Ajker Patrika

হাইতিতে বানের জলের মতো ঢুকছে মার্কিন অস্ত্র

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪: ৪২
Thumbnail image

হাইতির প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে এরিয়েল হেনরি পদত্যাগের পর দেশটিতে এখনো কোনো সরকারপ্রধান আসেননি। ফলে দেশটি কার্যত ‘অচল’ হয়ে পড়েছে। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সেই নাম এখনো প্রকাশ করেনি দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিল। এই অবস্থায় ‘মড়ার উ খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে ধরা দিয়েছে বহিরাগত অস্ত্রের ব্যাপক প্রবেশ। 
 
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইতির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের সামনে বানের জলের মতো ঢুকতে থাকা বিদেশি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে অস্ত্রের ঝনঝনানির কারণে লোকজন গণহারে রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স ছেড়ে চলে যাচ্ছে। 

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আর গ্যাংয়ের মধ্যে সংঘাতের কারণে পোর্ট-অ-প্রিন্স এরই মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের অনুমান, হাইতিতে যত সংঘাত হয় তার অধিকাংশই রাজধানীকেন্দ্রিক এবং রাজধানীর অন্তত ৮০ শতাংশই এখন গ্যাংগুলোর দখলে। 

হাইতি কখনোই আগ্নেয়াস্ত্র উৎপাদন করেনি। কিন্তু জাতিসংঘের প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, পোর্ট-অ-প্রিন্সে উচ্চ নির্ভুল লক্ষ্যমাত্রার রাইফেল একে-৪৭ থেকে শুরু করে ৯ মিমি পিস্তল, স্নাইপার রাইফেল এবং মেশিনগানের মতো অস্ত্রও এখন পাওয়া যাচ্ছে হরেদরে। আর বিপুল পরিমাণ অস্ত্র দেশটিতে গ্যাংগুলোর শক্তিমত্তা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। 

হাইতিতে ঠিক কী পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র আছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, ২০২০ সালে দেশটিতে অন্তত ৫ লাখ বৈধ-অবৈধ বিভিন্ন অস্ত্র ছিল। চার বছরে নিশ্চয়ই সেই পরিমাণ বেড়েছে বৈ কমেনি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হাইতিতে যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ ঢোকে, তার বেশির ভাগই চোরাচালান করে আনা হয় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও জর্জিয়া থেকে। 

হাইতির বিভিন্ন বন্দরে—পোর্ট-অ-প্রিন্স, পোর্ট ডে পিক্স ও ক্যাপ-হাইতিয়েঁতে অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে, দেশটিতে আসা বেশির ভাগ অস্ত্রই আসে বিভিন্ন কনটেইনারে থাকা খেলনা ও কাপড়ের মাঝে। মজার ব্যাপার হলো, এসব খেলনা ও কাপড় হাইতিতে আসে অনুদান হিসেবে। 

এর আগে ২০২২ সালের জুলাই মাসে হাইতি কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েক ডজন অস্ত্র ও প্রায় ১৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ জব্দ করে। যে জাহাজটি থেকে এগুলো জব্দ করা হয়, সেটি মূলত ফ্লোরিডা থেকে হাইতির এপিস্কোপাল চার্চের জন্য সহায়তা নিয়ে গিয়েছিল। 

আরও একটি উপায়ে অস্ত্র আসে হাইতিতে। জাতিসংঘ খতিয়ে দেখেছে, ২০১০ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি বিমানবন্দর বানানো হয়েছিল। বর্তমানে সেগুলোর অধিকাংশই বিভিন্ন গ্যাংয়ের দখলে এবং অস্ত্র আমদানিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। হাইতিতে অস্ত্রের ঝনঝনানি বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র চলতি মাসের শুরুর দিকে বলেছিলেন, ‘হাইতির গ্যাংগুলোর উচিত অস্ত্রবাজি বন্ধ করা।’ 

কিন্তু সেটি হয়নি বরং পোর্ট-অ-প্রিন্সসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে গ্যাংগুলোর দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। ফলে সরকারি কর্মকর্তাদেরও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ব্যক্তিগত অস্ত্র বহন করতে হচ্ছে। তাদেরই একজন বন্দরনগরী কেপ-হাইতিয়েঁর প্রধান কৌঁসুলি চার্লস এডওয়ার্ড ডুরান্ট। তাঁর অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের এক কোণে একটি সেমি-অটোমেটিক অস্ত্র মজুত। 

এ বিষয়ে কৌঁসুলি চার্লস এডওয়ার্ড ডুরান্টের বক্তব্য হলো, নিরাপদে চলাফেরা করার জন্য তাঁর এই বন্দুকের প্রয়োজন হয়। তিনি আরও বলেন, ‘হাইতির পরিস্থিতি এতটা খারাপ কখনোই ছিল না। এটি একটি ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন। আমি চাই হাইতিয়ানরা জেগে উঠে উন্নত দেশ গঠনে কাজ করুক।’ কেপ-হাইতিয়েঁতে ব্যাপক অস্ত্র প্রবেশ করায় শহরটির পরিস্থিতি পোর্ট-অ-প্রিন্সের মতো হতে পারে কি না—এমন এক প্রশ্নের জবাবে ডুরান্ট বলেন, ‘আমরা বাধা দিচ্ছি আমাদের নিজস্ব উপায়ে। তবে যে কোনো কিছু ঘটতে পারে।’ 

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা হাইতিতে অস্ত্র চোরাচালানের বিষয়টি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এবং একই সঙ্গে গ্যাংগুলোকেও উচ্ছেদের চেষ্টা করবে। গত বছর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, তাঁরা হাইতিতে একটি পুলিশ বাহিনী গঠন করতে চায়, যারা অস্ত্র চোরাচালান বন্ধে কাজ করবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে ক্যারিবিয়ান অ্যান্ড হাইতি অ্যাফেয়ার্সের উপসহকারী সেক্রেটারি অব স্টেট বারবারা ফাইনস্টেইন বিষয়টি জানিয়েছিলেন। 

যাই হোক, কোনো রাষ্ট্রপ্রধান ও কার্যকরভাবে কোনো সরকার না থাকায় হাইতির জনগণ অবৈধ বন্দুকের কারণে সৃষ্ট সহিংসতার এক দুষ্টচক্রে আটকা পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত