Ajker Patrika

এবার নিখোঁজ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, কী আছে তাঁর ভাগ্যে

আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬: ৪২
এবার নিখোঁজ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, কী আছে তাঁর ভাগ্যে

প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে জনসমক্ষে দেখা মিলছে না চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শ্যাংফুর। তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। অনেকে ধারণা করছেন, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়তো দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংয়ের পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছেন বা করেছেন। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ এখনো লি শ্যাংফুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, চীনা কর্তৃপক্ষ ৬৫ বছর বয়স্ক লিং শ্যাংফুর বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে এবং এ কারণে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সপ্তাহখানেক আগে ভিয়েতনামের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও লি সেই বৈঠক থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।

তিন সপ্তাহ ধরে জনসমক্ষে অনুপস্থিত থাকা লি শ্যাংফু সম্ভবত দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংয়ের পরিণতি বরণ করেছেন—এমনটাই ভাবছেন অনেকে। কিন গ্যাং গত জুলাই মাসে শেষবারের মতো জনসমক্ষে হাজির হয়েছিলেন। তারপর থেকে তাঁকে আর দেখা যায়নি। পরে আগস্টে তাঁকে সরিয়ে তাঁর পূর্বসূরি ওয়াং ইকে আবারও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

লি শ্যাংফু ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা চীনের গণমুক্তি ফৌজ বা পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ছিলেন। লি শ্যাংফু পিএলএর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ডিফেন্স টেকনোলজি থেকে ১৯৮২ সালে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। পরে তিনি প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সেনাবাহিনীতে তিনি ৩০ বছরের বেশি সময় কাজ করেছেন এবং চীনের সিচ্যাং স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকেন্দ্রের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন।

২০১৬ সালে লি চীনের সশস্ত্র বাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্সের ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। এই বাহিনী মূলত মহাকাশ ও সাইবার স্ফেয়ারে যুদ্ধের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে গঠিত। ২০১৭ সালে তাঁকে পিএলএর ক্রয় ইউনিটের প্রধান হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে লি চলতি বছরের মার্চে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত হন। 

মন্ত্রী হিসেবে লি শ্যাংফু চীনের স্টেট কাউন্সিলের পাঁচ সদস্যের একজন, যাঁরা দেশের অন্যান্য মন্ত্রীর তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতাবান এবং মর্যাদাবান। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে রি চলতি বছরের জুনে সিঙ্গাপুরে সাংগ্রি-লা প্রতিরক্ষা সংলাপে অংশ নেন। সেখানে পশ্চিমা বিশ্বের তাঁর সমমর্যাদার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসোবোরন এক্সপোর্টের কাছ থেকে অস্ত্র কেনায় ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র লি শ্যাংফুর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তার জের ধরে সাংগ্রি-লা সংলাপে তিনি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বারবার চেষ্টা করা হলেও তিনি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে হাত মেলানোর বাইরে কোনো কথাই বলেননি।

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে শেষবারের মতো দেখা গেছে গত ১৫ আগস্ট। রাশিয়ার রাজধানী মস্কো কাছাকাছি অনুষ্ঠিত একটি নিরাপত্তা সম্মেলনে। এর দুই দিন পর তাঁকে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে দেখা যায় দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠক করতে। এরপর তিনি বেইজিংয়ের একটি নিরাপত্তা ফোরামে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ২৯ আগস্ট। তারপর থেকেই লি’র আর দেখা মেলেনি।

কী আছে লি শ্যাংফুর ভাগ্যে

চলতি বছরের জুলাইয়ে চীন কর্তৃপক্ষ দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর রকেট ফোর্সের প্রধান লি ইয়চাওকে পদচ্যুত করে। সেই ঘটনার পর আগে বেশ কয়েক সপ্তাহ তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে পদচ্যুত করার আগে গত জুলাই মাস থেকে জনসমক্ষে অনুপস্থিত। পরে তাঁর জায়গায় তাঁর পূর্বসূরি ওয়াং ইকে আবারও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই শীর্ষ দুই নেতার অন্তর্ধানের বিষয়ে চীন সরকার আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি।

গত ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর ভিয়েতনামের সঙ্গে চীনের বার্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লি শ্যাংফু সেই সম্মেলনে উপস্থিত হননি, এমনকি সেই সম্মেলন আর আয়োজনই করা হয়নি। এ ঘটনার পরে লি’র ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিয়ে জল্পনা বেড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই ভিয়েতনামি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চীনা কর্তৃপক্ষ হ্যানয়কে জানিয়েছে যে তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শ্যাংফু শারীরিকভাবে সুস্থ নন। 

লি’র অন্তর্ধানের বিষয়টি নিয়ে অবাক হয়েছেন জাপানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাম ইমানুয়েল। তিনি গত ৮ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে লেখেন, ‘সি চিনপিংয়ের মন্ত্রিসভা এখন আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাস ‘কেউ কোথাও নেই’-এর মতো হয়ে গেছে।’ 

রাম ইমানুয়েল আজ শুক্রবার সকালের একটি টুইটে আরও উল্লেখ করেন, তিন সপ্তাহ ধরে লি’র কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না কিংবা তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। ধারণা করছি, তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়েছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো মুখ খোলেনি চীনা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত