Ajker Patrika

লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালুর খবরে নড়েচড়ে বসেছে ভারত, ত্রিপুরায় পরিত্যক্ত বিমানবন্দর চালুর তোড়জোড়

অনলাইন ডেস্ক
কৈলাশহর বিমানবন্দরের বর্তমান পরিস্থিতি। ছবি: সংগৃহীত
কৈলাশহর বিমানবন্দরের বর্তমান পরিস্থিতি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ কয়েক দশকের পুরোনো লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু করছে এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এই খবর চাউর হওয়ার পর নিকট প্রতিবেশী ভারত নড়েচড়ে বসেছে। দেশটির কর্তাব্যক্তিরা হঠাৎ করেই বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত ত্রিপুরা রাজ্যের ৩ দশক পুরোনো পরিত্যক্ত কৈলাশহরে বিমানবন্দর চালু করার তোড়জোড় শুরু করেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, নয়া দিল্লির উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা বেশ উদ্বেগেই পড়েছেন। এই উদ্বেগের কারণ হলো লালমনিরহাট ভারতের কৌশলগত দুর্বল অবস্থান শিলিগুড়ি করিডর থেকে ২০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত। ২২ কিলোমিটার চওড়া শিলিগুড়ি করিডর ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে।

‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত এই করিডরের পশ্চিমে নেপাল এবং উত্তরে ভুটান অবস্থিত। এই দুটি দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্থিতিশীল। ভারতীয় বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দক্ষিণ সীমান্ত অর্থাৎ, বাংলাদেশ থেকে কিছু ‘অশনিসংকেত’ আসছে। ভারত মনে করছে, চীন লালমনিরহাট বিমানবন্দর সংস্কারে অর্থায়ন করতে পারে।

এই বিমানবন্দরটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অধীনেই ছিল এবং রয়েছে। বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছে আর্মি অ্যাভিয়েশন ইউনিট। আগামী জুলাইয়ে বিমানবন্দরটির রানওয়ে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও প্রশিক্ষণভিত্তিক বিমান উড্ডয়নের কাজে ব্যবহার হবে।

ভবিষ্যতে এই বিমানবন্দর চীন ব্যবহার করতে পারে—এমন আশঙ্কা বা গুজবের বিষয়ে জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘দেশের সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে, এটাই স্বাভাবিক। লালমনিরহাট একটি পুরোনো বিমানবন্দর, যা দীর্ঘদিন অকার্যকর ছিল। এখন প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় এটিকে সচল করার চেষ্টা চলছে।’

চীনের সম্ভাব্য ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চীন ব্যবহার করবে কি না বা কবে করবে—এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে এটুকু নিশ্চিত করতে পারি, দেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ডে কোনো দেশকে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে সরকার অবশ্যই সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। আমি মনে করি না, সরকার কোনো কিছু না ভেবে কোনো পদক্ষেপ নেবে।’

এনডিটিভির খবরে আরও বলা হয়েছে, এই তথাকথিত উদ্বেগগুলো ভারতকে উত্তর ত্রিপুরার কৈলাশহর অঞ্চলে তিন দশকের পুরোনো একটি বেসামরিক বিমানবন্দর সংস্কারের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে উৎসাহিত করেছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই বিমানবন্দর সম্ভবত বেসামরিক কাজেই ব্যবহার করা হবে। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য বড় বিমানবন্দরের মতোই যুদ্ধ বা জরুরি অবস্থার সময় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য উড়োজাহাজের উড্ডয়ন, অবতরণ এবং জ্বালানি ভরার জন্য এর অবকাঠামোকে উন্নত করা হবে।

ত্রিপুরার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ত্রিপুরা টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ৩২ বছরের বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত থাকার পর ত্রিপুরার উনকোটি জেলার কৈলাশহর বিমানবন্দর ফের চালু করার প্রক্রিয়া গতি পেয়েছে। গতকাল সোমবার এয়ারপোর্টস অথোরিটি অব ইন্ডিয়ার (এইআই) একটি উচ্চ পর্যায়ের দল বিমানবন্দর ও এর আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করেছে।

দলটি বর্তমান পরিকাঠামো, দৃশ্যমানতার অবস্থা এবং ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রাথমিক মূল্যায়ন করেছে। বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক উভয় গোষ্ঠীই বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছিল।

এইআই দলের পরিদর্শনের পর বিমানবন্দরটি পুনরায় খোলার প্রক্রিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত হয়েছে। এতে অবিভক্ত উত্তর ত্রিপুরা জেলা এবং আসামের কাছাড় জেলার বাসিন্দারা আশাবাদী যে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি অবশেষে পূরণ হবে।

ভারতীয় বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, তবে কৈলাশহর বিমানবন্দরকে আবারও সচল করে তোলা শুধু বাংলাদেশের লালমনিরহাট পদক্ষেপের জবাব নয়, বরং ২০২৪ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যখন সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন এটি একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ স্মারকও হবে। পাশাপাশি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ত্রিপুরার আকাশ যোগাযোগও আরও উন্নত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ভিসায় ছয় দেশ

এর জবাব দেশে দিইনি, জাপানে দিলে বিপদ হবে: পদত্যাগ প্রশ্নে ড. ইউনূস

চারটি গুলির পর নিরস্ত্র মেজর সিনহার গলায় পাড়া দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়: অ্যাটর্নি জেনারেল

‘বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলেও পাকিস্তানের কোনো লাভ হবে না’

বাজে হারের পরও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত