Ajker Patrika

নেপালে রাজতন্ত্র ও হিন্দু রাষ্ট্রের দাবিতে বিক্ষোভের পেছনে কারা

অনলাইন ডেস্ক
রাজতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে। ছবি: এএফপি
রাজতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে। ছবি: এএফপি

নেপালের কাঠমান্ডুতে রাজতন্ত্র পুনর্বহাল ও নেপালকে আবার হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বিক্ষোভকারী ও একজন সাংবাদিক রয়েছেন। গতকাল শুক্রবার এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর নেপাল সরকার রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় কারফিউ জারি করে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে।

কয়েক দশক ধরে নেপালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। দুর্বল কোয়ালিশন সরকার কয়েক মাসের বেশি টিকতে পারছে না এবং উচ্চপদস্থ রাজনীতিকেরা দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছেন। টালমাটাল এই রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের ক্ষোভ ক্রমাগত বাড়ছে, যা রাজতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে ক্রমশ উসকে দিচ্ছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, হাজারো রাজতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারী গতকাল কাঠমান্ডুতে জমায়েত হয়ে ২০০৮ সালে বিলুপ্ত হওয়া হিন্দু রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবি তোলেন। তাঁরা দেশটিকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পরিবর্তে আবার হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি জানান। এ সময় প্রজাতন্ত্রপন্থী ও গণতন্ত্রকামী গোষ্ঠীগুলোর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদও অনুষ্ঠিত হয়।

তবে বিক্ষোভ চলাকালে রাজতন্ত্রপন্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা প্রথমে পাথর নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে এবং ফাঁকা গুলি করে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর ও কিছু ভবনে অগ্নিসংযোগ করেন। বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়সহ একটি প্রভাবশালী সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের অফিসেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

পুলিশের মুখপাত্র শেখর খনাল জানান, এ পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। এরপরই তাঁরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

এদিকে রবি শ্রেষ্ঠা নামের একজন বিক্ষোভকারী দাবি করেন, ‘পুলিশই প্রথম আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা এখনোই রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবি করছি না, বরং রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানটির পুনর্বহাল চাইছি। পুলিশের দমননীতিই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গেছে।’

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি মন্ত্রিসভা বৈঠক ডেকেছেন। রাজতন্ত্র পুনর্বহাল কমিটি একটি বিবৃতিতে জানায়, তারা ‘সাংবিধানিক রাজতন্ত্র’ ফিরিয়ে আনার দাবি করছে, যা গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে সহাবস্থান করবে এবং রাজনীতির ঊর্ধ্বে একটি ‘পিতৃসুলভ ভূমিকা’ পালন করবে।

অনেকে বলছেন, এটি ২০২৩ সালের পর নেপালে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
অনেকে বলছেন, এটি ২০২৩ সালের পর নেপালে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে নেপালের তৎকালীন রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বড় ভাই বীরেন্দ্র নিহত হওয়ার পর ওই বছর রাজা হিসেবে জ্ঞানেন্দ্রর অভিষেক হয়। ৭৭ বছর বয়সী জ্ঞানেন্দ্র ২০০৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তখন তাঁর নির্বাহী ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না।

তবে ২০০৫ সালে জ্ঞানেন্দ্র পুরোপুরিভাবে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সরকার ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের কারাগারে পাঠান। এরপর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশ শাসনের কাজে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেন।

তাঁর এসব পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে রাজা জ্ঞানেন্দ্রর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। একপর্যায়ে ২০০৬ সালে তিনি একটি বহুদলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। মাওবাদীদের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে সেই সরকার। এর মধ্য দিয়ে এক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান হয়।

২০০৮ সালে প্রায় ২৪০ বছরের পুরোনো হিন্দু রাজতন্ত্রকে বিলুপ্ত করার বিষয়ে দেশটির পার্লামেন্টে ভোট হয়। ভোটাভুটিতে রাজতন্ত্র বিলোপের পক্ষে রায় এলে রাজা জ্ঞানেন্দ্র পদত্যাগ করেন। এরপর নেপালে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

২০০৬ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্তির আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঝাপার বাসিন্দা সুনিতা চুড়াল এখন রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছি এই বিশ্বাসে নয় যে রাজা ফিরে এসে সব ঠিক করবেন, বরং দেশে দুর্নীতি ও অবক্ষয় যেভাবে বেড়েছে এবং আমাদের সন্তানদের কীভাবে বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য করা হচ্ছে, তা দেখে। আমি এতটাই হতাশ হয়েছি যে রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।’

৯ মার্চ কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানাতে দশ হাজারের বেশি সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরা ‘আমাদের রাজাকে ফিরিয়ে আনো’ স্লোগান দিচ্ছিলেন। অনেকে বলছেন, এটি ২০২৩ সালের পর নেপালে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত