Ajker Patrika

তাপপ্রবাহে পুড়ছে ইউরোপ—স্পেন ও ফ্রান্সে প্রাণহানিও ঘটেছে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৫, ২০: ২৬
ইতালির রোমে পানি পান করছেন গরমে তৃষ্ণার্ত এক নারী। ছবি: বিবিসি
ইতালির রোমে পানি পান করছেন গরমে তৃষ্ণার্ত এক নারী। ছবি: বিবিসি

ইউরোপজুড়ে ভয়াবহ তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্পেনের কাতালোনিয়া অঞ্চলে তাপদাহের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ আগুন নেভাতে গিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুই ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে দমকলকর্মীরা। স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে জানানো হয়, কসকো শহরের কাছে তোররেফেতা এলাকায় আগুন নিভে যাওয়ার পর মরদেহ দুটি পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, নিহতদের একজন একটি খামারের মালিক এবং অন্যজন তাঁর কর্মচারী।

এদিকে ফ্রান্সেও গরমজনিত অসুস্থতায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাগনেস প্যানিয়ের-রুনাশে। মাত্র একদিনেই (মঙ্গলবার) সেখানে ৩০০ জনের বেশি মানুষকে তাপজনিত সমস্যায় চিকিৎসা দিতে হয়েছে।

জাতিসংঘের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ ধরনের চরম তাপপ্রবাহ এখন আরও ঘন ঘন এবং ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

স্পেনের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জুন ছিল তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ জুন মাস। সে সময় গড় তাপমাত্রা ছিল ২৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সাধারণত জুলাই ও আগস্টে দেখা যায়।

মঙ্গলবার রাতজুড়ে কাতালোনিয়ায় তোররেফেতা ও ফ্লোরেজাকস এলাকায় তাপদাহ থেকে সৃষ্ট দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে দমকল বাহিনী। বুধবার জানানো হয়, তারা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর এলাকায় ৪০ কিলোমিটারজুড়ে আগুনের সীমারেখা নির্ধারণের কাজ করছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোতেও কাজ চলছে।

স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলের কর্ডোবায় আজ বুধবার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ১৯০০ সালের পর এবারই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উষ্ণ জুন মাস দেখল ফ্রান্স। দেশের চারটি বিভাগ—ওব, শের, লোয়ারে ও ইয়োনে বর্তমানে ‘রেড অ্যালার্ট’ পর্যায়ে রয়েছে। পূর্ব ফ্রান্সে বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও উত্তরের মেটজ শহরে তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে ৩৭ ডিগ্রিতে।

ইতালির ভিচেনজা প্রদেশে দুই নির্মাণ শ্রমিক মঙ্গলবার দুপুরে গর্তে কাজ করার সময় অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে একজন কোমায় রয়েছেন। তাঁকে হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

তীব্র গরমের কারণে মঙ্গলবার ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ও ঘটে। অতিরিক্ত এসি ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বৈদ্যুতিক তার গরম হয়ে সংযোগে ব্যাঘাত ঘটে। এতে দোকান, হোটেল, বাড়ি, এমনকি এটিএমও অচল হয়ে পড়ে। বার্গামোতেও একই কারণে বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল শহরের অর্ধেক অংশ।

জাতিসংঘের আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, শহরাঞ্চলে ‘আর্বান হিট আইল্যান্ড’ প্রভাবের কারণে তাপমাত্রা আরও বেশি বৃদ্ধি পায়। পিচঢালা রাস্তা, দালানকোঠা ও যানবাহনের কারণে শহরে অতিরিক্ত গরম সৃষ্টি হয় যা মানবদেহে তাপমাত্রা ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে—জলবায়ু পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে এমন তাপদাহ আরও ঘন ঘন এবং ভয়াবহ রূপে ফিরে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত