Ajker Patrika

যাত্রীকে নিজের কিডনি দিয়ে বাঁচালেন ডেলটা এয়ারলাইনসের এক কর্মী

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, ০০: ০৬
ব্রুস গ্যাম্বল ও জিল হিকি। ছবি: সিএনএন
ব্রুস গ্যাম্বল ও জিল হিকি। ছবি: সিএনএন

১৯৮০-এর দশকের শেষ দিক থেকে নিয়মিত উড়োজাহাজে যাতায়াত করতেন ব্রুস গ্যাম্বল। গাড়ি বিক্রির একজন পরামর্শদাতা হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্যই আলাবামার বার্মিংহাম থেকে এই যাত্রা শুরু হয়েছিল তাঁর। সুদীর্ঘ এই ভ্রমণ-জীবনে তাঁর পরিচয় গড়ে ওঠে বার্মিংহাম-শাটলসওয়ার্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডেলটা এয়ারলাইনসের কর্মীদের সঙ্গে।

এই কর্মীদেরই একজন ৫৭ বছর বয়সী জিল হিকি। তিনি ছিলেন মূলত একজন খণ্ডকালীন কাস্টমার সার্ভিস এজেন্ট। চার বছর ধরে এই কাজ করছেন। প্রায় প্রতিবারই বিমানবন্দরে নেমে হিকির কাউন্টারে গিয়ে এক বোতল পানি নিতেন ব্রুস। হিকি বলেন, ‘আমি জানতাম, ব্রুসের কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। কিন্তু জানতাম না সেটা কতটা গুরুতর।’

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে জানা গেল—৭১ বছর বয়সী ব্রুসের কিডনি প্রতিস্থাপন না হলে তিনি আর বাঁচবেন না। ২০০২ সাল থেকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্রুসের কিডনি ফাংশন দ্রুত খারাপ হচ্ছিল। কোনো মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে কিডনি পেতে তাঁর ব্লাড গ্রুপ অনুযায়ী অপেক্ষার তালিকায় থাকলে সময় লাগত ৩ থেকে ৫ বছর। বয়স বিবেচনায় তত দিনে হয়তো আর অস্ত্রোপচারের জন্যই উপযুক্ত থাকবেন না ব্রুস।

এ অবস্থায় বন্ধু, সহকর্মী, এমনকি বিমানবন্দরের কর্মীদের সঙ্গেও দেখা হলে কুশলাদি বিনিময়ের সময় ব্রুস বলতেন, ‘ভালো আছি, শুধু একটা কিডনি খুঁজছি।’

এমনই এক সন্ধ্যায় ডেলটা কর্মীরা আলোচনা করছিলেন কীভাবে ব্রুসকে সাহায্য করা যায়। হিকি সে কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, ব্রুসকে কিডনি দেওয়ার জন্য তিনি উপযুক্ত কি না টেস্ট করাবেন। তাঁর এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে প্রথমে তাঁর পরিবার, বিশেষ করে দুই মেয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু হিকি জানতেন, তিনি সুস্থ এবং সক্ষম হলে কিডনি দান করবেনই।

এয়ারলাইনসে চাকরির পাশাপাশি বছরের পর বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন হিকি। পড়াতে গিয়ে তাঁর এমন শিশুদের সঙ্গেও দেখা হয়েছে, যারা কিডনির জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই স্মৃতিই তাঁকে একটি কিডনি দান করার জন্য সাহসী করে তোলে।

তত দিনে ব্রুসকে কিডনি দিতে ইচ্ছুক এমন অন্তত ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক কিডনি ম্যাচ করে কি না টেস্ট করিয়েছিলেন। কিন্তু কারও সঙ্গেই মিল হয়নি। হিকি ছিলেন ১১তম এবং একমাত্র, যার সঙ্গে ব্রুসের কিডনি পুরোপুরি মিলে যায়।

ব্রুস বলেন, ‘জিল যখন ফোন করে বললেন তিনি পুরোপুরি ম্যাচ, আমি বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ঈশ্বর আমার জন্য জিলকে পাঠিয়েছেন। তিনি আমার জীবন বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

অস্ত্রোপচারের দিন হিকির এক বন্ধু তাঁকে একটি প্রার্থনার বই দেন। বইটির ওই দিনের প্রার্থনা পাতায় লেখা ছিল, ‘আজকের দিনটা আমি তোমাকে ধাপে ধাপে পথ দেখাব। যদি তোমার মন আমার ওপর থাকে, তবে বিপজ্জনক পথেও তুমি ভয় না পেয়ে হাঁটতে পারবে।’ হিকি বলেন, ‘সেই কথাগুলো যেন সব বিশ্বাস আরও জোরালো করে দিল।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বার্মিংহামে সফল অস্ত্রোপচার হয়। কিছু জটিলতা থাকলেও সবকিছু ভালোভাবেই শেষ হয়। এরপর ব্রুস ও হিকি তাঁদের জীবনসঙ্গীদের সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ায়ও ঘুরতে গিয়েছিলেন।

সিএনএন জানিয়েছে, তাঁরা এখন আগের মতোই জীবন যাপন করছেন। ব্রুস আধা-অবসরে আর হিকি শিশুদের পড়ান এবং সন্ধ্যায় ডেলটায় কাজ করেন।

তবে একটি বিষয় আর কখনো আগের মতো হবে না। কী সেটা? হিকি বলেন, ‘আমরা একসময় ছিলাম সম্পূর্ণ অপরিচিত। কিন্তু এখন আমরা যেন একে অপরের পরিবার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত