Ajker Patrika

প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৫, ১০: ২২
রাশিয়ায় নিযুক্ত আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূত গুল হাসান হাসান রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে রুদেনকোর কাছে তাঁর পরিচয়পত্র পেশ করেছেন। ছবি: রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
রাশিয়ায় নিযুক্ত আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূত গুল হাসান হাসান রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে রুদেনকোর কাছে তাঁর পরিচয়পত্র পেশ করেছেন। ছবি: রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এটিকে ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কাবুলে রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনোভের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ মন্তব্য করেন। ঝিরনোভ আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ সরকারের পক্ষ থেকে ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানকে (তালেবান সরকার) স্বীকৃতির বিষয়টি মুত্তাকিকে জানান।

মুত্তাকি বলেন, এটি ইতিবাচক সম্পর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং গঠনমূলক সম্পর্কের এক নতুন পর্যায়, এই পরিবর্তন অন্যান্য দেশের জন্য ‘দৃষ্টান্ত’ হবে।

২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং বিনিয়োগের জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানের সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপ আমাদের দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিকাশে গতি দেবে।’

আফগানিস্তানের জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি এবং অবকাঠামো খাতে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা দেখছে রাশিয়া। এ ছাড়া, কাবুলকে সন্ত্রাসবাদ ও মাদক পাচারের হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে মস্কো।

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর আফগানিস্তানে যে কয়েকটি দেশ দূতাবাস বন্ধ করেনি, রাশিয়া সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। টেলিগ্রামে দূতাবাস জানিয়েছে, কাবুলের সঙ্গে সংলাপ সম্প্রসারণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০২২ সালে রাশিয়া প্রথম দেশ হিসেবে তালেবানের সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। সেই চুক্তিতে তারা আফগানিস্তানকে তেল, গ্যাস এবং গম সরবরাহ করতে সম্মত হয়।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাবুলের সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করার লক্ষ্যে চলতি বছরের এপ্রিলে তালেবানকে রাশিয়ার সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও তালেবানকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ‘মিত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এমনকি, ২০১৮ সাল থেকে তালেবানের প্রতিনিধিরা মস্কো সফর করে আসছেন।

যদিও দুই দেশের একটি জটিল ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায়। ৯ বছরব্যাপী যুদ্ধে ১৫ হাজার সোভিয়েত সেনার প্রাণহানি ঘটে। কাবুলে নিজেদের পক্ষের সরকার বসানোর প্রচেষ্টা সোভিয়েত ইউনিয়নকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করে ফেলে। সরাসরি মার্কিন সহায়তায় সেখানে গড়ে তোলা হয় সোভিয়েত বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম তালেবান। অবশেষে ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে সরে আসে।

এদিকে পশ্চিমা সরকার এবং মানবিক সংস্থাগুলো এখনো তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দা অব্যাহত রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নিবর্তনমূলক শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করছে। নারীদের শিক্ষা ও স্বাধীনতা কঠোরভাবে খর্ব করছে। পশ্চিমের অভিযোগ, তালেবান আইনগুলো ক্রমশ বিধিনিষেধমূলক হয়ে উঠেছে।

২০২১ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আফগানিস্তানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যার মধ্যে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ করা উল্লেখযোগ্য। এই অর্থ এখনো ফেরত পায়নি তালেবান সরকার।

চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান এবং পাকিস্তান কাবুলে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করলেও, প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও তারা এখনো তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি কূটনৈতিক পর্যায়ে বৈঠক ও আলাপ আলোচনায় চালালেও ভারত তালেবান সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করে না। একমাত্র দেশ হিসেবে রাশিয়া তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ: বরখাস্তের দণ্ড বদলে বাধ্যতামূলক অবসর

ভারত যে পারমাণবিক বোমা ফেলেনি, পাকিস্তানের বুঝতে সময় লেগেছে ৩০-৪৫ সেকেন্ড

‘ভিআইপি রুম না পেয়ে’ হোটেল বারে ভাঙচুর, যুবদলের পদ হারালেন মনির হোসেন

বিএনপি নেতার ছেলের নেতৃত্বে হামলার ৩৫ দিন পর মৃত্যু, লাশ নিয়ে বিক্ষোভ

জাপার অফিস ভাঙচুর: গণঅধিকার সভাপতি নুরসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত