Ajker Patrika

ভয়াবহ হুমকির মুখে রোহিঙ্গারা, আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান অ্যামনেস্টির

আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৭: ১৮
ভয়াবহ হুমকির মুখে রোহিঙ্গারা, আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান অ্যামনেস্টির

মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালের পর থেকেই ভয়াবহ হুমকির মুখে আছেন। এরপর, ২০২১ সালে দেশটিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর তাদের দুর্দশা আরও বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ, রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি ও জান্তাবাহিনীর মধ্যকার লড়াইয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা আরও বেড়েছে। সম্প্রতি এই দুই বাহিনীর মধ্যকার লড়াইয়ে হাজারো রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

তাদের অনেকেই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সদ্য আগত এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সহায়তা জরুরিভাবে প্রয়োজন। আর এই প্রয়োজন মেটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, ‘আবারও, রোহিঙ্গা জনগণকে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে এবং মেরে ফেলা হচ্ছে। বিষয়টি আবারও তাদের ২০১৭ সালের দেশত্যাগের ঘটনাকে দুঃখজনকভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। আমরা এমন লোকদের সঙ্গে দেখা করেছি যারা আমাদের বলেছে, তারা মিয়ানমারে পালিয়ে যাওয়ার কারণে বাবা-মা, ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের হারিয়েছেন। যারা ভাগ্যবান, তারা বাংলাদেশে আসতে পেরেছেন। কিন্তু তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার, ঘুমানোর উপযুক্ত জায়গা, এমনকি নিজেদের কাপড়ও নেই।’

গত বছরের নভেম্বরে রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরও দুই গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে জান্তাবাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে। এরই মধ্যে, আরাকান আর্মি অঞ্চলটির বড় একটি অংশই দখল করে নিয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা কেবল জান্তাবাহিনীর হামলার মুখোমুখি হলেও এবার তারা আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনী উভয়েরই আক্রমণের শিকার হচ্ছে।

অ্যামনেস্টি অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ রাখাইনের সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাচ্ছে। অন্য দিকে যারা বাংলাদেশ পৌঁছেছেন তারা প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও পরিষেবার ব্যাপক ঘাটতির কথা জানিয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে অ্যামনেস্টি ২২ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেয়। যারা সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

সদ্য আগতরা জানিয়েছে, আরাকান আর্মি বেআইনিভাবে রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে, তাদের বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে এবং তাদের আক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলেছে। জান্তাবাহিনীও একই ধরনের আচরণ করছে তাদের সঙ্গে। সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গাই শিশুসহ ডুবে মারা গেছে।

রোহিঙ্গারা অ্যামনেস্টিকে জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আতঙ্কেও ছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দেখতে পেয়েছে, বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়েছে। যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কারণ, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকিতে রয়েছে এমন দেশে কাউকে ফেরত বা স্থানান্তর করা নিষিদ্ধ কর।

 ৩৯ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেন, তিনি গত ৫ আগস্ট তাঁর পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে মংডু থেকে পালিয়ে যান। ৫ আগস্ট ভোরে তাদের নৌকাটি বাংলাদেশের উপকূলের কাছে ছিল। স্থানীয়রা তাদের সাহায্য করতে চাইলেও বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষীরা তাদের বাধা দেয়।

ওই ব্যক্তি বলেন, ‘সীমান্ত রক্ষীরা কাছাকাছি ছিল, কিন্তু তারা আমাদের সাহায্য করেনি।’ তিনি আরও জানান, তারপরও তিনি অন্য এক জায়গা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং সৈকতে ঘুম থেকে উঠে তীরের কাছে ভেসে আসা এক মৃতদেহ দেখতে পান। পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে, সেগুলো তাঁর ছয় সন্তানের লাশ। যাদের বয়স ২-১৫ বছরের মধ্যে। তারা ডুবে গিয়েছিল। তিনি জানান, তাঁর বোনও তাঁর ছয় সন্তানকে হারিয়েছে।

অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, ‘মানুষকে এমন একটি দেশে ফেরত পাঠানো ঠিক নয়, যেখানে তারা মারা যাওয়ার সত্যিকারে ঝুঁকিতে আছেন। এটি কেবল আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনই নয়, এর ফলে শরণার্থীরা শনাক্তকরণ এড়াতে আরও বেশি ঝুঁকি নিতে বাধ্য করে।’

বাংলাদেশের শরণার্থীশিবিরে নতুন আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সেখানে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বদান্যতায় জীবনযাপন করছে। সদ্য আগতরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, তারা প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে নিবন্ধন করতে পারছেন না। ফলস্বরূপ, অনেকে না খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন এবং চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হলেও নির্বাসনের ভয়ে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।

অ্যামনেস্টির কথা বলা রোহিঙ্গারা শরণার্থীশিবিরে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কথাও উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, প্রধানত দুটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপের উপস্থিতির কারণে—রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির কারণে এমনটা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটা বড় অংশই তৃতীয় একটি দেশে পুনর্বাসনের আশা করছেন।

অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও মানবিক ত্রাণ সংস্থাগুলোকে অবশ্যই একযোগে কাজ করতে হবে যাতে মানুষ খাদ্য, পর্যাপ্ত আশ্রয় এবং চিকিৎসা পরিষেবার মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো পেতে পারে। বাংলাদেশকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, দেশটি জোরপূর্বক রোহিঙ্গা জনগণকে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের দিকে ফিরিয়ে দেবে। শরণার্থীশিবিরে বসবাসকারীদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তহবিল ও সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’

এদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জোর করে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলেছেন, সীমান্তরক্ষীরা সীমান্ত অতিক্রম করার রোহিঙ্গাদের বাধা দিচ্ছে তবে ফেরত পাঠাচ্ছে না। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ নতুন আর কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার মতো জায়গায় নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক

আনিসুলের জাপা ও মঞ্জুর জেপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঘোষণা

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লিব লিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

আজকের রাশিফল: অনলাইনে বিতর্কে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, অতি উত্তেজনা পেটে গ্যাস বাড়াবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫৯০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর এবার দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে বৈঠক হবে ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২৯ ডিসেম্বর হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসছেন। আজ সোমবার ইসরায়েলি সরকারের একজন মুখপাত্র বৈঠকের তারিখটি নিশ্চিত করেছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের প্রাথমিক ঘোষণা আসে। তবে আজ ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র শশ বেদ্রোসিয়ান অনলাইন ব্রিফিংয়ে বৈঠকের প্রধান আলোচ্যসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।

বৈঠকে নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প গাজার যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ এবং ভবিষ্যতের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবেন। এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েনের বিষয়টি নিয়েও কথা হবে।

গতকাল রোববার নেতানিয়াহু বলেছিলেন, বৈঠকের মূল লক্ষ্য হবে গাজায় হামাসের শাসনের অবসান করা এবং হামাস যেন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় দেওয়া ‘প্রতিশ্রুতি’ (নিরস্ত্রীকরণ) পূরণ করে, তা নিশ্চিত করা। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ ‘আরও কঠিন’ হবে।

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে প্রধানত ইসরায়েলি বন্দী ও ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনিদের বিনিময় এবং গাজার কিছু অংশ থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপের চুক্তিতে যুদ্ধপরবর্তী গাজা প্রশাসন নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা, যা একটি অত্যন্ত জটিল ও বহুলাংশে অমীমাংসিত বিষয়। এই ধাপে নেতৃত্ব, ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং আইএসএফ বাহিনীর ভূমিকা নির্ধারণ করা বাকি রয়েছে।

গত ১০ অক্টোবর থেকে মার্কিন মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী ৫৯০ বারের বেশি এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে জানা গেছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় অন্তত ৩৬০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর ফলে মৃতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে, বৈঠকটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে ইসরায়েলকে একটি নতুন নিরাপত্তা চুক্তি করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। গত সপ্তাহে তিনি সামাজিক মাধ্যমে ইসরায়েলকে সিরিয়ার সঙ্গে ‘শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ সংলাপের’ আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে সিরিয়ায় ইসরায়েলের বারবার অনুপ্রবেশ এবং বিমান হামলা সেই আলোচনাকে বহুলাংশে ব্যাহত করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক

আনিসুলের জাপা ও মঞ্জুর জেপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঘোষণা

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লিব লিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

আজকের রাশিফল: অনলাইনে বিতর্কে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, অতি উত্তেজনা পেটে গ্যাস বাড়াবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অস্ট্রেলিয়ায় তরুণীকে হত্যার পর ৪ বছর ভারতে লুকিয়ে ছিলেন ঘাতক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ঘাতক রাজবিন্দর সিং ও হত্যার শিকার টোইয়া কর্ডিঙ্গলি। ছবি: সংগৃহীত
ঘাতক রাজবিন্দর সিং ও হত্যার শিকার টোইয়া কর্ডিঙ্গলি। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে আলোচিত একটি হত্যা মামলায় সাবেক পুরুষ নার্স রাজবিন্দর সিংকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ৪১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ২০১৮ সালে টোইয়া কর্ডিঙ্গলি নামে ২৪ বছর বয়সী এক তরুণীকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। সোমবার জুরি বোর্ডের সদস্যরা তাঁকে দোষী ঘোষণা করলে আদালতে উপস্থিত মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বিবিসি জানিয়েছে, টোইয়া কর্ডিঙ্গলিকে অন্তত ২৬ বার ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। সেদিন বিকেলে তিনি তাঁর কুকুর নিয়ে সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। পরদিন সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়িতে অর্ধেক ঢেকে থাকা অবস্থায় মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেন তাঁর বাবা। কুইন্সল্যান্ডের কেয়ার্নস ও পোর্ট ডগলাস—এই দুই জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রের মাঝখানে অবস্থিত ওই সৈকতটি।

মামলার শুনানিতে আদালত জানান, কর্ডিঙ্গলিকে বারবার ছুরিকাঘাত করা হয় এবং তাঁর দেহ অগভীর বালুকাময় গর্তে ফেলে রাখা হয়—যেখানে তার বেঁচে থাকার কোনো আশাই ছিল না।

অভিযুক্ত রাজবিন্দর সেই সময়টিতে কুইন্সল্যান্ডের ইনিসফেইল এলাকায় বসবাস করতেন, যা হত্যার স্থান থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে। তদন্ত শুরু হওয়ার পরপরই পুলিশের সন্দেহ তাঁর ওপর গিয়ে পড়ে। তবে সেই সময়ই তিনি হঠাৎ অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। ফেলে রেখে যান তাঁর স্ত্রী, তিন সন্তান এবং বাবা-মাকে।

চার বছর ভারতে লুকিয়ে থাকার পর অবশেষে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অস্ট্রেলিয়ায়। গত মার্চে এই মামলাটির প্রথম বিচার প্রক্রিয়া জুরি বোর্ডের অমতজনিত কারণে স্থগিত হয়েছিল। দ্বিতীয় দফার বিচার শেষে এবার তাঁকে দোষী ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রসিকিউটররা মত দিয়েছেন, রাজবিন্দরের হঠাৎ দেশত্যাগই তাঁর অপরাধবোধের প্রমাণ। ফরেনসিক প্রমাণও তাঁকেই দোষী সাব্যস্ত করে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা একটি কাঠির ওপর পাওয়া ডিএনএ নমুনা অন্য কারও নয়, বরং রাজবিন্দরের হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ৩.৮ বিলিয়ন গুণ বেশি। এ ছাড়া কর্ডিঙ্গলির মোবাইল ফোনের গতিবিধি এবং সিংয়ের গাড়ির অবস্থান হত্যাকাণ্ডের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়।

টোইয়া কর্ডিঙ্গলি স্থানীয় স্বাস্থ্য পণ্যের দোকানে কাজ করতেন এবং পশু উদ্ধারকারী সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর কুইন্সল্যান্ড জুড়ে ব্যাপক শোক দেখা দেয়।

দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর রাজবিন্দর সিংকে আগামী মঙ্গলবার সাজা ঘোষণার জন্য আবার আদালতে হাজির করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক

আনিসুলের জাপা ও মঞ্জুর জেপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঘোষণা

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লিব লিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

আজকের রাশিফল: অনলাইনে বিতর্কে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, অতি উত্তেজনা পেটে গ্যাস বাড়াবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তান আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না—ইমরান খানকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় মুখপাত্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রণধীর জয়সওয়াল। ফাইল ছবি
রণধীর জয়সওয়াল। ফাইল ছবি

পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে কড়া মন্তব্য করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আজ সোমবার সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘গণতন্ত্র এবং পাকিস্তান একসঙ্গে যায় না।’ প্রতিবেশী দেশের গণতন্ত্রের অবস্থা, বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং সেখানে চলমান প্রতিবাদ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জয়সওয়াল এই মন্তব্য করেন।

ইমরান খানের বর্তমান অবস্থা ও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁকে নিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরীর মন্তব্য, নানান আলোচনার জন্ম দিয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিককাঠামো দুর্বল হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে জয়সওয়াল বলেন, ভারত সেখানকার সব ঘটনার ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।

জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের প্রতিটি ঘটনার ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখি। আপনি জানতে চেয়েছেন, পাকিস্তানের গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে কি না। আসলে গণতন্ত্র আর পাকিস্তান একসঙ্গে যায় না। এ বিষয়ে আমরা যত কম কথা বলব, ততই ভালো।’

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে জয়সওয়াল আফগান বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে সংঘর্ষের খবর আমরা দেখেছি। এতে বহু আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আমরা নিরপরাধ আফগান জনগণের ওপর এই ধরনের হামলার নিন্দা জানাই।’ ভারত আফগানিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে তাদের সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেন, এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

গত শুক্রবার কারাবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি’ হিসেবে আখ্যা দেন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী।

জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী দাবি করেন, ‘ইমরান খান সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রচার চালাচ্ছেন, বিদেশি শক্তির সঙ্গে সমন্বয় করছেন এবং নানা ভুল তথ্য ছড়িয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছেন।’ তাঁর ভাষ্য, পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতেই’ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন তিনি। এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘রাষ্ট্রের ওপরে কেউ নয়।’

ইমরান খানের নাম উল্লেখ না করে আইএসপিআর মহাপরিচালক বলেন, একজন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব—যাঁর নাম না নিলেও সবার জানা—নিজের অহংকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যে তিনি মনে করেন, ‘আমিই কিছু।’ এই বিভ্রান্তিকর মানসিকতার কারণেই তাঁর বয়ান ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিতে’ পরিণত হয়েছে।

এর আগে কারাগারে থাকা ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন তাঁর তিন বোন। এরপরই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারাগারে মারা গেছেন—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক

আনিসুলের জাপা ও মঞ্জুর জেপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঘোষণা

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লিব লিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

আজকের রাশিফল: অনলাইনে বিতর্কে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, অতি উত্তেজনা পেটে গ্যাস বাড়াবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের পর জাপানে সুনামি সতর্কতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০৯
ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সমুদ্রের ৩২ মাইল গভীরে। ছবি: জাপান টাইমস
ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সমুদ্রের ৩২ মাইল গভীরে। ছবি: জাপান টাইমস

জাপানের উত্তর উপকূলে আঘাত হেনেছে ৭.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প। এরপরই উপকূলীয় এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সময় সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে হোক্কাইডো অঞ্চলের উপকূল থেকে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) প্রাথমিক তথ্যে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সমুদ্রের ৩২ মাইল গভীরে, ৪১° উত্তর অক্ষাংশ ও ১৪২.৩° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের কাছাকাছি।

‘জাপান টাইমস’ সহ জাপানের অন্যান্য সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পরপরই উপকূলীয় এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সুনামির কারণে সমুদ্রতটে ঢেউয়ের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১ মিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। তবে প্রাথমিক পূর্বাভাসে ৩ মিটার উচ্চতার ঢেউয়ের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছিল।

তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। একইভাবে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা কাছাকাছি থাকা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি বলে জানানো হয়েছে।

এর আগে গত ৯ নভেম্বর উত্তর জাপানে আরও একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। সেই সময় উপকূলীয় এলাকায় স্বল্প সময়ের জন্য সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। ৬.৯ মাত্রার সেই ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৩ মিনিটে ইওয়াতে উপকূলে আঘাত হানে এবং প্রায় ২০ কিলোমিটার গভীর থেকে এর উৎপত্তি হয়। ওই ঘটনার পর বেশ কয়েকটি পরাঘাতও অনুভূত হয়েছিল।

নভেম্বরের ওই ভূমিকম্পে ওফুনাতো, মিয়াকো, কামাইশি, ওমিনাতো ও কুজিসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার উচ্চতার ক্ষুদ্র সুনামি ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছিল। সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়েছিল প্রায় তিন ঘণ্টা পর। তবে বিশেষজ্ঞরা আগেই জানান, ওই অঞ্চলে পরবর্তী এক সপ্তাহ পর্যন্ত শক্তিশালী পরাঘাত অনুভূত হতে পারে।

জাপান প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘রিং অব ফায়ার’-এ অবস্থিত হওয়ায় ভূমিকম্প প্রবণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রায়ই দেশটিতে ছোট-বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয় এবং বড় ধরনের কম্পনের ক্ষেত্রে সেখানে প্রায় সময়ই সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়।

সর্বশেষ ভূমিকম্পের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনগণকে সতর্ক থাকতে, প্রয়োজন হলে উঁচু স্থানে সরে যেতে এবং সরকারি ঘোষণার প্রতি নজর রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক

আনিসুলের জাপা ও মঞ্জুর জেপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঘোষণা

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লিব লিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

আজকের রাশিফল: অনলাইনে বিতর্কে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, অতি উত্তেজনা পেটে গ্যাস বাড়াবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত