Ajker Patrika

ভারত কোনো সেক্যুলার দেশ নয়: উত্তর প্রদেশের হিন্দু সংগঠন

অনলাইন ডেস্ক
এনডিটিভির সঙ্গে কথা বলা হিন্দু সংগঠনের সেই সদস্য। ছবি: এনডিটিভি
এনডিটিভির সঙ্গে কথা বলা হিন্দু সংগঠনের সেই সদস্য। ছবি: এনডিটিভি

প্রতিবছর আষাঢ় মাস এলে এক তীর্থযাত্রায় অংশ নেন ভারতের শিবভক্তরা। এ সময় তাঁরা উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হরিদ্বার, গোমুখ, গঙ্গোত্রী শহর, বিহারের সুলতানগঞ্জের অজগৈবিনাথ মন্দিরসহ বিভিন্ন পবিত্র স্থানে গিয়ে গঙ্গা নদীর জল সংগ্রহ করেন। সেই জল তাঁরা কাঁধে নিয়ে শত শত মাইল হাঁটেন। এরপর নিজ নিজ এলাকার শিবমন্দিরে সেই পবিত্র জল উৎসর্গ করেন এই ভক্তরা।

দেবতা শিবের ভক্তদের এই তীর্থযাত্রা কাঁওয়ার যাত্রা নামে পরিচিত।

এই যাত্রাপথে রয়েছে নানা ধরনের দোকান আর ধাবা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি মুসলমানেরাও এগুলোর মালিক। বছরের পর বছর ধরে তাঁরা এখানে দোকান-ধাবার ব্যবসা করে আসছেন। এত দিন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে গন্ডগোল বাধে এবার।

উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মুজাফ্ফরনগর শহরের ভেতর দিয়ে শিবভক্তদের কাঁওয়ার যাত্রার সময় এক হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা সেখানকার এক ধাবায় কাজ করা ব্যক্তিকে তাঁর ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করতে প্যান্ট খুলতে বলেন। এতে পুরো এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। বন্ধ হয়ে যায় ধাবাটি।

যাঁরা এই কাজ করেছেন, তাঁদের ভাষ্য, রাজ্যে এই যাত্রাকালে রাস্তার ধারের দোকান ও খাবারের দোকানগুলোতে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করার অধিকার তাঁদের রয়েছে।

এনডিটিভি বলছে, উত্তেজনার সূত্রপাত হয় যখন তোজাম্মুল নামের ওই মুসলমান ব্যক্তি হিন্দু সংগঠনটির সদস্যদের জেরার হাত থেকে বাঁচতে নিজেকে গোপাল বলে পরিচয় দেন। তিনি সত্যি বলছেন কি না—তা যাচাই করতে তাঁকে প্যান্ট খুলতে বলা হয়।

তোজাম্মুলের অভিযোগ, হিন্দু সংগঠনটির সদস্যরা তাঁর প্যান্ট টেনে নামিয়ে তাঁকে মারধর করেন।

এ ধরনের কাজ কেন করা হয়েছে—তা জানতে সংগঠনটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এনডিটিভি। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন তাঁরা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিলেন।

জবাবে সংগঠনটির এক সদস্য বলেন, ‘এমন প্রশ্ন করার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? আপনারা যদি আমাদের জায়গায় থাকতেন, তাহলে আপনারাও আধার কার্ড দেখতে চাইতেন। আজকাল মিডিয়ার লোকজন নিজেদের সেক্যুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) দেখানোর চেষ্টা করছে।’

ওই সদস্যকে তখন বলা হয়, সংবিধান স্পষ্টভাবে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। এরপর তাঁকে প্রশ্ন করা হয়—তিনি নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী চলবেন নাকি সংবিধানের নির্দেশনা মেনে চলবেন। তখন তিনি জবাব দেন, না, এই দেশ ধর্মনিরপেক্ষ নয়। এটা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেশ।’

কাঁওয়ার যাত্রাপথে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মুসলমানদের কাজ করার বিষয়েও আপত্তি জানান ওই সদস্য। তাঁর প্রশ্ন, ‘সনাতন ধর্মের দেব-দেবীদের ছবিসংবলিত বোর্ড দোকানে ঝুলাতে মুসলমানদের কে সার্টিফিকেট দিয়েছে?’

এ ঘটনার ঠিক আগের দিন কাঁওয়ার যাত্রাপথে থাকা সব দোকানকে বৈধ লাইসেন্স এবং এসব দোকানের মালিকের নাম স্পষ্টভাবে প্রদর্শনের নির্দেশ দেয় উত্তর প্রদেশ সরকার। যোগী আদিত্যনাথের সরকার এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাইও দেয়।

রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী ব্রজেশ পাঠক বলেন, যাত্রাপথে প্রতিটি ক্রেতার অধিকার রয়েছে জানার—তিনি কার কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনছেন।

তবে উত্তর প্রদেশ সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।

ওয়াইসি বলেন, ‘মুজাফ্ফরনগর বাইপাসের কাছে বহু হোটেল রয়েছে, যেগুলো বহু বছর ধরে আছে। কাঁওয়ার যাত্রা কি আজ থেকে ১০ বছর আগে শুরু হয়নি? তখন তো যাত্রা শান্তিপূর্ণভাবেই হতো। কোনো অশান্তি ছিল না। তাহলে এখন কেন এসব ঘটছে? এখন হোটেলমালিকদের কাছ থেকে আধার কার্ড চাওয়া হচ্ছে, দোকানদারদের প্যান্ট খুলতে বাধ্য করা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ: বরখাস্তের দণ্ড বদলে বাধ্যতামূলক অবসর

‘অপারেশন সিঁদুরে’ তিন শত্রুর মোকাবিলা করেছে ভারত, অন্য দেশের নাম জানালেন সেনা কর্মকর্তা

‘একটা মার্ডার করেছি, আরও ১০০টা মার্ডার করব’, ভিডিও ভাইরাল

মহাকাশে হারিয়ে গেল ৯ কোটি ডলারের স্যাটেলাইট, জলবায়ু গবেষণায় বড় ধাক্কা

ভুল করার পর জাদেজাকে কী বলে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশের আম্পায়ার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত