Ajker Patrika

খোঁড়া হচ্ছে গণকবর, ৭৯৬ শিশুর মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটনের আশায় পুরো আইরিশ জাতি

অনলাইন ডেস্ক
ইতিহাস অনুসন্ধানী ক্যাথরিন করলেসের অনুপ্রেরণায় এই খননকাজ শুরু হচ্ছে। ছবি: সানডে টাইমস
ইতিহাস অনুসন্ধানী ক্যাথরিন করলেসের অনুপ্রেরণায় এই খননকাজ শুরু হচ্ছে। ছবি: সানডে টাইমস

১৫ জুলাই আয়ারল্যান্ডের তুয়াম শহরের সাবেক ‘মাদার অ্যান্ড বেবি হোম’-এর প্রাঙ্গণে খনন কাজ শুরু হচ্ছে। বহু বছর আগে অন্তত ৭৯৬টি শিশুর গণকবরের রহস্য উদ্ঘাটনের আশায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক সময়ের কৃষক ও বর্তমানে ইতিহাস অনুসন্ধানী ক্যাথরিন করলেসের অনুপ্রেরণায় এই খননকাজ শুরু হচ্ছে।

রোববার (১৩ জুলাই) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সানডে টাইমস জানিয়েছে, ২০১২ সালে স্থানীয় ইতিহাসচর্চার অংশ হিসেবে করলেস দাবি করেছিলেন, তুয়ামে ১৯২৫ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত পরিচালিত সেই ক্যাথলিক হোমে মারা যাওয়া ৭৯৬ শিশুর কোনো কবরের রেকর্ড নেই। তিনি ধারণা করেন, ১৯৭৫ সালে ওই হোমের পুরোনো যে সেপটিক ট্যাংকে দুই শিশুর দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল, হয়তো সেখানে বাকিদের দেহাবশেষও রয়েছে।

এই গবেষণা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোড়ন তোলে। সরকার স্বীকার করে, এমন ৯ হাজার শিশুর মৃত্যু ঘটেছে আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন মাদার অ্যান্ড বেবি হোমে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবিবাহিত মা ও তাঁদের সন্তানদের রাখা হতো। কিন্তু ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাদের ওপর নানা ধরনের নিপীড়ন চালানো হতো।

তুয়ামের ওই হোমটি পরিচালনা করত ‘বন সিকোর্স সিস্টার্স’ নামে একটি ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠান। তারা গর্ভবতী মায়েদের সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য করত, পরে সন্তানদের রেখে মায়েদের বিদায় করে দিত। অনেক মা-ই পরবর্তীতে তাঁদের সন্তানকে আর কখনোই দেখতে পাননি।

বর্তমানে ৭৩ বছর বয়সী পি জে হ্যাভার্টি নামে এক ব্যক্তিও এক অসহায় মায়ের সন্তান ছিলেন। হ্যাভার্টি জানান, তিনি ওই হোমেই জন্মান এবং সাত বছর বয়স পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ছিলাম বন্দীর মতো। অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে দেওয়া হতো না। সমাজ আমাদের বলত বেজন্মা, রোগবাহী।’

হ্যাভার্টির মা আইলিন গর্ভধারণের পর গির্জায় সাহায্য চাইতে গিয়ে নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিলেন। পরে ওই হোমে সন্তান রেখে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।

বহু বছর আগের ওই অবস্থাটি নিয়ে ২০২১ সালে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন আয়ারল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন। তিনি বলেন, ‘ওই নারীরা এমন কোনো অপরাধ করেননি, যার জন্য তাদের এমন অবমাননার শিকার হতে হয়েছে। তাদের সেখানে যাওয়ার কথাই ছিল না।’

এর আগে ২০১৭ সালে বহু বছর আগে আবিষ্কৃত দুই শিশুর হাড়ের বিশ্লেষণে দেখা যায়—সেগুলো ১৯২৫ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যকারই। কিন্তু আইনি অনুমোদন ও বাজেট সংকটের কারণে খননকাজ বারবার পিছিয়ে যায়। পরে ২০২২ সালে একটি আইন পাসের মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালে একটি স্বাধীন দপ্তর খনন কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পায়।

অবশেষে শুরু হতে যাওয়া খননের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড্যানিয়েল ম্যাকসুইনি। তিনি বলছেন, ‘এটি শুধু খনন নয়। এটা বহু বছরের অপেক্ষার প্রতীক। আমরা জানি না ঠিক কী পাব। কিন্তু খুঁজে পাওয়াই লক্ষ্য।’

আনা করিগান নামে এক নারী জানিয়েছেন, তিনি তাঁর দুই সৎ ভাইয়ের মৃত্যুর নিশ্চিত কোনো তথ্য পাননি। একজনের নাম রেকর্ডে থাকলেও আরেকজনের মৃত্যুসনদও নেই। তিনি বলেন, ‘তারা যদি সত্যিই ওই গণকবরে থাকে, তাহলে মায়ের কবরফলকে লিখে দিতে পারব—তাঁর দুই সন্তান আগেই মারা গিয়েছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

পারটেক্স এমডি রুবেল আজিজের ১১৬ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

জরুরি অবস্থা ঘোষণায় লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন, প্রস্তাবে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত