Ajker Patrika

স্বাধীনতা দিবসের আগে ‘জলদস্যু’ প্রতীক, কীসের ইঙ্গিত ইন্দোনেশিয়ায়

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০০: ৫০
ইন্দোনেশিয়া জুড়ে ‘জলি রজার’ খ্যাত এই জলদস্যু প্রতীক ছেয়ে গেছে। ছবি: এএফপি
ইন্দোনেশিয়া জুড়ে ‘জলি রজার’ খ্যাত এই জলদস্যু প্রতীক ছেয়ে গেছে। ছবি: এএফপি

স্বাধীনতার ৮০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপনের এক সপ্তাহ আগে এক ভিন্ন ধরনের পতাকায় ছেয়ে গেছে ইন্দোনেশিয়া। এই পতাকায় দেখা যাচ্ছে, জাপানি অ্যানিমে ‘ওয়ান পিস’–এর স্ট্র হ্যাট পরা জলদস্যু প্রতীক ‘জলি রজার’।

আগামী ১৭ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইন্দোনেশিয়ার সরকার যেখানে লাল–সাদা জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উদ্‌যাপনের আহ্বান জানিয়েছে, সেখানে এই জলদস্যু পতাকা ছড়িয়ে পড়ার রহস্য কী!

রোববার (১০ আগস্ট) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, এই প্রতীকের উৎস জনপ্রিয় জাপানি অ্যানিমে ওয়ান পিস ২০২৩ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছিল। এর কাহিনি হলো—একদল জলদস্যু একত্র হয়ে কর্তৃত্ববাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার অনেক তরুণ ও বিক্ষোভকারীর কাছে সরকারের সমালোচনা করার জন্য এটি তাই প্রতীক হয়ে উঠেছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ‘ডার্ক ইন্দোনেশিয়া’ নামে পরিচিত ছাত্র আন্দোলনের সময় সামাজিক মাধ্যমে এই ‘জলি রজার’ প্রতীকের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। বাজেট কাটছাঁট ও বেসামরিক জীবনে সামরিক প্রভাব বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন শহরে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিম জাভার বেকাসি জেলার ম্যুরাল শিল্পী কেমাস মোহাম্মদ ফিরদাউস জানান, তিনি দুর্নীতি ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই জলদস্যু প্রতীক আঁকছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক ইন্দোনেশীয় এই পতাকা তুলছেন। কারণ তারা চায় সরকার তাদের কথা শুনুক।’

মধ্য জাভার কারাঙ্গানইয়ার জেলার পতাকা ব্যবসায়ী দেনদি ক্রিস্তান্তো জানান, গত এক মাসে এই ‘জলি রজার’ পতাকার চাহিদা এত বেড়েছে যে, তিনি নতুন অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার দীর্ঘদিনের ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্যের সঙ্গে এই প্রবণতার মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। যেমন—১৯৯৮ সালে এই ধরনের গণবিক্ষোভের মাধ্যমে দেশটির প্রেসিডেন্ট সুহার্তোকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল।

একটি পতাকায় ‘জলি রজার’ প্রতীক। ছবি: এএফপি
একটি পতাকায় ‘জলি রজার’ প্রতীক। ছবি: এএফপি

তবে এই প্রতীকের বিস্তার সরকারের দৃষ্টি এড়ায়নি। সংসদের উপ-স্পিকার একে বিভাজনমূলক বলে মন্তব্য করেছেন। আরেকজন আইনপ্রণেতা এটিকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহের কাছাকাছি’ বলে অভিহিত করেছেন। পূর্ব জাভায় কর্তৃপক্ষ কয়েকটি ‘জলি রজার’ পতাকা জব্দও করেছে। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই ধরনের পদক্ষেপকে ‘অতিরিক্ত’ বলে সমালোচনা করেছে।

ম্যুরাল শিল্পী কেমাসও সরকারি পদক্ষেপের সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, ‘এটা শুধু শিল্প, দেশকে বিভক্ত করার কিছু নয়।’

এদিকে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ানতোর দপ্তর জানিয়েছে, পতাকা জব্দের নির্দেশ তারা দেয়নি। তবে দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রী বুদি গুনাওয়ান সতর্ক করেছেন—স্বাধীনতা দিবসের আগে জলদস্যু পতাকা ওড়ানো অপরাধ এবং জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান। তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতীকের সুরক্ষায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে মুলাওয়ারম্যান ইউনিভার্সিটির ছাত্র ফারহান রিজকুল্লাহ মিডিয়ামে লিখেছেন, ‘এটা তো শুধু লুফির স্ট্র হ্যাট পরা হাসিমুখ খুলি—একটি প্রিয় কার্টুন প্রতীক, অথচ সরকার একে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে দেখছে।’

জাকার্তা স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানী উবেদিল্লাহ বাদরুন মনে করেন, সরকারকে জনগণের কথা শোনা উচিত। তিনি বলেন, ‘জনসমক্ষে কিংবা সামাজিক মাধ্যমে যে কোনো প্রতীক বড় আকারে দেখা দিলে তা আসলে নাগরিকদের বক্তব্য প্রকাশের মাধ্যম হয়ে ওঠে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালার সঙ্গে শত্রুতা মুহাম্মদ ইউনূসের, আমি ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’: টিউলিপ সিদ্দিক

এনসিপি নেতার বাড়িতে কাফনের কাপড়, চিরকুটে লেখা—‘প্রস্তুত হ রাজাকার’

৪০ পুলিশ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার, অর্থ ফেরতের নির্দেশ

যাচ্ছিলেন বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে, গণপিটুনিতে প্রাণ হারালেন জামাই-শ্বশুর

গণশুনানিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি ক্ষোভ দেখালেন মৎস্যচাষি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত