Ajker Patrika

হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে মালয়েশিয়া: আনোয়ার ইব্রাহিম

আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৯: ৫৭
হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে মালয়েশিয়া: আনোয়ার ইব্রাহিম

মালয়েশিয়া হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং এই গোষ্ঠীকে কোনো ধরনের শাস্তি দেবে না। 

দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গতকাল মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার সংসদে এই ঘোষণা দেন।

হামাসের বিদেশি সমর্থকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মার্কিন আইনপ্রণেতাদের প্রস্তাবের জবাবে তিনি মালয়েশিয়ার এই অবস্থান জানান। আনোয়ার ইব্রাহিমকে উদ্ধৃত করে বিবিসির খবরে বলা হয়, মালয়েশিয়ার উচিত সর্বসম্মতিক্রমে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করা। 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিন ধরে দ্বিপক্ষীয় এবং ব্যাপক সমর্থন করা একটি দেশের জন্য রাজনৈতিকভাবেই এটাই সমীচীন। 

গত সপ্তাহে মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদের বিদেশি সমর্থকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে ভোট দেয়। এ বিষয়ে বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা মালয়েশিয়া সরকারের অবস্থান জানতে চান। 

আনোয়ার বলেন, ‘আমি এ ধরনের কোনো হুমকি মেনে নেব না। এই পদক্ষেপ একতরফা এবং অবৈধ, কারণ আমরা জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে কেবল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোকে স্বীকৃতি দিই।’

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। মালয়েশিয়া ইসরায়েলকে কূটনৈতিকভাবে কোনো স্বীকৃতি এখনো দেয়নি। এমনকি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের জন্য দ্বিরাষ্ট্রব্যবস্থা বাস্তবায়িত হওয়া ছাড়া কোনো স্বীকৃতি দেবে না বলে দেশটি ঘোষণা দিয়েছে। ফিলিস্তিনের ইস্যুবিষয়ক অনেক সম্মেলনই রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

৭৬ বছর বয়সী আনোয়ার তাঁর ছাত্রজীবন থেকেই ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে আসছেন। বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো মালয়েশিয়ায়ও গাজায় ইসরায়েলি হামলার জবাবে গণসমাবেশ ও প্রার্থনা সমাবেশের আয়োজন হচ্ছে।  

দেশটির কোনো কোনো অংশে হামাসের সমর্থনও দেখা গেছে। গত অক্টোবরের শেষে মালয়েশিয়ার বেশ কয়েকজন শিক্ষকের একটি ভিডিও টিকটকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁরা হামাস যোদ্ধাদের মতো পোশাক ও খেলনা রাইফেল হাতে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন।    

আনোয়ারের প্রতিদ্বন্দ্বী মাহাথির মোহাম্মদও ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে শক্তভাবে তাঁর সমর্থন জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে অন্যান্য দেশের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। 

সিঙ্গাপুরভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইএসইএএস-ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের গবেষক জুলিয়া লাউ ও ফ্রান্সিস হাচিনসন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মালয়েশিয়ায় ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ক্রমে বাড়ার এ সময়ে আনোয়ার দুর্বল কোনো দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে পারবেন না।  

এ ছাড়া মালয়েশিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ধীরে ধীরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্য সমর্থন লোপ পাচ্ছে। মালয়েশিয়ার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইলহাম সেন্টারের এক গবেষণা অনুসারে, মূল মালয়দের মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করে। এর বদলে তাঁর পক্ষে রয়েছে প্রায় ৮৮ শতাংশ চীনা ও ৮১ শতাংশ ভারতীয় জাতিগোষ্ঠী।  

ইসরায়েলের বিপক্ষে শক্তিশালী অবস্থান না নেওয়ার কারণে এর আগেও তিনি সমালোচিত হয়েছেন। ২০১২ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার উচিত ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষা করা, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের বৈধ স্বার্থরক্ষায়ও অটল হতে হবে। পরে তিনি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের কথা উল্লেখ করেন। 

তবে বর্তমানে গাজা-ইসরায়েল চলমান যুদ্ধে তিনি শক্ত অবস্থান নিচ্ছেন। হামাস যোদ্ধাদের শাস্তি প্রদানের পশ্চিমা চাপকে তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। আনোয়ার বলেন, হামাসকে গাজাবাসী নির্বাচিত করেছে। গত মাসে এক ফিলিস্তিনপন্থী সমাবেশে তিনি গাজায় হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করেন এবং একে ‘বিশ্বে বর্বরতার সর্বোচ্চ ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছেন। 

গতকাল মঙ্গলবার তিনি সংবাদমাধ্যমকে হামাস যোদ্ধাদের আফ্রিকার ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) সঙ্গে তুলনা করে তাদের জঙ্গিগোষ্ঠী বলে উল্লেখ না করতে আহ্বান জানান। এএনসির উদ্যোগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের সমাপ্তি ঘটেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত