Ajker Patrika

তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক
তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত বৃহস্পতিবারের বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১৭০ এ পৌঁছেছে, যাদের মধ্যে ১৩ মার্কিন সেনা ও ৩ ব্রিটিশ নাগরিক ছাড়া বাকি সবাই আফগান বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ কয়েকশ আহতের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। 

ভয়াবহ এ আত্মঘাতী বোমা হামলার পর গত শুক্রবার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের পাকিস্তান সীমান্তের নানগারহর প্রদেশে ড্রোন হামলা চালানো হয়। এতে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ইসলামিক স্টেট খোরাশানের (আইএস-কে) অন্তত একজন সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানায় পেন্টাগন। 

পেন্টাগনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাথমিক তথ্য মতে আমরা সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করতে পেরেছি। তবে সাধারণ নাগরিকের হতাহতের কোনো খবর আমাদের জানা নেই। কিন্তু স্থানীয় সমাজের নেতা মালেক আদিব হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত তিনজন নিহত এবং আরও চারজন আহত হয়েছেন বলে জানান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে। 

বিবিসিসহ প্রায় সব কটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যের কোনো এক সামরিক ঘাঁটি থেকে এ ড্রোন হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে। এতে করে ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তানের মাটি ছাড়লেও ভিন্নভাবে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এতে তালেবানকে সতর্ক করার পাশাপাশি এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনাও প্রকাশ পেয়েছে। 

সম্প্রতি ঘুরেফিরে প্রশ্ন উঠছিল, ২০ বছর অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো আফগানিস্তান থেকে শূন্য হাতে বিদায় নিচ্ছে কী? কী তাদের পরিকল্পনা? অনেকে যে রকম ধারণা করছিলেন, সন্ত্রাসবাদ, মানবাধিকার, গণতন্ত্র বা ব্যক্তিস্বাধীনতাসহ ইত্যাদি বিষয়ে তালেবান নিজেদের প্রমাণ করতে না পারলে, তাদের সঙ্গে পশ্চিমারা বোধ হয় সম্পর্ক রাখবে না। কিন্তু সে ধারণা টিকছে না। স্বার্থ রক্ষার্থে যে কোনো উপায়ে আফগানিস্তানে নিজের হাজির রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। 

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি হামলার পর সাংবাদিকদের জানান, সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে আমরা তালেবানের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করছি। এটা আরও কিছু সম্ভাব্য হামলা বানচাল করতে সহায়তা করবে বলেও জানান তিনি। 

অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সাকি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের সাম্প্রতিক কথায়ও একই ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। কাবুল হামলার আগের দিন ব্লিনকেন বলেন, তালেবান যেভাবেই ক্ষমতায় থাকুক সেটা বাদ দিয়ে আমাদের স্বার্থে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। এ ছাড়া তালেবান বিষয়ে কিছুদিন ধরে বাইডেনর সুরও নিচু হয়ে এসেছে। 

অন্যদিকে হামলার দিন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ জানান, আফগান বিষয়ে সার্বিক যোগাযোগ রাখতে ওয়াশিংটন ও মস্কোর কর্মকর্তারা একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন। অর্থাৎ স্বার্থ রক্ষার্থে স্বৈরাচারী পুতিনের সঙ্গেও হাত মেলাচ্ছেন বাইডেন। কিছুদিনের মধ্যে চীনের সঙ্গেও এ রকম কিছু ঘটলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। 

ওয়াশিংটনের চূড়ান্ত কৌশল বুঝতে হয়তো আরও সময় লাগবে। কিন্তু আপাতত এটা বোঝা যাচ্ছে যে, নিজেদের নিরাপত্তার (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) জন্য তালেবান নয়, আইএসকেই আগামীর সন্ত্রাসবিরোধী রাজনীতির লক্ষ্য বানাতে যাচ্ছে পেন্টাগন। এটাসহ ভূরাজনৈতিক কারণে তালেবানের সঙ্গে বাস্তবসম্মত সম্পর্ক করতে চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। 

অবশ্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ও স্বীকৃতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে কোনোভাবে সম্পর্ক রাখতে কাবুলে সরকার গঠন করতে যাওয়া নতুন তালেবানকেও মরিয়া বলে মনে হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত