Ajker Patrika

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: ভোগান্তির শেষ নেই সীমান্তবাসী সাধারণ মানুষের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ মে ২০২৫, ২০: ১৭
জিন্নাহ বিমানবন্দরে অপেক্ষমান যাত্রীরা। ছবি: এএফপি
জিন্নাহ বিমানবন্দরে অপেক্ষমান যাত্রীরা। ছবি: এএফপি

দুই সপ্তাহ ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা চলছিল, তা এবার চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানে সরাসরি হামলা চালিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী। সীমান্তে জবাব দিয়েছে পাকিস্তানও। ফলে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সেটিই সত্যি হলো।

দুই দেশের সংঘাতে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী দুপক্ষেরই বেসামরিক নাগরিকেরা। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভারতের হামলায় পাকিস্তানে নিহত হয়েছেন ২৬ বেসামরিক নাগরিক, আর সীমান্তে পাকিস্তানের ভারী গোলাবর্ষণে ভারতে প্রাণহানি ১০।

গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার পর থেকে আতঙ্কিত দুদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দারা। গতকালের হামলার পর তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীর হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বড় যুদ্ধের আশঙ্কা করছিল সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। আগে থেকে তাই অতিরিক্ত খাবার মজুত করে রাখছিল তারা। এমনকি বাংকারও তৈরি করে রেখেছে কেউ কেউ।

দ্য গার্ডিয়ানকে হামলার মুহূর্তের বিবরণ দিয়েছেন স্থানীয়রা। এক বাসিন্দা বলেন, রাত ১২টার পর থেকে যুদ্ধবিমানের গর্জন শোনা যাচ্ছিল। এরপর রাত ২টার দিকে বজ্রপাতের মতো বিকট আওয়াজ শুরু হয়। বাইরে তাকিয়ে দেখি আগুনের বিশাল গোলা।

মধ্যরাতে এই হামলার পর কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় দুপক্ষের সেনাদের মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি। ভারতের কুপওয়ারা, পুঞ্চ ও রাজৌরি জেলার অনেক গ্রামে আঘাত হানে মর্টার শেল। নিরাপত্তাজনিত শঙ্কায় বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে অঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা। কাশ্মীরের স্থানীয় প্রশাসন জানায়, সীমান্তের কাছে থাকা অনেক বাসিন্দাকে তারা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে।

চৌকিবাল এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদ আহমাদ বলেন, ‘পাকিস্তানের হামলা শুরু হলে আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকটি আর্টিলারি শেল এসে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে এতে আতঙ্কিত হয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে বাসিন্দারা। পুরো এলাকায় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। জীবন বাঁচাতে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেছে অনেকে। সকালে গোলাগুলি বন্ধ হলেও এখনো আতঙ্ক কাটেনি। আর কর্তৃপক্ষও এখনই বাড়ি না ফেরার পরামর্শ দিচ্ছে।’

সীমান্তের ওপারে, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের বাসিন্দারাও জানান একই রকম অভিজ্ঞতার কথা। নীলম উপত্যকার বাসিন্দা জাওয়াদ আহমেদ পারাস বলেন, ‘কোনো ধরনের পূর্বসতর্কতা ছাড়াই হামলা চালিয়েছে ভারত। সারা রাত আতঙ্কে দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি কেউ। গত দুই দশকে এমন তীব্র গোলাগুলি আমরা দেখিনি।’ কোটলি জেলার বাসিন্দা খিজর আব্বাস বলেন, ‘এটা যেন সরাসরি সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে যুদ্ধ ঘোষণা। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কি স্বাভাবিক থাকতে পারে!’

পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে প্রথম হামলা হয় পাহাড়চূড়ার বিলাল মসজিদে। সেখানকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ওয়াহিদ বলেন, ‘আমি গভীর ঘুমে ছিলাম, যখন প্রথম বিস্ফোরণে আমার ঘর কেঁপে ওঠে, আমি দৌড়ে বাইরে বের হই, দেখি আশপাশের সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরও ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ে, চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’

অবশ্য আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন এই এলাকার বাসিন্দারা। দ্য গার্ডিয়ানকে তাঁরা বলেন, কাশ্মীর হত্যাকাণ্ডের পরই দুই মাসের খাবার মজুত করে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। অন্তত ১০ দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বহু মাদ্রাসা। নিজ উদ্যোগে বাংকার তৈরি করেছে বাসিন্দারা, এমনকি কংক্রিটের প্রলেপ দিয়ে আরও মজবুত করা হয়েছে সেগুলো।

যদিও ভারত দাবি করছে, তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু কেবল সন্ত্রাসীদের আস্তানা। কিন্তু হামলায় নিহতদের সবাই বেসামরিক নাগরিক বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।

এ ছাড়া চলমান সংকটের কারণে বন্ধ করা হয়েছে করাচির জিন্নাহ বিমানবন্দর। আকস্মিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

এদিকে ভারতের হামলায় পাকিস্তানের অন্যতম পানিসম্পদ অবকাঠামো—নীলম ঝিলম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে নীলম নদীর তীরে নুসিরি বাঁধের কাছে অবস্থিত প্রকল্পের কপাট লক্ষ্য করে চালানো হয় হামলা। হামলায় ডেস্যান্ডার ইউনিটে অবস্থিত ইনটেক গেট এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম পিটিভিকে দেশটির একটি নিরাপত্তা সূত্র বলেছে, এই ধরনের সংবেদনশীল অবকাঠামোর ওপর হামলা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। জলসম্পদ অবকাঠামোকে যুদ্ধের বাইরে রাখা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের একটি মৌলিক নীতি বলেও উল্লেখ করে ওই সূত্র। এদিকে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, এ ধরনের স্থাপনায় হামলা মানবিক বিপর্যয় ও পরিবেশগত বিপদ ডেকে আনতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ভারতের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্তি বলেছেন, ‘২০১৯ সালের সংকটকেও ছাড়িয়ে গেছে ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনা। দুই দেশের মানুষদের মধ্যে আবেগ এখন তুঙ্গে, কিন্তু এই আবেগ সংঘাতকে কেবল আরও ঘনীভূত করবে। যার পরিণাম ভোগ করতে হবে সাধারণ মানুষকে। দুই পক্ষেরই উচিত তাৎক্ষণিকভাবে হামলা বন্ধ করে কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোঁজা।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কয়েক প্রজন্মকে ভোগাবে গাজার স্বাস্থ্য বিপর্যয়: ডব্লিউএইচও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষের চাহিদা মোকাবিলায় সেখানে ব্যাপক পরিমাণে সহায়তা পৌঁছানো জরুরি বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষের চাহিদা মোকাবিলায় সেখানে ব্যাপক পরিমাণে সহায়তা পৌঁছানো জরুরি বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

ফিলিস্তিনের গাজায় এমন এক স্বাস্থ্য বিপর্যয় চলছে, যার প্রভাব থাকতে পারে ‘আগামী কয়েক প্রজন্ম ধরে’। এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস।

বিবিসি রেডিও ৪-এর টুডে অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, গাজার জনগণের চাহিদা মোকাবিলায় এখন ব্যাপক পরিমাণে সহায়তা পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। হামাসের সঙ্গে ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় চিকিৎসাসামগ্রীসহ অন্যান্য সহায়তা প্রবেশের অনুমতি কিছুটা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। তবে এসব সহায়তা গাজার ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার ‘অনেক নিচে’ বলে মন্তব্য করেন ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক।

তাঁর এ মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে, যখন গত শনি ও রোববার গাজায় নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। হোয়াইট হাউস যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে বর্ণনা করেছে; যার মধ্যে গাজায় সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো এবং উভয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া তা বণ্টনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তেদরোস যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানালেও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গাজায় সহায়তার প্রবাহ প্রত্যাশার তুলনায় বেশ কম।

মাঠের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক বলেন, গাজার মানুষ এখন দুর্ভিক্ষ, আঘাত, ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং পানি ও পয়োনিষ্কাশন অবকাঠামো ধ্বংসের ফলে সৃষ্ট রোগের প্রাদুর্ভাবের সম্মুখীন। এর ওপরে আছে গাজায় মানবিক সহায়তার সীমিত প্রবেশাধিকার। সবকিছু মিলে তৈরি হয়েছে এক মারাত্মক সংমিশ্রণ, যা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ, প্রায় বর্ণনাতীত করে তুলেছে।

গাজার দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তেদরোস বলেন, দুর্ভিক্ষের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের ভয়াবহ সংকট যুক্ত হলে এটি এমন এক সংকটে পরিণত হয়, যার প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বহন করতে হবে।

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএর প্রধান টম ফ্লেচার এ সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন, সহায়তা সংস্থাগুলো ‘অনাহার সংকট’ সামলাতে কিছুটা অগ্রগতি করেছে। তবে আরও সহায়তা দরকার।

গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানায়, ১০ অক্টোবরের পর থেকে ৬ হাজার ৭০০ টনের বেশি খাদ্যবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, কিন্তু এটি এখনো তাদের নির্ধারিত দৈনিক ২ হাজার টনের লক্ষ্যের অনেক নিচে।

ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক বলেন, গাজায় প্রতিদিন ৬০০টি সহায়তাবাহী ট্রাক প্রবেশ করা দরকার, কিন্তু বাস্তবে দৈনিক গড়ে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০টি ট্রাক যাচ্ছে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তেদরোস বলেন, গাজায় মানবিক সহায়তাকে চলমান সংঘাত থেকে যেন আলাদা রাখা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ল্যুভর জাদুঘর থেকে চুরি হওয়া গয়নার মূল্য ১০২ মিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ০৭
ফ্রান্সের প্যারিসে বিশ্ববিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে চুরি হওয়া গয়না। ছবি: এএফপি
ফ্রান্সের প্যারিসে বিশ্ববিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে চুরি হওয়া গয়না। ছবি: এএফপি

ফ্রান্সের প্যারিসে বিশ্ববিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে চুরি হওয়া গয়নাগুলোর মূল্য ১০২ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ হাজার ৪৬০ কোটি ২৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা), জানিয়েছেন দেশটির একজন প্রসিকিউটর। মিউজিয়ামের কিউরেটরের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানান তিনি।

আরটিএল রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রসিকিউটর লরা বেকো জানান, চুরি যাওয়া অঙ্কটি বিশাল। তবে শুধু অর্থমূল্যই নয়, এসব গয়না ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে অমূল্য।

প্রসিকিউটর বেকো বলেন, এসব গয়নার মূল্য ঘোষণা করা হলো এই ভেবে যে মূল্য জানলে চোরেরা আশা করছি গয়নাগুলো ভাঙা বা নষ্ট করার আগে দ্বিতীয়বার ভাববে।

তিনি আরও বলেন, এসব গয়না গলানোর বা ভাঙার চিন্তা করাটা খুবই খারাপ হবে। তবে গয়না নিজেদের কাছে রাখা তাদের জন্য সহজ হবে না।

চুরি হওয়া গয়নাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৮১০ সালে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের (প্রথম নেপোলিয়ন) দ্বিতীয় স্ত্রী মারি-লুইজকে বিয়ে করার সময় উপহার দেওয়া একটি দুর্লভ পান্না হার। এই হারে ৩২টি পান্না ও ১ হাজার ১৩৮টি হীরা ছিল। একই সেটের এক জোড়া কানের দুলও চুরি হয়েছে।

আরেকটি চুরি হওয়া গয়না হলো সম্রাজ্ঞী ইউজেনির (তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী) একটি টায়রা। এতে ২১২টি মুক্তা ও প্রায় ৩ হাজার হীরা বসানো ছিল। এ ছাড়া ২ হাজার ৪০০ হীরায় সাজানো একটি বেল্ট এবং ১৮৫৫ সালের একটি সাদা হীরার ব্রোচও চুরি হয়েছে।

এ ছাড়া ফ্রান্সের শেষ রানি মেরি-অমেলির একটি নীলকান্তমণির টায়রাও চুরি হয়েছে। এই টায়রায় ছিল ২৪টি নীলকান্তমণি ও ১ হাজার ৮৩টি হীরা। টায়রাটির সেট হিসেবে থাকা একটি হার এবং এক জোড়া দুল থেকে একটি দুলও নিয়ে গেছে চোরেরা।

মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যে ‘চেরি পিকার’ (ট্রাকের ওপর বসানো একধরনের হাইড্রোলিক মই) ও ‘অ্যাঙ্গেল গ্রাইন্ডার’ ব্যবহার করে জাদুঘরের জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে এই দুধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়। চোরেরা ল্যুভরের বিখ্যাত ‘অ্যাপোলো গ্যালারি’-তে ঢুকে পড়েছিল বলে জানান ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লরঁ নিউনে। তিনি বলেন, ‘এটি নিঃসন্দেহ যে চোরেরা আগেই জাদুঘরটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।’

চুরির ঘটনার পর সম্রাজ্ঞী ইউজেনির একটি রাজমুকুট ল্যুভর মিউজিয়ামের বাইরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় এটি ফেলে রেখে যায় চোরেরা। ৫৬টি পান্না ও ১ হাজার ৩৫৪টি হীরায় অলংকৃত এই রাজমুকুট এখন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, যত দ্রুত সম্ভব গয়নাগুলো উদ্ধার না করা গেলে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে। এগুলোতে থাকা মূল্যবান ধাতু ও রত্ন ভেঙে দেশের বাইরে পাচার করার আশঙ্কা রয়েছে।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে প্যারিসের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে সোনার রেপ্লিকা চুরি হয় এবং লিমোজের এক জাদুঘর থেকে ৬৫ লাখ ইউরো মূল্যের পোর্সেলিন হারিয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উগান্ডায় বাস-লরি-প্রাইভেট কার চতুর্মুখী সংঘর্ষ, নিহত ৪৬

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৪৩
উগান্ডায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত
উগান্ডায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

উগান্ডার এক প্রধান মহাসড়কে একাধিক যানবাহনের সংঘর্ষে অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ। প্রথমে পুলিশ মৃতের সংখ্যা ৬৩ জানিয়েছিল। পরে তারা সেই সংখ্যা কমিয়ে ৪৬ করে জানায় যে, আগের হিসেবে কয়েকজন অচেতন ব্যক্তিকেও মৃত হিসেবে ধরা হয়েছিল; তারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, উগান্ডা পুলিশ জানিয়েছে, রাজধানী কাম্পালা-গুলু মহাসড়কে স্থানীয় সময় রাত ১২টা ১৫ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুটি যাত্রীবাহী বাস বিপরীত দিক থেকে আসার সময় দুটি যান—একটি লরি ও একটি প্রাইভেট কার ওভারটেক করতে গিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

তাদের মধ্যে একটি বাস সংঘর্ষ এড়ানোর চেষ্টা করলেও উল্টো সামনাসামনি সংঘর্ষ হয়, যা পরে একের পর এক গাড়ি দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এতে অন্যান্য যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। পুলিশ জানায়, নিহতদের পাশাপাশি দুর্ঘটনায় আরও বহু যাত্রী আহত হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তে একটি টিম গঠন করা হয়েছে।

আহতদের পশ্চিমাঞ্চলীয় কিরিয়ানডোঙ্গো শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, তারা স্বাস্থ্য ও জরুরি সেবাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে সঠিক তথ্য যাচাই করছে এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করবে।

আঞ্চলিক পুলিশ মুখপাত্র জুলিয়াস হাকিজা জানান, দুর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটে একটি বাসের ওভারটেক করার চেষ্টা থেকে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘ওই বাসটি বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসের সঙ্গে সরাসরি মুখোমুখি ধাক্কা খায়।’ তিনি আরও জানান, মোট চারটি গাড়ি এ দুর্ঘটনায় পতিত হয়।

কাম্পালা (দক্ষিণ) থেকে গুলু (উত্তর) পর্যন্ত মহাসড়কটি উগান্ডার সবচেয়ে ব্যস্ত সড়কগুলোর একটি। দুর্ঘটনার পর পুলিশ চালকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে, ‘অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে ওভারটেক করা বা বেপরোয়া চালানো থেকে বিরত থাকুন।’ তাদের ভাষায়, ‘এ ধরনের বিপজ্জনক ওভারটেক করাই দেশটির সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর একটি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুসলিম অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে কট্টরপন্থীদের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাজ্যের যেকোনো স্থানের তুলনায় টাওয়ার হ্যামলেটসে মুসলিম অধিবাসী বেশি। ছবি: বিবিসি।
যুক্তরাজ্যের যেকোনো স্থানের তুলনায় টাওয়ার হ্যামলেটসে মুসলিম অধিবাসী বেশি। ছবি: বিবিসি।

পূর্ব লন্ডনের মুসলিম অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে কট্টরপন্ত্রী ইউকে ইন্ডিপেনডেন্স পার্টি (ইউকিপ)-এর বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ মেট পুলিশ। এটি শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গুরুতর বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় এ সমাবেশ নিষিদ্ধ করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশন থেকে মিছিল হিসেবে প্রথমে ঘোষিত এই কর্মসূচিটি পরে একই এলাকায় একটি সমাবেশে রূপ দেওয়া হয়। ‘ম্যাস ডিপোর্টেশনস ট্যুর’ নামে এই বিক্ষোভটি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হওয়া একাধিক কর্মসূচির অংশ ছিল। আয়োজকেরা ‘ইসলামপন্থীদের কাছ থেকে হোয়াইটচ্যাপেল পুনরুদ্ধার করতে’ এই বিক্ষোভ কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছেন বলে দাবি করেন।

এই বিক্ষোভের জবাবে স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম এবং স্থানীয় কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে একটি পাল্টা বিক্ষোভও আয়োজনের কথা ছিল।

গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ জানায়, তারা পাবলিক অর্ডার অ্যাক্ট অনুযায়ী এমন শর্ত আরোপ করেছে, যার ফলে ইউকিপ হোয়াইটচ্যাপেল বা টাওয়ার হ্যামলেটস বরোর অন্য কোথাও বিক্ষোভ আয়োজন করতে পারবে না।

এদিকে ইউকিপের দাবি, পুলিশ ‘ইসলামপন্থীদের চাপে নতিস্বীকার করেছে’। হোয়াইটচ্যাপেলে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে।

ইউকিপ সামাজিক যোগাযোগ এক্স-এ জানায়, পুলিশ ‘ইসলামপন্থীদের চাপে নতিস্বীকার করেছে এবং এই শনিবার হোয়াইটচ্যাপেলে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে।’

কমান্ডার নিক জন বলেন, ‘টাওয়ার হ্যামলেটসে যুক্তরাজ্যের যেকোনো স্থানের তুলনায় মুসলিম অধিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখানে এ ধরনের কর্মসূচি স্থানীয়ভাবে বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে বিক্ষোভ হলে গুরুতর বিশৃঙ্খলার শঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরও জানান, ইউকিপ চাইলে অন্য কোথাও তাদের প্রতিবাদ আয়োজন করতে পারে, তবে কেউ যদি টাওয়ার হ্যামলেটসে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আটকের মুখোমুখি হতে পারে।

ইউকিপ বর্তমানে লন্ডনের অন্য এলাকায় বিক্ষোভ করার পরিকল্পনা করছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়।

ইউকিপের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ব্রিটিশ পুলিশ এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার চাপে নতিস্বীকার করছে, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। “মেট পুলিশের এখন ঠিক করতে হবে, পুলিশ কৌশলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন পুলিশ কমান্ডাররা, নাকি তথাকথিত ইসলামপন্থী ‘কমিউনিটি লিডার’রা।”

ইউকিপ আরও জানায়, ‘পুলিশের এই ঘোষণা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য আরও এক ধাক্কা, তবে এটি আমাদের দেশ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা থামাতে পারবে না।’

টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুৎফুর রহমান এক্স-এ বলেন, ‘ইউকিপের বিক্ষোভ আমাদের স্থানীয় সমাজে বড় ধরনের অস্থিরতা ও ভয় তৈরি করত এবং ঘৃণা ও পক্ষপাত ছড়িয়ে দিত। আমরা শনিবার হোয়াইটচ্যাপেলে আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল আয়োজন করব, যাতে আমাদের বৈচিত্র্য ও ঐক্য উদযাপন করা যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত