Ajker Patrika

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জেরার মুখে বিবিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ভাষণের অংশ জোড়া দিয়ে বানানো প্যানোরমা ভিডিওকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির ভেতরে নানান সংকট তৈরি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপিদের মুখোমুখি (শুনানি) হতে হবে বিবিসির শীর্ষ নির্বাহী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

জানা গেছে, বিবিসির সাবেক সম্পাদকীয় উপদেষ্টা মাইকেল প্রেসকট প্রথমবারের মতো হাউস অব কমন্সের একটি কমিটির সামনে এ বিষয়ে বক্তব্য দেবেন।

এর আগে বিবিসির বেশ কিছু প্রতিবেদনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মাইকেল প্রেসকট। তিনি ট্রাম্পের ভাষণ নিয়ে তৈরি প্যানোরমা অনুষ্ঠান সম্পাদনার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবিসিকে একটি চিঠিও লিখেছিলেন। ওই চিঠি গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর চলতি মাসের শুরুতে বিবিসির মহাপরিচালক ও সংবাদ বিভাগের প্রধান পদত্যাগ করেন।

জানা গেছে, আজকের শুনানিতে উপস্থিত থাকবেন বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহ, বোর্ড সদস্য স্যার রবি গিব ও ক্যারোলিন থমসন। এ ছাড়া বিবিসির সাবেক সম্পাদকীয় উপদেষ্টা ক্যারোলিন ড্যানিয়েলও আজ গ্রিনিচ মান সময় বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে পার্লামেন্টের কালচার, মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্ট কমিটির সামনে বক্তব্য দেবেন।

ধারণা করা হচ্ছে, এমপিদের কাছ থেকে কড়া প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে বিবিসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের। সেখানে তাঁরা বিবিসির বর্তমান অবস্থা, সাংবাদিকতার মান ও পর্দার আড়ালের ঘটনাবলির বর্ণনা দেবেন।

এদিকে, গত শুক্রবার বিবিসির বোর্ড সদস্য সুমিত ব্যানার্জি পদত্যাগ করেছেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে ‘গভর্ন্যান্স ইস্যু’ বা শাসনব্যবস্থার সমস্যার কথা উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে বিবিসির মিডিয়া সম্পাদক কেটি রাজাল বলেন, সুমিত ব্যানার্জি তাঁর পদত্যাগপত্রে শাসনব্যবস্থার সমস্যার কথা বলে সরাসরি বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহকে আক্রমণ করেছেন। তাই আজকের শুনানি সামির শাহর জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

একই সঙ্গে নজর থাকবে স্যার রবি গিবের দিকে—যিনি বিবিসির সাবেক জ্যেষ্ঠ সম্পাদক এবং ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের যোগাযোগ পরিচালক ছিলেন।

১০ নভেম্বর মাইকেল প্রেসকটের চিঠি প্রকাশ্যে আসার পর সমালোচনার মুখে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও নিউজ সিইও ডেবোরা টার্নেস পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

ওই ঘটনার পর পার্লামেন্টারি কমিটিকে পাঠানো এক চিঠিতে চেয়ারম্যান সামির শাহ ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের বক্তৃতার দুই অংশ একসঙ্গে জোড়া লাগিয়ে প্যানোরমা অনুষ্ঠানে প্রচার করার বিষয়টিকে ‘ভুল’ বলে স্বীকার করেন।

প্রেসকট তাঁর চিঠিতে আরও কিছু উদ্বেগজনক বিষয়ের কথা বলেন, যার মধ্যে ছিল—ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের কাভারেজে বিবিসি অ্যারাবিক বিভাগের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ।

হাউস অব কমন্সের শুনানি কমিটির চেয়ার কনজারভেটিভ এমপি ক্যারোলিন ডিনেনেজ বলেছেন, টিম ডেভির পদত্যাগ ‘দুঃখজনক’ হলেও বিবিসির প্রতি আস্থা পুনর্গঠনই এখন অগ্রাধিকার। তিনি বলেছেন, বিবিসিকে এখন বেশ কিছু কাজ করতে হবে, যা দেশ-বিদেশে তাদের সুনাম পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে। সাম্প্রতিক সংকট ও ভুল সিদ্ধান্তই বিবিসিকে এমন অবস্থায় নিয়ে গেছে।

বিবিসির এ সংকটকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ ও সংবাদ কাভারেজের মান নিয়েও বিস্তৃত বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকে অভিযোগ করছেন—প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষপাত ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাড়ছে।

ব্রিটেনের সংস্কৃতিসচিব লিসা ন্যান্ডি বলেছেন, মিডিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব একটি সমস্যা। এ কারণেই বিবিসির নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

স্যার রবি গিবকে ২০২১ সালে কনজারভেটিভ সরকার বিবিসি বোর্ডে নিয়োগ দেয়। তাঁর বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিবিসি বোর্ডের এডিটরিয়াল গাইডলাইনস অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস কমিটিতে (ইজিএসসি) বসেন—যেখানে শাহ, ডেভি ও থমসনও সদস্য।

পার্লামেন্টারি কমিটি বলেছে, সোমবারের সেশনটিতে ইজিএসসির ‘কার্যপ্রক্রিয়া ও কীভাবে সংস্থাটি তার সংবাদ সম্পাদকীয় মান নিশ্চিত করে’ এ বিষয়ে ফোকাস করা হবে।

এদিকে, গতকাল রোববার আরও এক ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানায়, বিবিসি ইজিএসসিকে সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা করছে। বিষয়টি সত্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিবিসি এসব প্রতিবেদনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

এসবের মাঝেই বিবিসি এখন অপেক্ষা করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন কি না। তিনি প্যানোরমা অনুষ্ঠানের সম্পাদনা নিয়ে অভিযোগ করে এক থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ক্ষুব্ধ, হতাশ ও দ্বিধাগ্রস্ত ইউক্রেনের সৈন্যরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে দ্বিধাগ্রস্ত ইউক্রেনের সেনারা। ছবি: বিবিসি
ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে দ্বিধাগ্রস্ত ইউক্রেনের সেনারা। ছবি: বিবিসি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের খসড়া শান্তি প্রস্তাব ইউক্রেনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এই প্রস্তাব নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা ইউক্রেনীয় সৈন্যদের কেউ ক্ষুব্ধ, কেউ হতাশ, আবার কেউ কেউ দীর্ঘ লড়াইয়ে ক্লান্ত হয়ে যেভাবেই হোক একটি সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইমেইলের মাধ্যমে ফ্রন্টলাইনের ছয় সৈন্যের সঙ্গে কথা বলে এই ধরনের মনোভাবের কথা জানতে পেরেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ফাঁস হওয়া মূল খসড়াটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে এখনো আলোচনা চলমান রয়েছে। তবে এই প্রস্তাবনাটিকে সরাসরি ‘বাজে প্রস্তাব’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত সেনা ইয়ারোস্লাভ। তিনি বলেন, ‘এটি কেউই সমর্থন করবে না।’

শুটসার নামে ইউক্রেনের এক সামরিক চিকিৎসক ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবটিকে ‘অবমাননাকর ও গুরুত্বহীন’ বলেছেন। তবে ‘স্নেক’ ছদ্মনামের এক সৈন্য মত দিয়েছেন, ‘নিদেনপক্ষে কোনো না কোনো বিষয়ে এখন সমঝোতায় পৌঁছানোর সময় এসেছে।’

ভূখণ্ড ছাড়ার প্রস্তাব

খসড়া প্রস্তাবে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো ডনবাস অঞ্চলের সম্পূর্ণ অংশ রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়া। গত এক মাসেই ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে আরও ৪৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা হারিয়েছে। বর্তমানে কিয়েভ ডনবাসের মাত্র ১৫ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

‘স্নেক’ বলেন, ‘ওরা চাইলে নিয়ে যাক। শহর-গ্রাম প্রায় ফাঁকা। আমরা মানুষের জন্য নয়, শুধু মাটির জন্য লড়ছি, আর এতে মানুষ মরছে।’

ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফের কর্মকর্তা আন্ড্রি মন্তব্য করেছেন, ডনবাস ছেড়ে দেওয়া ‘বেদনাদায়ক’ হলেও সামরিকভাবে তা ধরে রাখা হয়তো আর সম্ভব নয়। তবে ২০১৮ সাল থেকে থেকে যুদ্ধরত মাতরোস মনে করেন, এমন হলে তা সব ত্যাগ ও সংগ্রামকে শূন্যে পরিণত করবে এবং হাজারো প্রাণহানির অবমূল্যায়ন হবে।

সেনাবাহিনী সংকোচন

শান্তি প্রস্তাবের খসড়ায় ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে ৬ লাখ সদস্যে সীমিত রাখার প্রস্তাব রয়েছে—যা আগের তুলনায় বড় হলেও বর্তমানে ৮ লাখের বেশি সৈন্যধারী একটি বাহিনী বড় ধরনের কাটছাঁটের মুখোমুখি হবে। এ ক্ষেত্রে স্নেক মনে করেন, যুদ্ধ শেষে দেশ পুনর্গঠনে অনেক সৈন্যের প্রয়োজন হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকলে অত বড় বাহিনী রাখার দরকার নেই। আন্ড্রিও বলেন, ‘মানুষ ক্লান্ত, পরিবারের কাছে ফিরতে চায়।’ তবে শুটসার এতে রাজি নন, তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীই পরাজয় থেকে রক্ষা করছে।’

নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে অনিশ্চয়তা

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হবে ইউক্রেনকে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা খোলা রাখা হয়েছে। ভবিষ্যৎ হামলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ইঙ্গিত দিলেও বিস্তারিত অস্পষ্ট।

এই বিষয়ে ইউক্রেনের বাহিনীর ড্রোন অপারেটর ইয়েভহেন মনে করেন, নিরাপত্তার জন্য বিদেশি সৈন্য মোতায়েন করাই সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা। তবে আন্ড্রি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী সহায়তা দিতে পারবে না ইউরোপের দেশগুলো। আর শুটসার মনে করেন, মার্কিন কর্তৃপক্ষ যে নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও কথা বলছে, সেটাও নির্ভরযোগ্য নয়।

নতুন নির্বাচন

যুদ্ধ শেষ হওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাবটিকে অনেক সৈন্য সমর্থন করছেন। দুর্নীতির অভিযোগে সরকারের প্রতি অনাস্থা বাড়ায় স্নেক, মারিনসহ অনেকে মনে করেন সরকারকে নির্বাচন প্রয়োজনের বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়াই মূল সমস্যা—শান্তি আলোচনা নিয়ে জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৫৪
জেনেভায় আলোচনার পর সুইডিশ পার্লামেন্টে ভাষণ দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
জেনেভায় আলোচনার পর সুইডিশ পার্লামেন্টে ভাষণ দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

দখল করা ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দেওয়ার দাবিকে চলমান শান্তি আলোচনার ‘মূল সমস্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সুইডিশ পার্লামেন্টে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে অঞ্চল ‘দখল করেছেন’, তার আইনি স্বীকৃতির দাবি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

জেনেভা আলোচনার পর আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) সুইডিশ পার্লামেন্টে আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এটি আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের নীতি ভঙ্গ করবে। সীমানা শক্তি দিয়ে পরিবর্তন করা যায় না।’ তিনি পুতিনের দাবিকে শুধু ইউক্রেনের জন্য নয়, ‘গোটা বিশ্বের জন্য খুব বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দেন।

জেলেনস্কি আরও জানান, আলোচনায় তাঁরা বন্দিবিনিময়ের মতো ‘অতি সংবেদনশীল বিষয়’ টেবিলে রাখতে পেরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সব ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীর মুক্তি এবং অপহৃত শিশুদের ফিরিয়ে আনা।

তবে তিনি বলেন, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ব্যবহারের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। পার্লামেন্টকে তিনি বলেন, ‘আক্রমণকারীকে তার শুরু করা যুদ্ধের জন্য মূল্য দিতে হবে।’ তিনি শেষ করেন এই আহ্বান জানিয়ে—‘রাশিয়ার ওপর চাপ অব্যাহত রাখুন। রাশিয়া এখনো মানুষ মারছে।’

এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি প্রস্তাব দেন। তবে তাঁর এ প্রস্তাবকে এমনভাবে দেখা হচ্ছিল যে, এতে রাশিয়া প্রায় সবটাই পেয়ে যাচ্ছে। ওই পরিকল্পনায় রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়া, লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ককে ‘কার্যত রাশিয়ার অংশ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

ইউক্রেনীয় বাহিনীকে পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রিত অংশ থেকে প্রত্যাহার করে এই অঞ্চলকে নিরপেক্ষ বেসামরিক বাফার জোন হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়, যা আন্তর্জাতিকভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত হবে।

ইউক্রেনকে তার সামরিক বাহিনীর আকার সীমিত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে ন্যাটোতে যোগদানের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে হবে।

তবে গতকাল রোববার জেনেভায় আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ শেষ করতে একটি সংশোধিত ফ্রেমওয়ার্কে পৌঁছেছে। আগের প্রস্তাবটি মস্কোর জন্য অতিরিক্ত সুবিধাজনক বলে সমালোচিত হওয়ার পর এই নতুন কাঠামো সামনে আনা হলো। উভয় দেশ জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষ করার যেকোনো চুক্তিতে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব সম্পূর্ণভাবে বজায় রাখতে হবে। তবে সংশোধিত ফ্রেমওয়ার্কের বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানে আধা সামরিক বাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে আত্মঘাতী হামলা, নিহত ৬

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৩
পাকিস্তানের পেশোয়ারে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের পেশোয়ারে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পেশোয়ারে আধাসামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে তিন আত্মঘাতী হামলাকারী হামলা চালিয়েছিল। এতে অন্তত তিন নিরাপত্তাকর্মীসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে এমনটাই জানানো হয়েছে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় আজ সোমবার ভোরে ফেডারেল কনস্ট্যাবুলারি (এফসি) সদর দপ্তরের প্রধান ফটকে প্রথম হামলাকারী নিজের বিস্ফোরক ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায়। অন্য দুই হামলাকারী ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তা সদস্যরা তাদের গুলি করে হত্যা করেন।

পেশোয়ার ক্যাপিটাল সিটি পুলিশ অফিসার মিয়া সাঈদ আহমদ ডনকে বলেন, ‘শুরুতে তিনজন অস্ত্রধারী সদর দপ্তরে ঢোকার চেষ্টা করে। একজন গেটে নিজেকে উড়িয়ে দেয়, আর দুজন ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে এফসি সদস্যরা গুলি চালিয়ে তাদের ঠেকায়।’

দুনিয়া নিউজ সাঈদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, গেটে অবস্থানরত তিন এফসি সদস্য বিস্ফোরণে নিহত হন। পেশোয়ার পুলিশপ্রধান সাঈদ আহমদ বলেন, হামলার সময় সদর দপ্তরের ভেতরের খোলা মাঠে সকালের কুচকাওয়াজের প্রস্তুতিতে অনেক নিরাপত্তাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আজকের হামলাকারীরা পায়ে হেঁটে এসেছিল। তারা কুচকাওয়াজের জায়গা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। আমাদের সদস্যদের দ্রুত পদক্ষেপে আরও বড় বিপর্যয় ঠেকানো গেছে।’

এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হামলার পরপরই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত এ সদর দপ্তর ঘিরে ফেলা হয়। ডনের বরাতে জানা যায়, অন্তত ছয় বেসামরিক লোক আহত হয়েছে। তাদের পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের এক মুখপাত্র ডনকে জানান, আহত সবাই স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন।

দ্য ডন আরও জানায়, লেডি রিডিং হাসপাতাল ও খাইবার টিচিং হাসপাতালে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে পাকিস্তান তালেবান বা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর আগে এ ধরনের হামলার জন্য দায়ী ছিল। দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে এমন হামলা বেড়েছে। আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবানের মিত্র হলেও টিটিপি আলাদা একটি সংগঠন।

এই হামলার দুই সপ্তাহ আগে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের একটি আদালতের বাইরে এক আত্মঘাতী হামলাকারী বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে সে বিস্ফোরণ ঘটালে ১২ জন নিহত হয়।

ক্রমবর্ধমান সহিংসতা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের মধ্যে টানাপোড়েনও বাড়িয়েছে। ইসলামাবাদ বলছে, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে টিটিপি সদস্যরা আফগানিস্তানের ভেতরে আশ্রয় পাচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পেশোয়ার হামলার নিন্দা জানিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ‘সময়োপযোগী’ প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যারা পাকিস্তানের অখণ্ডতায় আঘাত হানতে চায়, তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেওয়া হবে।’ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিও হামলার তীব্র নিন্দা জানান। এক্সে তিনি ‘গভীর সমবেদনা’ জানান এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাহসিকতার প্রশংসা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতীয় নারীকে আটকে রাখল সাংহাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, অরুণাচল প্রদেশকে চীনের অংশ দাবি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দা  পেমা ওয়াং থংডক। ছবি: এক্স
অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দা পেমা ওয়াং থংডক। ছবি: এক্স

ট্রানজিট বিরতির সময় সাংহাই বিমানবন্দরে অরুণাচল প্রদেশের এক ভারতীয় নারীকে ১৮ ঘণ্টা আটক ও হয়রানি করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। চীনা কর্তৃপক্ষ ওই নারীর ভারতীয় পাসপোর্ট অবৈধ বলেছে, তারা দাবি করেছে, ওই নারী তাঁর জন্মস্থান অরুণাচল প্রদেশে, যে ভূখণ্ড প্রকৃতপক্ষে চীনের অংশ।

গতকাল রোববার এক্স হ্যান্ডলে এমন অভিযোগ করে পোস্ট করেছেন পেমা ওয়াং থংডক নামে ওই নারী।

তিনি জানিয়েছেন, ২১ নভেম্বর লন্ডন থেকে জাপানে যাচ্ছিলেন। সাংহাই পুডং বিমানবন্দরে তাঁর তিন ঘণ্টার ট্রানজিট বিরতি ছিল। এক্স-এ একাধিক পোস্টে তিনি জানান, চীনা অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এবং চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস করপোরেশন লিমিটেড তাঁর ভারতীয় পাসপোর্টকে ‘অবৈধ’ বলে দাবি করে ২১ নভেম্বর তাঁকে ১৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে রাখে।

থংডক অভিযোগ করেন, অভিবাসন ডেস্কের কর্মকর্তারা সরাসরি তাঁকে জানান, তিনি অরুণাচল প্রদেশে জন্মগ্রহণ করায় তাঁর ‘ভারতীয় পাসপোর্ট অবৈধ’। তাঁর পাসপোর্ট জব্দ করা হয় এবং বৈধ জাপানি ভিসা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে পরবর্তী ফ্লাইটে উঠতে বাধা দেওয়া হয়।

থংডকের দাবি, একাধিক অভিবাসন কর্মকর্তা এবং চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের কর্মীরা তাঁকে অপমান ও উপহাস করেন। এমনকি তাঁকে চীনা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পরামর্শও দেওয়া হয়। এই পুরো সময় তাঁকে খাবার, বিমানবন্দর সুবিধা বা তাঁর স্ট্যাটাস সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও জানান, নির্ধারিত জাপানগামী ফ্লাইটে তাঁকে উঠতে না দিয়ে শুধু চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের একটি নতুন টিকিট কিনতে বাধ্য করা হয়। এর ফলে তাঁর বড় আর্থিক ক্ষতি হয়, কারণ তাঁকে ফ্লাইট এবং হোটেল বুকিং বাতিল করতে হয়। বিমানবন্দর ট্রানজিট এলাকায় আটকে থাকা অবস্থায়, দিশেহারা থংডক শেষমেশ যুক্তরাজ্যে থাকা এক বন্ধুর মাধ্যমে সাংহাইয়ে ভারতীয় কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কনস্যুলার হস্তক্ষেপে গভীর রাতে তিনি বিমানবন্দর ত্যাগ করতে সক্ষম হন।

এই ঘটনাকে ‘ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি অপমান’ বলে অভিহিত করেছেন থংডক। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে বেইজিংয়ের কাছে বিষয়টি উত্থাপনের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারত সরকার যেন জবাবদিহি নিশ্চিত করে, ক্ষতিপূরণ চায় এবং অরুণাচল প্রদেশের সমস্ত ভারতীয় নাগরিক যাতে বিদেশে ভ্রমণের সময় এই ধরনের বৈষম্যের শিকার না হন, তা নিশ্চিত করে।

উল্লেখ্য, অরুণাচল প্রদেশকে চীন ‘জাংনান’ বা তিব্বতের দক্ষিণাংশ বলে অভিহিত করে। এমনকি চীন এই অংশের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করে আসছে। ভারত বারবার চীনের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

চলতি বছরের মে মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ ব্যাপারে বলেন, ভারতীয় ভূখণ্ডের নাম পরিবর্তন করলে এই ‘অস্বীকার করার অযোগ্য’ বাস্তবতা পরিবর্তিত হবে না যে, অরুণাচল প্রদেশ ‘ছিল, আছে এবং সর্বদা’ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত