Ajker Patrika

তুরস্কের নির্বাচন: ব্যবধান কমছে, দ্বিতীয় দফায় কিংমেকার হতে যাচ্ছেন ওগান

অনলাইন ডেস্ক
তুরস্কের নির্বাচন: ব্যবধান কমছে, দ্বিতীয় দফায় কিংমেকার হতে যাচ্ছেন ওগান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বেসরকারি ফলাফলে ক্ষমতাসীন ও প্রধান বিরোধী জোটের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ক্রমেই কমে আসছে। প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়াবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সেটি হলে এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন এটিএ জোটের সিনান ওগান।

আধুনিক তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই ভোটেই নির্ধারিত হবে টানা ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ভবিষ্যৎ।

২০১৬ সালে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর এরদোয়ান প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা অনেকখানি বাড়িয়ে নিয়েছেন। ২০১৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে তুরস্কের সরকার সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্ট শাসিত ব্যবস্থায় পরিবর্তিত হয়।

এবারের নির্বাচনে এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কুলুচদারুলু নির্বাচিত হলে প্রেসিডেন্টের 'অতিরিক্ত' ক্ষমতার বিধান বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

তুরস্কের ইলেকশন বোর্ডের প্রধান আহমেদ ইয়েনের জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরের ৭১ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং বিদেশ থেকে দেওয়া ভোটের ১৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ সিস্টেমে এন্ট্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে মোট প্রদত্ত ভোটের ৬৯ দশমিক ১২ শতাংশ ভোট এখন সিস্টেমে। প্রেসিডেন্ট এবং সংসদ নির্বাচনে ডেটা এন্ট্রিতে কোনো দেরি হচ্ছে না বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদুলুতে প্রকাশিত বেসরকারি ফলাফলে দেখানো হচ্ছে, এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং প্রধান বিরোধী জোটের নেতা কুলুচদারুলু পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ ভোট। 

নির্বাচনে জিততে হলে একজন প্রার্থীকে মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত ৫০ শতাংশ পেতে হবে। তা না হলে দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় দফা ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

তুরস্কের স্থানীয় সময় রোববার (১৪ মে) সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তবে অনেক আগে থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলোর সামনে ভোটারেরা লাইনে দাঁড়িয়ে যান। বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন।

স্থানীয় সময় রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়। যদিও জার্মানি,ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশে থাকেন যে প্রায় ১৭ লাখ প্রবাসী তুর্কি ভোটার, তাঁরা আগেই ভোট দিয়ে ফেলেছেন। প্রবাসীদের ভোট দানের হার ৫৩ শতাংশ।

নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দেওয়ার যোগ্য ৫০ লাখ তরুণ, তাঁরাই এবারের নির্বাচনের ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তুরস্কের নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নিয়ম অনুযায়ী কোনো দলকে পার্লামেন্টে আসন পেতে হলে অন্তত ৭ শতাংশ ভোট পেতে হয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলো আসন পাওয়া নিশ্চিত করতে নির্বাচনী জোট বাঁধে।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের একে পার্টির সঙ্গে ইসলামপন্থীরা পিপলস অ্যালায়েন্স জোট বেঁধেছে। এই জোটে আছে কট্টর জাতীয়তাবাদী এমএইচপি এবং অন্য দুটি দল। অন্যদিকে কুলুচদারুলুর মধ্য বামপন্থী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি জোট বেঁধেছে ন্যাশনালিস্ট গুড পার্টি এবং অন্য চারটি ছোট দলের সঙ্গে।

কুর্দীপন্থী দল এইচডিপি হচ্ছে তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল,তারা আরেকটি জোটের অংশ। তারা প্রচারণা চালাচ্ছে গ্রিন লেফট জোটের ব্যানারে।

চার প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর একজন মুহাররিম ইন্স ভোটের তিন দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে দেরিতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় তাঁর নাম ব্যালট পেপারে থেকে যাচ্ছে।

শনিবার ভোটের প্রচারের একেবারে শেষ সময়ে কুলুচদারুলু আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেন ইস্তাম্বুলের হাগিয়া সোফিয়া মসজিদে সন্ধ্যায় নামাজে যোগ দিয়ে। মসজিদে নামাজ পড়তে আসা লোকজনের কাছে ভোটও চান তিনি।

এবারের ভোটে চমক দেখাচ্ছেন এটিএ অ্যালায়েন্সের নেতা সিনান ওগান।  প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো যেই অনুপাতে ভোট পাচ্ছে ভোট গণনা এভাবে চলতে থাকলে তুরস্কের নির্বাচন এবার দ্বিতীয় দফাতেই গড়াবে। 

আল জাজিরার প্রতিনিধি একে পার্টির প্রধান কার্যালয় থেকে জানিয়েছেন, এবার ভোট অন্তত ২০১৮ সালের মতো হচ্ছে না। একে পার্টির কর্মী সমর্থকদের চোখে মুখে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। এবার নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমক হতে যাচ্ছেন সিনান ওগান। এখন পর্যন্ত তিনি ৫ শতাংশের ওপরে ভোট পেয়েছেন এবং অবস্থান ধরে রেখেছেন। মোটামুটি নিশ্চিত যে, ২৮ মে দ্বিতীয় দফাতেই এরদোয়ান ও কুলুচদারুলুর ভাগ্য নির্ধারিত হবে। 

এখন দেখা যাচ্ছে, এরদোয়ানের ভোটের অনুপাত কমছে, কিন্তু কুলুচদারুলুর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। অপরদিকে ওগানের অবস্থান স্থিতিশীল। নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ালে ওগানই হতে পারেন কিং মেকার!

এটিএ অ্যালায়েন্স থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সিনান ওগান (৫৫) সাবেক শিক্ষাবিদ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক উন্নয়নে কাজ করেছেন। এরদোয়ানের একে পার্টির মিত্র ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টিতেই (এমএইচপি) ছিলেন তিনি। দলে ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে অভ্যন্তরীণ বিরোধে ২০১৫ তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তুর্কি জাতীয়তাবাদী হিসেবে এবারের নির্বাচনে নিজেকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন।

দ্বিতীয় দফায় কোন জোটে যাবেন সে ব্যাপারে অবশ্য এখনো স্পষ্ট করেননি ওগান। আল জাজিরাকে তিনি বলেছেন, ভোট দ্বিতীয় দফায় গড়ালে জোট পছন্দের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তুরস্কে এমন এক সময়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন দেশটির মানুষকে কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া, সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতির হার ৪৪ শতাংশ।  অন্যদিকে ১১ টি প্রদেশ সম্প্রতি দুই দফা ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এই ভূমিকম্পে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।

রোববারের ভোটে তুরস্কের মানুষ ৬০০ এমপি নির্বাচনের জন্যও ভোট দিয়েছেন। যদিও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান পার্লামেন্টের ক্ষমতা খর্ব করে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছেন, এরপরও নতুন আইন প্রণয়নে পার্লামেন্ট এখনো মুখ্য ভূমিকা রাখে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত