে দিল্লি থেকে আটক করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংসদ নির্বাচন: মনোনয়নের সংকেত পেয়ে প্রচারে বিএনপির প্রার্থীরা

নতুন যুগের ১০টি সম্ভাবনাময় পেশা

জাকির নায়েক বিতর্কে ভারতের প্রতিক্রিয়ার যে জবাব দিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

আজকের রাশিফল: প্রাক্তনের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটবেন না, মুরাদ টাকলার সঙ্গে দেখা হবে

মির্জা ফখরুলের কণ্ঠ নকল করে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগ বিএনপির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত