Ajker Patrika

করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থতা, বড় সংকটে বলসোনারোর রাজনীতি

করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থতা, বড় সংকটে বলসোনারোর রাজনীতি

ব্রাজিলে একের পর এক মন্ত্রী পদত্যাগ করছেন। একই পথে হেঁটেছেন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর প্রধানরাও। এরই মাঝে মঙ্গলবার একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে ব্রাজিল। সব মিলে দেশটির প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছেছে। তাঁর রাজনীতিও এখন বড় সংকটের মুখোমুখি।

মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ব্রাজিলে ৩,৭৮০ জন লোক করোনায় মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩ লাখ ১৭ হাজার। এ পর্যন্ত দেশটিতে ১ কোটি ২৬ লাখ লোকের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ১ লাখ করোনা রোগী। করোনা পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের ২য় ভয়াবহ অবস্থায় ব্রাজিল।

১৭ই মার্চ দেশটিতে ২,২৮৭ জন লোক করোনায় মারা যান। এদিন ব্রাজিলের জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ফিউক্রুজ বলে, ‘ব্রাজিলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে।’ এদিন পর্যন্ত ব্রাজিলের ২৭ রাজ্যের ২৫ টির রাজধানীর ৮০% এরও বেশি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট রোগীতে পূর্ণ ছিল।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিও গ্র্যান্ডে দ্য সুল রাজ্যের মহামারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ পেদ্রো হালাল আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ব্রাজিল বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিতে পরিণত হতে পারে।

তবে প্রেসিডেন্ট বলসোনারো ধারাবাহিকভাবে লকডাউনের বিরোধিতা করে আসছেন। তাঁর যুক্তি হল- করোনাভাইরাসের প্রভাবের ক্ষতির চেয়ে লকডাউনে অর্থনীতির ক্ষতি বেশি। দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে নাগরিকদের ‘গর্জন বন্ধ’ করতে বলেছেন। এতদিন করোনা প্রতিরোধক টিকা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন বলসোনারো। অপ্রমাণিত ওষুধে চিকিৎসাও বন্ধ রেখেছিলেন। তবে গত সপ্তাহে বলসোনারো বলেন, ‘২০২১ হবে টিকা দেওয়ার বছর। খুব শীঘ্রই আমরা আবার সাধারণ জীবন শুরু করব।’ তবে এ পর্যন্ত মাত্র ৮ শতাংশ নাগরিককে টিকার আওতায় আনতে পেরেছে ব্রাজিল।

রাজনৈতিক পরিণতি কি?

করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাওয়ায় বলসোনারোর জনপ্রিয়তা অনেক কমে গেছে। দেশটির ৪৩ শতাংশ নাগরিক মনে করে দেশের এ করুণ পরিণতির জন্য খোদ প্রেসিডেন্ট দায়ী। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত ডেটাফোলার এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বলসোনারো নেতৃত্বাধীন সরকারের অবস্থাও টালমাটাল। করোনা শুরুর পর থেকে ৩ জন স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে। ৪র্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে ১৬ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদ গ্রহণ করেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মার্সেলো কুইরোগা। ২৯ মার্চ সোমবার পদত্যাগ করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করতে না পারার অভিযোগ উঠেছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী চেয়েছিলেন সশস্ত্র বাহিনী প্রেসিডেন্টের বদলে সংবিধানের প্রতি অনুগত থাকবে। এ নিয়ে বলসোনারোর সঙ্গে তাঁর তর্ক হয়।

মঙ্গলবার সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানরাও একই পথে হাঁটেন। দেশটির ইতিহাসে এবারই প্রথম রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মতবিরোধে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানরা পদত্যাগ করলেন। প্রতিরক্ষা প্রধানদের হঠাৎ পদত্যাগকে সামরিক বাহিনীর উপর বলসোনারোর অযৌক্তিক নিয়ন্ত্রণ চেষ্টার প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন অনেকে।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম বলসোনারো এমন বৃহত্তম রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়লেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাজনকারী ব্যক্তি, বর্ণবাদী, সমকামী ও মিথ্যাবাদী অভিযোগও তুলেছেন অনেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত