Ajker Patrika

ব্রিকস সম্প্রসারণে চীনের ইচ্ছায় ব্রাজিল-ভারতের বাগড়া 

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

উন্নয়নশীল বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের জোট ব্রিকসের সম্প্রসারণ চায় চীন। কিন্তু বেইজিংয়ের এই সাধে পানি ঢেলেছে ভারত এবং ব্রাজিল। দেশ দুটি চায় না, জোটের দ্রুত সম্প্রসারণ হোক। সম্প্রতি ভারত এবং ব্রাজিলের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক নিবন্ধে বিষয়টি উল্লেখ করেছে।

ভারত এবং ব্রাজিলের অভিযোগ, পাঁচ সদস্যের অর্থনৈতিক এ জোট ক্রমেই রাজনৈতিক জোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জোটটিকে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকানোর স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। আগামী ২২-২৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনের আগে জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে চীন বারবার নতুন সদস্য গ্রহণের বিষয়ে দাবি উত্থাপন করেছে। কিন্তু ভারত এবং ব্রাজিলের কারণে বিষয়টি খুব বেশি দূর এগোয়নি।

সৌদি আরব এবং ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশই ব্রিকস জোটে যোগ দিতে আগ্রহী। চীন তাদের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে ইতিবাচক হলেও বাগড়া দিচ্ছে ভারত এবং ব্রাজিল। আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে বেইজিং আলোচনার দাবি তুললেও এতেও বাধা দিয়েছে নয়া দিল্লি এবং ব্রাসিলিয়া। 

ব্রাজিল মনে করে, জোটে নিজ পক্ষের দেশ বাড়িয়ে প্রভাবের পাল্লাও ভারী করতে চাইছে চীন। পাশাপাশি জোটকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে চাইছে। ব্রাজিলের ভয় হলো—চীনের এমন উদ্যোগ হিতে বিপরীত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। যা জোটের দেশগুলোর জন্য ইতিবাচক নাও হতে পারে। এসব কারণে, ব্রাজিল জোট সম্প্রসারণের পক্ষে না। 

এ বিষয়ে ব্রাজিলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘ব্রাজিল ব্রিকসকে চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা জোট হিসেবে দেখতে চায় না। দেশটি চায় না যে, ব্রিকস সরাসরি জি-৭ এর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে যাক। তাই দেশটি নীরবে জোটে চীনের চাপ প্রতিরোধ করতে কাজ করছে।’

তবে জোটে নতুন সদস্য গ্রহণের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান একটু ভিন্ন। দেশটির দাবি, কোনো একটি দেশ কখন এবং কীভাবে জোটের সদস্য হবে সে বিষয়ে বিধিমালা থাকা উচিত। দেশটির মতে, কোনো একটি দেশকে সদস্য হতে হলে—আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসতে হবে। এবং জোটে নতুন সদস্য গ্রহণ থেকে শুরু করে যেকোনো সিদ্ধান্ত সব সদস্যের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হতে হবে। জোটের সদস্য গ্রহণের বিষয়ে ভারতের নিজস্ব একটি অবস্থানও রয়েছে। যেমন জোটটি কোনো ধরনের স্বৈরশাসনে থাকা দেশের বদলে গণতান্ত্রিক দেশকে জোটে নিতে বেশি আগ্রহী। উদাহরণ হিসেবে দেশটি সৌদির পরিবর্তে আর্জেন্টিনা এবং নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলোকে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করেছে। 

সৌদি আরবের সদস্যপদের বিরোধিতা করার পেছনে হয়তো ভারত দুটি বিষয় বিবেচনা করেছে। প্রথমত, উল্লিখিত গণতন্ত্রের শর্ত এবং দ্বিতীয়ত দেশটি সাম্প্রতিক সময়ে চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। তবে নতুন সদস্য গ্রহণে বিরোধিতা করলেও জোটের পর্যবেক্ষক সংখ্যা বাড়াতে কোনো আপত্তি নেই ভারত এবং ব্রাজিলের। একই অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকারও তবে দেশটি জোট সম্প্রসারণের বেলায় কোনো ধরনের বাধা না দেওয়ারই অবস্থান গ্রহণ করেছে।

এদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোটের সম্প্রসারণের ব্যাপারে আশাবাদী। এ বিষয়ে ব্লুমবার্গকে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘গত বছরের সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো জোটের সম্প্রসারণের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে। এটি ব্রিকসের পাঁচটি সদস্য দেশের রাজনৈতিক ঐকমত্য।’

অপরদিকে, জোটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাশিয়ার অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়। এ বিষয়ে রাশিয়ার থিংক ট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেইন অ্যান্ড ডিফেন্স পলিসির প্রধান ফিওদর লুকিয়ানভ বলেন, ‘রাশিয়ার জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো অবস্থান নেই। এবং এই অবস্থান না থাকা মূলত জোটের সম্প্রসারণের পক্ষেই কথা বলে। তবে বড় কোনো বিষয় না হলে আমরা জোটের কোনো সিদ্ধান্তকে আটকে দিতে চাই না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত