Ajker Patrika

শঙ্কায় আফগান জেড প্রজন্ম

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২১, ১০: ১৩
শঙ্কায় আফগান জেড প্রজন্ম

আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ২ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হন ২০ বছরের সালজি। এই আনন্দ বর্ণনা করার মতো ভাষা নেই তাঁর। পরীক্ষার আগে টানা কয়েক মাস নিজের ঘরেই বন্দী হয়ে ছিলেন। পড়াশোনায় এতটাই বিভোর ছিলেন যে নাওয়া-খাওয়ার কথাই ভুলে যেতেন।

সেরা হওয়ার মুহূর্তটির বর্ণনা দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে সালজি বলেন, ‘মনে হয়েছিল পুরো পৃথিবীটাই কেউ আমাকে উপহার দিয়েছে। আনন্দে আমার মা কেঁদে ফেলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে আমিও কেঁদেছি।’

কিন্তু সালজির এই আনন্দ বেশি দিন টেকেনি। কারণ মার্কিন সৈন্যদের আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে দেশ দখলের পাঁয়তারা শুরু করে তালেবান বাহিনী। মাত্র ৮-১০ দিনের মধ্যেই রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় তারা। এরপরই অনিশ্চয়তার আঁধারে ডুবে যান সালজি। তিনি বলেন, ‘আমি হলাম সবচেয়ে সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যবান।’

আফগানিস্তানের জেড প্রজন্মের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ সালজি। এই প্রজন্ম হলো তারাই, যারা ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে। মূলত ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সংস্পর্শে বড় হচ্ছে প্রজন্মটি। আফগানিস্তানের জেড প্রজন্মও এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত নয়। তবে এই প্রজন্মের কারোরই তালেবান শাসন দেখার অভিজ্ঞতা নেই। দেশটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের বয়সই ২৫ বছরের নিচে।

দুই দশক আগে ২০০১ সালে আফগানিস্তান থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল তালেবান। মাত্র পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশটিতে কঠোর ইসলামি অনুশাসন চালু করেছিল তারা। তবে ২০ বছর পর আবারও ক্ষমতায় এসে তারা কিছু পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। বলছে, পড়াশোনায় কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না। নারীদের যথাযথ সম্মান দেবে। মেধাবীদের দেশ না ছাড়তেও বলছে তারা।

তালেবানের আশ্বাস সত্ত্বেও নতুন প্রজন্মের শঙ্কা কাটছে না। অন্তত ছয়জন শিক্ষার্থী ও তরুণ চাকরিজীবী রয়টার্সের কাছে তাঁদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। সোসান নবী নামে ২১ বছরের এক স্নাতক দুঃখ করে বললেন, ‘জীবন নিয়ে আমাদের অনেক আশা ছিল। কিন্তু এক রাতের ব্যবধানেই সব স্বপ্ন মাটি হয়ে গেছে।’

১৫ আগস্ট তালেবান যেদিন কাবুল দখল করে নিল, সেদিন নিজের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িঘড়ি করে বাড়ি ফিরে আসেন ২৬ বছরের জাভিদ। পড়াশোনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি চাকরি নিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরেই বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার সঙ্গে ই-মেইল ও সামাজিক মাধ্যমে চালাচালি করা মেসেজগুলো ডিলিট করে দেন। আর কাগজপত্রগুলো বাড়ির পেছনে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন।

আফগানিস্তানের জেড প্রজন্মের অনেকেই ইতিমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আর যাঁরা পালাতে পারেননি, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তাঁদের ঘিরে ধরেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত