Ajker Patrika

ভারতীয় উড়োজাহাজে মালদ্বীপের মুইজ্জুর আপত্তি, বিনা চিকিৎসায় কিশোরের মৃত্যু 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯: ৩৫
Thumbnail image

চিকিৎসার জন্য ভারতীয় উড়োজাহাজ ব্যবহার করতে না দেওয়ায় মালদ্বীপে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু বিশেষ উড়োজাহাজটি ব্যবহারে অনুমতি দিলে চিকিৎসা করে তাকে হয়তো বাঁচানো সম্ভব হতো বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গুরুতর অসুস্থ কিশোরের চিকিৎসার অনুরোধের জন্য ১৭ জানুয়ারি জরুরি ভিত্তিতে ভারতীয় ডর্নিয়ার উড়োজাহাজ ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাকে সাড়া মেলেনি। এরপর গতকাল শনিবার (২০ জানুয়ারি) ওই কিশোরের মৃত্যু হয়।

সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ডর্নিয়ার উড়োজাহাজটি হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেডের (এইচএএল) তৈরি। ভারতের সরবরাহকৃত এ উড়োজাহাজটি দ্বীপরাষ্ট্রটিতে মানবিক উদ্দেশ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়, মস্তিষ্কের টিউমার ও স্ট্রোকের সঙ্গে লড়াইরত কিশোরটিকে জরুরি ভিত্তিতে এয়ার লিফট করার ব্যবস্থা করতে চাইছিল তার পরিবার। তারা গাফ আলিফ ভিলিংগিলির প্রত্যন্ত এক দ্বীপ উইলমিংটন থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে তাকে রাজধানী মালে নিয়ে যেতে চায়। সেখানে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।

গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে কিশোরটির স্ট্রোক হলে তার পরিবার বিমানে তাকে স্থানান্তরের জন্য রাজধানীতে আবেদন করে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তাদের আবেদনের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। অবশেষে ১৬ ঘণ্টা পর দেশটির বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের আবেদনে সাড়া দেয়। 

এ বিলম্বের কারণে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং গাফ আলিফ ভিলিংগিলির হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ শুরু হয়। 

তাৎক্ষণিক সাড়াদানে ব্যর্থতাকে দোষারোপ করে কিশোরের শোকাতুর বাবা স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আধাহুকে বলেন, ‘স্ট্রোকের পরপরই তাকে মালে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা দ্বীপের বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তবে তারা আমাদের ফোনকলে সাড়া দেয়নি। তারা বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ফোন কলের জবাব দেয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হয়।’

অবশেষে কিশোরটিকে মালে নিয়ে যাওয়া হলেও তার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটছিল। মালে নেওয়ার পরপরই তাকে তাৎক্ষণিক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়।

চিকিৎসার জন্য জরুরি স্থানান্তরের দায়িত্বে থাকা সংস্থা আশাধা কোম্পানি লিমিটেড এক বিবৃতিতে বলে, তারা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের অনুরোধ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে মালে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে টেকনিক্যাল একটি সমস্যার কারণে বিলম্ব হয়ে যায়। 

কিশোরের মৃত্যুর পর সেই হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে উল্লেখ করা হয়। 

মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে মালদ্বীপের সংসদ সদস্য মিকাইল নাসিম বলেন, ‘ভারতের প্রতি প্রেসিডেন্টের বিদ্বেষ মেটাতে জনগণকে তাদের জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হবে না।’

মালদ্বীপে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ফয়সাল এক্সে লেখেন, ‘মাত্র কয়েক দিন আগে মুইজ্জু ডর্নিয়ার মোতায়েন করতে অস্বীকার করায় একটি আদ্দু পরিবার সমুদ্রে তাদের ছেলেকে হারিয়েছে। আজ, জিএ ভিলিংগিলি থেকে একটি ছোট ছেলে মারা গেছে, যেখানে ডর্নিয়ার দিয়ে তাকে বাঁচানো যেত। মুইজ্জুর ঔদ্ধত্যের জন্য আর কত প্রাণ বিসর্জন দিতে হবে?’

ভারত আর মালদ্বীপের মধ্যেকার বিরোধের মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটল। 

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারত ও মালদ্বীপের কূটনৈতিক সম্পর্কে বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, গত নভেম্বরে মোহামেদ মুইজ্জু প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়ে দ্বীপরাষ্ট্রটি ভারতের প্রতি শত্রুভাব প্রকাশ শুরু করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত