Ajker Patrika

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামরিক পুনরুত্থানের পথে জার্মানি, লক্ষ্য কী

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

এবার তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। জার্মানির ট্যাংকগুলো গত ২২ মে ভিলনিয়াসের সড়কে প্রবেশ করার সময় স্থানীয়রা উল্লাসে ফেটে পড়েন। ভিলনিয়াস লিথুয়ানিয়ার রাজধানী, যা একসময় নাৎসিরা দখল করে রেখেছিল।

ভিলনিয়াস শহরের বাসগুলোতে ন্যাটো মিত্রদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন উদ্‌যাপনের জন্য বিশেষ বার্তা প্রদর্শিত হচ্ছিল। তা সত্ত্বেও বুন্ডেসভেয়ারের (জার্মান সামরিক বাহিনী) ব্রাস ব্যান্ড যখন ‘প্রুশিয়াস গ্লোরি’ বাজানো শুরু করে, তখন সেনাবাহিনীর ৪৫তম প্যানজার ব্রিগেডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকা কয়েকজন জার্মান কর্মকর্তার মনে একঝলক অস্বস্তি জেগে ওঠে।

তাদের সেই অস্বস্তি কাটল তখনই, যখন তারা লিথুয়ানিয়ান সহকর্মীদের উজ্জ্বল হাসিমুখ দেখতে পেল।

সম্প্রতি জার্মানির ঋণসীমা শিথিল করার সিদ্ধান্তের ফলে নতুন সরকার প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। প্রকৃতপক্ষে সামরিক বাহিনীকে নতুন করে শক্তিশালী করা তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে।

জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেছেন, তিনি বুন্ডেসভেয়ারকে ‘ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী’ বানাতে চান। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই মাসের একটি সম্মেলনে ন্যাটোর নতুন দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা ব্যয় লক্ষ্যমাত্রায় সম্মত হবে জার্মানি। এই লক্ষ্যমাত্রা হলো জিডিপির ৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে এবং ১ দশমিক ৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোতে ব্যয় করা। বর্তমান উৎপাদনের স্তরে এটি বছরে মোট ২১৫ বিলিয়ন ইউরো হবে।

লিথুয়ানিয়ানদের মতো জার্মানির প্রায় সব মিত্র দেশই ইউরোপীয় নিরাপত্তার প্রতি জার্মানির এই বিলম্বিত অঙ্গীকারে খুশি। কিছুটা ইতস্তত করে এবং ঐতিহাসিক অস্বস্তির কিছুটা ছাপ থাকলেও জার্মানরাও ধীরে ধীরে বিষয়টি মেনে নিচ্ছে।

সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল কার্স্টেন ব্রয়েরের মতে, জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের তহবিল মূলত সেনাবাহিনীর জরুরি ও মৌলিক ঘাটতি পূরণ করেছে। কিন্তু অনেক কাজ এখনো বাকি।

ভবিষ্যতের ব্যয় ন্যাটোর ‘গুরুত্বপূর্ণ মেরুদণ্ড’ হিসেবে জার্মানির ভূমিকা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে হবে। এর মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক কাজ হলো—বিমান প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করা, অস্ত্রের মজুত পুনরায় পূর্ণ করা এবং দূরপাল্লার নির্ভুল আঘাত হানার সক্ষমতা তৈরি করা।

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আলফন্স মাইস জার্মানির প্রতিরক্ষাশিল্পকে ব্যাপক উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিতে উৎসাহিত করেছেন। অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের’ নামে জার্মানির নিজস্ব বা ইউরোপীয় শিল্প গড়ে তোলার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্য দেশ থেকে সরাসরি সমাধান নেওয়ার পক্ষে বেশি আগ্রহী।

জেনারেল মাইস বলেন, ‘যদি আমাদের নিজেদের দেশে দেরি বা সরবরাহ সংক্রান্ত সমস্যা হয়, তাহলে একটি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া এবং যারা সরবরাহ করতে পারে তাদের দিকে তাকানো ভালো।’

বিশেষজ্ঞদের একাংশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, জার্মানি ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে সেখানে ব্যবহৃত ড্রোন এবং ‘স্বচ্ছ’ যুদ্ধক্ষেত্রের মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা নিকো লাঙ্গে বলেন, ‘জার্মানিতে প্রযুক্তি অসাধারণ, কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা এটি কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা জানেন না। কেউই এমন ড্রোন মজুত করে গতানুগতিক যুদ্ধে লড়তে চায় না, যা দ্রুত পুরোনো হয়ে যাবে।’

তবে পরিকল্পনাকারীদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, জার্মানি যেন পুরোনো ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল না হয়ে পড়ে। হেলসিংয়ের (স্টার্টআপ, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক স্থল, আকাশ ও নৌবাহিনীর সিস্টেম নিয়ে কাজ করে) সহপ্রধান নির্বাহী গুন্ডবার্ট শের্ফ বলেন, ‘আমাদের এমন একটি বাজারচালিত শিল্প প্রয়োজন, যা নতুনত্ব আনবে। কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে অন্য ক্ষেত্রে সফল হবে এবং বেসরকারি পুঁজি ব্যবহার করবে।’

বুন্ডেসভেয়ারকে উন্নত করার অর্থ হলো, ধীরগতির পরিকল্পনা এবং ক্রয়সংক্রান্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মোকাবিলা করা। চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস ঋণসীমা শিথিল করার সময় বলেছিলেন, ইউরোপে শান্তি ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার তিনি তাই করবেন।

তবে গবেষণা সংস্থা জার্মান মার্শাল ফান্ডের ক্লডিয়া মেজর মনে করেন, প্রথমে টাকা খরচ করার সুযোগ দিলে সংস্কারের ওপর চাপ কমে যায়। জার্মানির ফেডারেল অডিট অফিস সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়, বুন্ডেসভেয়ার ‘ব্যবস্থাপনা বাহুল্যে’ জর্জরিত হয়ে পড়েছে এবং এর ‘সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন’ প্রয়োজন।

অনেক বিশেষজ্ঞ ক্লডিয়া মেজরের সঙ্গে একমত। জেনারেল মাইস আক্ষেপ করে বলেন, ‘পণ্য কেনাকাটায় অনেক বেশি সময় লাগে। একটি চুক্তি সই করা এক জিনিস আর সেই সব সরঞ্জাম সৈন্যদের কাছে পৌঁছানো অন্য জিনিস।’

তথ্যসূত্র: দি ইকোনমিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের তিন পদে অতিরিক্ত: তিনজনে একজন বাড়তি

গাজীপুরে সাংবাদিককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা

ইরানে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা জানত রাশিয়া, তেহরানে বিতর্ক তুঙ্গে

ভারতে পোশাকের অর্ডার স্থগিত করছে মার্কিন ক্রেতারা, বাংলাদেশ-ভিয়েতনামে কারখানা স্থানান্তরের পরামর্শ

ডোপ টেস্টে পজিটিভ, চবিতে শিক্ষকতা থেকে বাদ দুই প্রার্থী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত