Ajker Patrika

নাইজেরিয়ায় লাখো মুসল্লির ঈদ নেই এবার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৪, ১৯: ১৫
Thumbnail image

আনুমানিক ১০ কোটি মুসল্লির দেশ নাইজেরিয়া। তাই প্রতিবছর দেশটিতে উৎসাহ–উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মুসলিম ধর্মীয় উৎসব এবং অনুষ্ঠানগুলো যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। কিন্তু এবার দেশটিতে উৎসবের চেয়ে সংকটই বড় হয়ে উঠেছে। ৭৮ বছর বয়সী মালান কাবিরু তুডুনের কথায় এটি স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘সেই ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছরই আমি একটি রাম ছাগল কোরবানি দিয়ে আসছি, এবারই শুধু পারলাম না।’

ঐতিহ্যগতভাবে প্রতিবছরই সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল আজহার পবিত্র দিনটিতে পশু কোরবানি দেয়। পরে ওই পশুর মাংস গরিব, দুস্থ, পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বণ্টন ও ভূরিভোজের মধ্য দিয়ে তাঁরা ঈদ উদ্‌যাপন করেন।

আল্লাহর নির্দেশে নিজের পুত্র ইসমাইলকে উৎসর্গ করার ঘটনাকে স্মরণ করেই ধর্মীয় এই আচার পালন করে মুসলিমেরা। এবারও মুসলিম বিশ্বের মানুষ পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদ উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে এবার পশু কোরবানি দিতে পারছে না নাইজেরিয়ার লাখ লাখ মানুষ।

এ বিষয়ে আজ বিসিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহরে কানোতে বিপুলসংখ্যক মুসলিম বসবাস করেন। এই শহরেরই বাসিন্দা ওয়াদা বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমি অন্তত একটি করে রাম ছাগল কোরবানি দিতে সক্ষম ছিলাম। কিন্তু এবারের মতো কঠিন পরিস্থিতি আর কখনোই ছিল না।’

বিবিসি জানিয়েছে, নাইজেরিয়া বর্তমানে প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দেশটিতে অশান্তি ও ক্ষোভ বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন গড়ে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির এই হার গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটিতে খাবারের দামই বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। কিছু কিছু খাবারের মূল্যবৃদ্ধি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির এই প্রভাব ঈদুল আজহায় আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

নাইজেরিয়ায় গড়পড়তা একটি রাম ছাগল বাংলাদেশি মুদ্রার মান অনুযায়ী ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজারে বিক্রি হয়। কিন্তু এই অর্থ খরচ করতে এবার হিমশিম খাচ্ছে অধিকাংশ মুসলিম। পশু কোরবানির চেয়ে সাধারণ খাবার কেনাই তাঁদের কাছে এখন অগ্রাধিকারের বিষয় হয়ে উঠেছে। দেশটিতে পশু কোরবানিকে এবার অনেকেই বিলাসিতা হিসেবে দেখছেন।

দেশটির নাগরিক ৫৪ বছর বয়সী শামসু মোহাম্মদ বলেন, কেউ যদি এবার তাঁকে পশু কেনার জন্য অর্থ দেয়, তবে এই অর্থ দিয়ে কোনো পশু না কিনে তিনি বরং সস্তা খাবার কিনে বাড়িতে মজুত করবেন। তিনি বলেন, ‘ইসলামে কোরবানি দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। এটা শুধু তাদের জন্যই যাদের সামর্থ্য আছে। যাদের সামর্থ্য নেই তাদের কোরবানি দেওয়ারও প্রয়োজন নেই।’

আজ দেশটিতে অনুষ্ঠিত ঈদের নামাজে তাই লাখ লাখ মুসল্লি আল্লাহর কাছে পরবর্তী বছরে যেন দেশ এবং নিজের অর্থনৈতিক সংকট না থাকে সেই প্রার্থনাই করেছেন। সমৃদ্ধি আসলে পশু কোরবানি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত