Ajker Patrika

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা থেকে সম্পদ বাঁচাতে দুবাইয়ের ক্রিপ্টো ফার্মে রুশদের ভিড়

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২২, ১২: ৩১
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা থেকে সম্পদ বাঁচাতে দুবাইয়ের ক্রিপ্টো ফার্মে রুশদের ভিড়

পশ্চিমজুড়ে অবরোধের মুখে রুশ অলিগার্কেরা। বিপুল সম্পত্তি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। এই সুযোগ লুফে নিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ক্রিপ্টো কারেন্সি সংস্থাগুলো। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ভার্চুয়াল কারেন্সি লিক্যুইডেশনের প্রস্তাব পাচ্ছে তারা। পশ্চিমা অবরোধের মুখে এই ভার্চুয়াল কারেন্সিকেই শেষ আশ্রয় হিসেবে নিচ্ছেন রুশরা। 

ইউএইর ভার্চুয়াল কারেন্সি কোম্পানিগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে এমন তথ্য দিয়েছে আল জাজিরা। 

সূত্র জানিয়েছে, কিছু ক্লায়েন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতের রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করছে। অন্যরা ভার্চুয়াল সম্পত্তিকে হার্ড কারেন্সিতে পরিণত করতে এবং গোপনে স্থানান্তরের জন্য ভার্চুয়াল কারেন্সি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করছে। 

একটি ক্রিপ্টো ফার্ম গত ১০ দিনে সুইস ব্রোকারদের (মধ্যস্থতাকারী) কাছ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ বিটকয়েনে রূপান্তরের জন্য অসংখ্য অনুরোধ পেয়েছে। কারণ ক্লায়েন্টদের ভয়, সুইজারল্যান্ড তাঁদের সম্পদ জব্দ করতে পারে। একজন নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, অনুরোধগুলোর একটিও ২ বিলিয়ন ডলারের কম নয়। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহে আমরা পাঁচ থেকে ছয়টি অনুরোধ পেয়েছি। অবশ্য তাঁদের কাউকেই সুযোগ দেওয়া যায়নি। কারণ তাঁরা শেষ সারিতে পড়ে গেছেন, এটা বিরল নয়—তবে আমাদের এত আগ্রহ কখনই ছিল না।’ সাধারণত বড় লেনদেনের জন্য এই কোম্পানি প্রতি মাসে একবার নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে যায় বলেও উল্লেখ করেন ওই নির্বাহী। 

ব্রোকারদের মাধ্যমে অনুরোধ আসার কথা নিশ্চিত করে ওই নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে একটা লোক যোগাযোগ করেছেন—আমি জানি না তিনি কে, কিন্তু তিনি একজন দালালের মাধ্যমে এসেছেন—তাঁরা এভাবে বলেন, “আমরা ১ লাখ ২৫ হাজার বিটকয়েন বিক্রি করতে চাই”। আমি তো হতভম্ব হয়ে যাই। তাঁকে বলি, কী বললেন? এটা কিন্তু ৬ বিলিয়ন ডলারের সমান! তাঁরা নির্বিকারভাবে বলেন, “হ্যাঁ, আমরা এটি অস্ট্রেলিয়ার একটি কোম্পানিতে পাঠাতে চাচ্ছি”। 

সুইজারল্যান্ডের আর্থিক বাজারের পর্যবেক্ষকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কী পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন হচ্ছে। তাঁরা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

দেশটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সচিবালয় (এসইসিও) ই-মেইলে পাঠানো বিবৃতিতে বলেছে, ক্রিপ্টো কারেন্সিতে রাখা সম্পদও একই নিষেধাজ্ঞা এবং ব্যবস্থার আওতায় পড়ে। সুইজারল্যান্ড রুশদের সাধারণ সম্পদ এবং ব্যক্তির ওপরও সেসব ব্যবস্থা আরোপ করেছে। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েন তাঁর ক্রিপ্টো সম্পদও অবশ্যই জব্দ করা হবে। 

উপসাগরীয় অঞ্চলের আর্থিক ও ব্যবসায়িক কেন্দ্র দুবাই এখন একটি উদীয়মান ক্রিপ্টো হাবে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের অতিধনীদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে দুবাই। চলমান ইউক্রেন সংকটে পশ্চিমা মিত্রদের পক্ষ নেওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মস্কোর সম্পদ যে এখানে নিরাপদ এটা তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত। 

দুবাইয়ের একজন রিয়েল এস্টেট ব্রোকার সক্রিয়ভাবে রুশদের সঙ্গে লেনদেনে যুক্ত। তাঁর কোম্পানি সম্পত্তি কিনতে সাহায্য করার জন্য একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি পরিষেবার সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করে। ওই ব্রোকার বলেন, ‘আমরা অনেক রুশ এবং এমনকি বেলারুশিয়ানদের দুবাইতে আসতে দেখছি। যা কিছু আনা সম্ভব তাঁরা এখানে আনছেন। এমনকি ক্রিপ্টোতেও অনেক সম্পদ তাঁরা এখানে স্থানান্তর করছেন।’ 

পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রুশ অলিগার্কেরা ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বড় হাতিয়ার করতে পারেন। আর এটিকেই বৈদেশিক সম্পদ প্রবাহের সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করতে পারে অনেক দেশ। রাশিয়ার মিত্র দেশগুলোতেই এর অবারিত সুযোগ রয়েছে তা বলাবাহুল্য। 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করেছে যে রুশরা দুবাইতে সম্পত্তি কিনছে। অন্যান্য ঝুঁকি ও বিধিনিষেধ এড়াতে তারা ক্রিপ্টো ব্যবহার করে উপসাগরীয় দেশটিতে সম্পত্তি স্থানান্তরের জন্য মরিয়া চেষ্টা করছে। 

ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের প্ল্যাটফর্মগুলো বলছে, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া রুশদের অ্যাকাউন্ট ব্লক করছে। অবশ্য তারা বিস্তারিত তথ্য দিতে রাজি হচ্ছে না। 

কয়েনবেস গ্লোবাল ইনকর্পোরেটেড এবং বিন্যান্সের মতো বৃহৎ এক্সচেঞ্জগুলো বলছে, রুশরা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ক্রিপ্টোকে যেন ব্যবহার না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। 

কিন্তু ক্রিপ্টো কারেন্সি প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীদের পরিচয় গোপন রাখার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। ইউরোপীয় দেশ যেমন: জার্মানি এবং এস্তোনিয়া নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পথে ফাঁকফোকড়গুলো বন্ধে কঠোর তদারকির আহ্বান জানিয়েছে ৷ 

অন্তত তিনজন পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, রুশরা সম্পদ রক্ষায় যেভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দৌড়াচ্ছেন তা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। তাঁদের আশঙ্কা অনেকেই তাঁদের হয়ে কাজ করবেন। 

দু’জন কূটনীতিক ইউক্রেন ইস্যুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিরপেক্ষ থাকার ঘোষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, উপসাগরীয় দেশটি রুশদের সম্পদ জব্দ করতে উদ্যোগী হবে কি না তা নিয়ে তাঁরা সন্দিহান। 

তৃতীয় একজন হতাশার সুরে বলেছেন, তাঁরা আশা করেছিলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যা একটি স্বর্ণ ব্যবসারও কেন্দ্র, তাদের সুনাম ও খ্যাতির কথা বিবেচনায় পদক্ষেপ নেবে। 

তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত পশ্চিমাদের এতসব উদ্বেগের দিকে মনোযোগ দেওয়ার খুব একটা প্রয়োজন বোধ করছে বলে মনে হচ্ছে না। রাশিয়ার নাগরিকদের সম্পদের স্রোত অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠলেও কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত