Ajker Patrika

ক্যানসারের কাছে হার মানলেন সিঙ্গাপুরের অভিবাসী মহলে জনপ্রিয় বাংলাদেশি ফজলে এলাহী

শিশুপুত্রের সঙ্গে ফজলে এলাহী রুবেল। ছবি: সংগৃহীত
শিশুপুত্রের সঙ্গে ফজলে এলাহী রুবেল। ছবি: সংগৃহীত

সিঙ্গাপুরে অভিবাসী মহলে ব্যাপক পরিচিত মুখ বাংলাদেশি ফজলে এলাহী। বন্ধুদের কাছে তিনি রুবেল নামেও পরিচিত ছিলেন। সিঙ্গাপুরে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা ৩৮ বছর বয়সী রুবেল গত মঙ্গলবার মারা গেছেন। উদ্যমী, প্রাণোচ্ছল এই বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরের অভিবাসী মহলে এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব ও অনুপ্রেরণার উৎস।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএ—এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্ধুদের কাছে ফজলে এলাহী রুবেল নামেও পরিচিত। ২০২২ সালে তাঁর কোলন ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসার পরও ক্যানসার ছড়িয়ে যেতে থাকে। তারপরও তিনি থেমে থাকেননি। উদ্যমী এই বাংলাদেশি ২০২৩ সালে সিঙ্গাপুরে ‘মাইগ্র্যান্ট কালচারাল শো’ সংগঠিত করতে সহায়তা করেন। কিছুদিন পর দেশে ফিরে যান।

সিঙ্গাপুর ছাড়ার আগে রুবেল বলেন, ‘আমি একদিন ফিরে এসে দেখতে চাই যে, এই দেশ অভিবাসী শ্রমিকদের আরও ভালোভাবে গ্রহণ করছে।’ তিনি বলেন, ‘এই শহর এবং এখানকার মানুষ আমাকে ভালোবেসেছে। ঠিক একইভাবে আমিও এই শহর এবং এখানকার মানুষকে ভালোবাসি।’

ফজলে এলাহীর ক্যানসার চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের জনগণ অর্থ সংগ্রহ করেছিল। এই অর্থ দিয়ে তিনি ভারতে চিকিৎসাও নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অবশ্য জীবনের শেষ দিনগুলো তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পেরেছেন।

সিঙ্গাপুরের সাবেক এমপি অ্যান্থিয়া অং বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ যে, তহবিল সংগ্রহের প্রচেষ্টা তাঁকে পরিবারের সঙ্গে ১৮ মাস কাটানোর সুযোগ দিয়েছে, বিশেষ করে তাঁর ছেলে রিহানের সঙ্গে। তিনি রিহানের জন্য বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করতেন।’

রুবেলের সঙ্গে সাংস্কৃতিক শো শুরু করেছিলেন একে জিলানী। তিনি বলেন, ‘ফজলে এলাহী ছিলেন খুব সাহসী এবং অত্যন্ত সদয় প্রাণ ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে পরিচয়ের পর আমি নিজেও বদলে যাই।’ আরেক সংগঠক ইউলিয়াতুন সুরাজি বলেন, ‘তিনি সবাইকে দেখাতে চেয়েছিলেন যে, অভিবাসী শ্রমিকেরা সিঙ্গাপুরে বড় অবদান রেখে চলেছে।’

এমপি অং জানান, ফজলে এলাহী সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে প্রথম অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে আমাদের দেশে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি বিএসএ ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছিলেন এবং কেমোথেরাপির মাঝেও শতভাগ উপস্থিতি বজায় রেখেছিলেন।

নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করা ফজলে এলাহী ২০০৯ সালে সিঙ্গাপুরে যান। ২০১৫ সালে তিনি অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং ২০১৭ সালে ‘মাইগ্র্যান্ট লাইব্রেরি সিঙ্গাপুর’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৮ সালে তিনি ‘মাইগ্র্যান্ট কালচারাল শো’ চালু করেন, যা শ্রমিকদের প্রতিভা প্রদর্শনের মঞ্চ হিসেবে গড়ে ওঠে।

একে জিলানী বলেন, ‘তিনি আমাদের দেখিয়েছেন, আমাদের নিজেদের সক্ষমতা আছে, আমরা নিজেরাই নিজেদের নেতা হতে পারি। তিনি দেখিয়েছেন, আমাদের অন্যদের ওপর নির্ভর করতে হবে না, আমরাই নিজেদের এগিয়ে নিতে পারি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত