Ajker Patrika

বস্তাবন্দী এক কন্যাশিশুর লাশ ঘিরে শোরগোল তুরস্কে

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

বাড়ির কাছেই একটি নদী থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ৮ বছর বয়সী ওই মেয়ে শিশুটিকে। তুরস্কের এই ঘটনাটি সাধারণ মানুষের মধ্যে এতটাই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে যে, শেষ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট রিস্যেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও এই বিষয়ে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন।

মঙ্গলবার আমিরাত-ভিত্তিক দ্য ন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি তুরস্কে নারী ও শিশু অধিকারের দাবিগুলোকে উসকে দিয়েছে। গত রোববার তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দিয়ারবাকিরের কাছাকাছি একটি গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বাস করত ৮ বছরের নারিন গুরান। বাড়ি থেকে থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই একটি নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ ছিল মেয়েটি।

নারিনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, ‘যারা আমাদের ছোট্ট মেয়েটির জীবন নিয়েছে, আমরা তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করব। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়টির দেখভাল করব যেন, নিষ্পাপ শিশুর খুনিরা কঠোরতম শাস্তি পায়।’

দিয়ারবাকিরের গভর্নর মুরাত জোরলুওগলু জানান, নারিনের লাশ একটি ব্যাগের ভেতর রাখা ছিল এবং গাছের ডাল ও পাথর দিয়ে ঢেকে নদীর তীরে ফেলে রাখা হয়েছিল। লাশটি এমনভাবে রাখা ছিল, প্রথম দেখায় এটি কারও মনেই কোনো সন্দেহের উদ্রেক করবে না। সবাই এটিকে প্রাকৃতিক কোনো বিষয় ভেবে নেবেন।

তুর্কি গণমাধ্যম জানিয়েছে, নারিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা-মা, ভাই ও চাচাসহ দুই ডজন লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মেয়েটির শরীর এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত ছিল যে, এটির ময়নাতদন্ত করতে ১০ ঘণ্টা সময় লেগেছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে চূড়ান্ত কোনো বিবৃতি দেওয়া সম্ভব নয়।

নারিনকে সোমবার তার বাড়ির কাছে দাফন করা হয়েছে। তবে তার কফিনে দাম্পত্য চিহ্ন ব্যবহারের বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টিকে অনেকে অনার কিলিংকে বৈধতা দেওয়ার চিহ্ন হিসেবে সন্দেহ করছে।

দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, নারিনের মৃত্যু তুরস্ক জুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অপরাধীদের বিচার দাবিতে ইস্তাম্বুল এবং রাজধানী আঙ্কারা সহ সারা দেশে প্রতিবাদকারীরা জড়ো হয়েছে।

তুরস্কের পরিবার ও সমাজসেবা মন্ত্রী মাহিনুর গোক্তাস বলেছেন, তাঁর মন্ত্রণালয় যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই স্থানের আশপাশের এলাকার মানুষদের মানসিক সহায়তা প্রদান করছে। কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে গোক্তাস বলেছেন, ‘নারিনকে যে বা যারা তার জীবন থেকে নিয়ে গেছে তাদের সবচেয়ে গুরুতর শাস্তি নিশ্চিত করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় সময়ই নিজ পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নারী ও শিশুদের হত্যা প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিক্ষোভকারীরা।

 ‘দ্য উই উইল স্টপ ফেমিসাইডস প্ল্যাটফর্ম’ নামে একটি তুর্কি নাগরিক সমাজ সংস্থা চলতি বছর ১৪ জন মেয়েকে হত্যার ঘটনা রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে ৯ জনকে তাদের মায়ের সঙ্গে একসঙ্গে হত্যা করা হয়েছে।

প্ল্যাটফর্মটি তাদের সর্বশেষ ছয়-মাসিক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘নারীরা যখন তাদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে চায়, তখন অপরাধীরা শিশুদেরকে হুমকি হিসেবে ব্যবহার করে।’ তুরস্কে এমন ঘটনার এক উদাহরণে বলা হয়—এক ব্যক্তি তাঁর দুই মেয়েকে গুলি করে একজনকে হত্যা করেছিলেন। কারণ তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী তাঁর সঙ্গে আবার মিলিত হতে অস্বীকার করেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত