Ajker Patrika

ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটানো যুদ্ধটির অজানা কাহিনি

অনলাইন ডেস্ক
‘অপারেশন ভার্সিটি’ শুরু করার আগে চা পান করছেন সেনারা। ছবি: বিবিসি
‘অপারেশন ভার্সিটি’ শুরু করার আগে চা পান করছেন সেনারা। ছবি: বিবিসি

‘অপারেশন ভার্সিটি’ ছিল সেই যুদ্ধ যা ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ত্বরান্বিত করেছিল। তবে এই যুদ্ধ সম্পর্কে বর্তমানে মানুষ খুব বেশি না জানলেও, সামরিক ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে এটি খুবই পরিচিত।

রোববার ‘অপারেশন ভার্সিটি’ সম্পর্কে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—১৯৪৫ সালের ২৪ মার্চ ব্রিটিশ, কানাডীয় এবং মার্কিন বাহিনী ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করেছিল। পরে সরাসরি জার্মান বাহিনীর প্রতিরক্ষা রেখার ওপর তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে প্যারাট্রুপার ও গ্লাইডারে থাকা সেনারা সেদিন প্রচণ্ড যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে অবতরণ করেন। তারা দ্রুত সাফল্য অর্জন করলেও বিপুল প্রাণহানি ঘটে। প্রায় ছয় সপ্তাহ পর পশ্চিমা ওই মিত্র বাহিনী বার্লিনে গিয়ে রুশ বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয় এবং ইউরোপে বিজয় ঘোষণা করে।

সেই সময়টিতে ব্রিটিশ বাহিনীর তৃতীয় ব্যাটালিয়নের প্যারাস্যুট রেজিমেন্টে কাজ করেছেন ক্রিস বুলক। বহু বছর আগের সেই যুদ্ধ নিয়ে তিনি এবার একটি স্মরণসভার আয়োজন করেছেন। ইংল্যান্ডের এসেক্সে আরএএফ রিভেনহলে অনুষ্ঠিত ওই স্মরণসভায় তিনি বলেছেন, ‘এটি এক অজানা গল্প। যখন দেখি রিভেনহলে সৈনিকেরা তাদের শেষ কাপে চা পান করছেন, বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছেন এবং জানতাম যে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের কেউ ফিরে আসবেন না—তখন এই গল্পটি বলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।’

অপারেশন ভার্সিটিতে অংশ নিয়েছিলেন বর্তমানে ১০২ বছর বয়সী পিটার ডেভিস। ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ গ্লাইডার পাইলট রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কারণ এটি তাঁর কাছে আর্মির সাধারণ দায়িত্বের চেয়ে আরও উত্তেজনাপূর্ণ মনে হয়েছিল। ১৯৪৫ সালের ২৪ মার্চ তিনি সাফোকের উডব্রিজ থেকে একটি ডাকোটা প্লেনে একটি কামান, একটি টোয়িং গাড়ি এবং ৮ জন সৈন্য নিয়ে রওনা হয়েছিলেন।

যুদ্ধের সেই মুহূর্তের স্মৃতি তুলে ধরে ডেভিস বলেন, ‘গ্লাইডার চালানো মানে ছিল, একটি ইটের মতো শুধু নিচের দিকে উড়ে যাওয়া। প্রচণ্ড বিমানবিধ্বংসী গোলাবর্ষণের মুখে আমরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আর শত্রুর মাঝখানে গিয়ে পড়েছিলাম। মাটিতে আছড়ে পড়ার পর আমরা একদম ভুল স্থানে, একদল ক্রুদ্ধ জার্মানের মাঝখানে ছিলাম। চারপাশে বিশৃঙ্খলা ছিল চরম পর্যায়ে।’

অপারেশন ভার্সিটি ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় একক বিমানবাহিত অভিযান। এর মাধ্যমে একদিনে ১৬ হাজারের বেশি সৈন্য পশ্চিম জার্মানিতে অবতরণ করেছিল। এর লক্ষ্য ছিল রাইন নদীর ওপারে একটি শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলা, যাতে মিত্র বাহিনী দ্রুত জার্মানির ভেতরে প্রবেশ করতে পারে এবং রুশ বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হতে পারে। এর প্রথম ধাপ ছিল অপারেশন প্লান্ডার, যা ছিল ব্রিটিশ ও কানাডীয় বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত বৃহত্তম নদী পারাপার অভিযান।

পাঁচ মাস আগের ব্যর্থ আর্নহেম যুদ্ধে ৯০ শতাংশ গ্লাইডার পাইলট রেজিমেন্টের প্রাণহানি ঘটার পরই অপারেশন ভার্সিটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এর ফলে যোদ্ধা বিমানের প্রশিক্ষণরত শত শত আরএএফ পাইলট গ্লাইডার পাইলট হিসেবে যোগ দিতে বাধ্য হন।

বর্তমানে ১০১ বছর বয়সী ব্রায়ান ল্যাথাম সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল, যদি স্বেচ্ছাসেবক না হই, তবে আমরা আর কখনো বিমান চালাতে পারব না এবং হয়তো পদাতিক বাহিনী যোগ বা খনিতে কাজ করতে হবে।’ পরে অবশ্য তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, গ্লাইডার পাইলট হওয়া ছিল এক ধরনের অভিজাত পদমর্যাদা। কমান্ডোদের মতোই এর জন্য কঠোর প্রশিক্ষণ নিতে হতো।

ওই যুদ্ধে গ্লাইডার পাইলট রেজিমেন্টের ৮৯০ জন সৈন্যের মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি নিহত বা আহত হন। ৯৮ বছর বয়সী ড্যানি মেসন বলেন, ‘আমরা জানতাম এটি আত্মঘাতী মিশন হতে পারে। তবুও তরুণ সেনারা ভেবেছিল—তারা ঠিকই বেঁচে ফিরবেন। তবে বাস্তবতা ভিন্ন ছিল। আমাদের প্রচণ্ড ক্ষয়ক্ষতি হয়।’

সে সময় মার্কিন ১৭ তম বিমানবাহিনী এবং ব্রিটিশ ৬ষ্ঠ বিমানবাহিনীর অন্তত ১ হাজার ৭০ জন সদস্য নিহত হন এবং আহত হন আরও হাজার হাজার। তবে চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই অপারেশন ভার্সিটির প্রধান লক্ষ্য অর্জিত হয়েছিল। মেসনের ভাষায়, ‘লোকেরা তখন এত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল যে, যুদ্ধের অবসান আসন্ন জেনে তারা আর অতীত নিয়ে ভাবেনি।’

বুলক ব্যাখ্যা করেন—‘অপারেশন ভার্সিটির তিন সপ্তাহ পর বেলসেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প মুক্ত হয়। এর দুই সপ্তাহ পর হিটলার আত্মহত্যা করেন এবং আরেক সপ্তাহ পর জার্মানি আত্মসমর্পণ করে। সম্ভবত এই যুদ্ধ নিয়ে কম আলোচনা হওয়ার কারণ হচ্ছে, এরপরের ঘটনাগুলোকে আরও বড় আকারে দেখা গিয়েছিল।’

আরএএফ রিভেনহল থেকে সেদিন সকালে ব্রিটিশ ৬ষ্ঠ বিমানবাহিনীর ৬০টি গ্লাইডার উড্ডয়ন করেছিল। কিন্তু এর অনেক ইতিহাস হারিয়ে গেছে। বুলক বলেন, ‘কারা কোন গ্লাইডারে ছিলেন এবং তাদের কী পরিণতি হয়েছিল, তার কোনো লিখিত নথি নেই। শুধুমাত্র ব্যক্তি বিশেষের স্মৃতিচারণ ও খুঁজে পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।’

এই ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য রিভেনহলে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছেন বুলক। ২৩ মার্চ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটিকে উন্মোচন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব: গ্রেপ্তার ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী

স্বাধীনতা দিবসে এবার কুচকাওয়াজ হচ্ছে না

একই মাঠে সকালে শ্রীলঙ্কাকে, বিকেলে পাকিস্তানকে হারাল নিউজিল্যান্ড

থমথমে খামারবাড়ি: সড়ক অবরোধ করে চলছে অবস্থান কর্মসূচি

প্রশাসনের লোক পরিচয়ে আ.লীগ নেতাকে গ্রেপ্তারে বাধা, পরে আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত