Ajker Patrika

দেশের যে ক্ষতি করছে নাইজেরিয়ার প্রবাসীরা

অনলাইন ডেস্ক
আফ্রোবিট তারকাদের পরিবেশনা উপভোগ করছেন নাইজেরিয়ানরা। ছবি: বিবিসি
আফ্রোবিট তারকাদের পরিবেশনা উপভোগ করছেন নাইজেরিয়ানরা। ছবি: বিবিসি

নাইজেরিয়ায় ছুটির মৌসুমে যে চিত্র দেখা যায়, তা যেন কোনো সিনেমার দৃশ্য। বিমানবন্দরে আবেগঘন পুনর্মিলন, অভিজাত ক্লাবগুলোতে শ্যাম্পেইনের বন্যা বয়ে যাওয়া এবং দেশজুড়ে স্থাপন করা অসংখ্য মঞ্চে আফ্রোবিট তারকাদের নাচ-গান আর দুর্দান্ত পরিবেশনার মতো বিষয়গুলো তখন অহরহই দেখা যায়।

রোববার এক প্রতিবেদনে বিবিসি বলেছে, ডিসেম্বর তথা ছুটির ওই সময়টিতেই বিদেশে বসবাস করা নাইজেরিয়ানরা দেশে ঘুরতে যান। কিন্তু দেশে গিয়ে প্রবাসীদের ছুটি কাটানোর এই প্রচলন নাইজেরিয়ায় একটি বড় পরিবর্তনও নিয়ে আসছে।

প্রবাসী নাইজেরিয়ানদের বেশির ভাগই বসবাস করে পশ্চিমা দেশগুলোতে। ফলে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে রঙিন হয়ে ওঠে তাঁদের চালচলন। বিদেশে ডলার-ইউরো আয় করায় তাঁদের তাদের ক্রয়ক্ষমতাও থাকে বেশি। তাঁদের উপস্থিতি তাই দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

তবে এটি একটি অস্বস্তিকর সত্যও সামনে টেনে আনে। যারা নাইজেরিয়ায় বসবাস করে স্থানীয় মুদ্রায় আয় করেন, ছুটির সময়টিতে তারা রাজধানী আবুজা এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র লাগোসের মতো শহরগুলোতে নিজেদের অনাহূত ভাবতে শুরু করেন। বিশেষ করে ‘ডেটি ডিসেম্বর’ এর সময়। অর্থাৎ বড়দিন ও নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার সময়টিতে তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। বলা যায়, এই ব্যয় অনেকের নাগালের বাইরে চলে যায়।

লাগোস-ভিত্তিক একজন রেডিও উপস্থাপক বিবিসিকে বলেন, ‘ডেটি ডিসেম্বরের সময় লাগোস প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠে। তীব্র যানজট, মূল্যস্ফীতি এবং ব্যবসায়ীরা তাদের নিয়মিত গ্রাহকদের উপেক্ষা করেন।’

নাইজেরিয়ার শ্রেণি বিভাজনে বিদেশি প্রভাব

নাইজেরিয়ায় শ্রেণিগত বৈষম্য নতুন কিছু নয়। আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হলেও নাইজেরিয়ার ২৩ কোটি মানুষের জীবনযাত্রা অনেক কঠিন। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যমতে, নাইজেরিয়ায় ৮ কোটি ৭০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।

সোসিওলজির অধ্যাপক মার্টিন্স ইফিয়ানাচো মনে করেন—এই বৈষম্য ১৯৬০ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে আরও বেড়েছে। তাঁর মতে, দেশটির রাজনৈতিক অভিজাতেরা শুধু ক্ষমতা ও সম্পদ অর্জনের কৌশল নিয়ে ব্যস্ত। সাধারণ মানুষ তাই হিসাবের বাইরে থেকে যাচ্ছে।

শ্রেণিগত পার্থক্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলনও। রেডিও উপস্থাপক উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘লাগোসে কোনো রেস্তোরাঁয় গেলে দেখা যায়, রেঞ্জ রোভার নিয়ে আসা অতিথিরা দ্রুত সেবা পান। আর কিয়া গাড়িতে কেউ আসলে তিনি উপেক্ষিত হন।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, নাইজেরিয়ায় উন্নতি করা খুব কঠিন। অনেক তরুণই তাই বিদেশে পড়াশোনা বা কাজের সুযোগ খোঁজেন। ২০২২ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, নাইজেরিয়ার ৭০ ভাগ তরুণ দেশ ছাড়তে চান। এই প্রবণতাটিকে নাইজেরিয়ায় বলা হয়—‘জাপা’। যার অর্থ ‘পালিয়ে যাওয়া’।

আরেকটি বিষয় হলো—কেউ বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেলে, তিনি যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন তাঁর আচরণে বড় পরিবর্তন দেখা যায়। সুযোগ পেলেই তাঁরা আর্থিক ও সামাজিক অবস্থানকে জাহির করেন।

নাইজেরিয়ায় ব্রিটিশ বা আমেরিকান উচ্চারণে কথা বলা সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে। অধ্যাপক ইফিয়ানাচো বলেন, ‘অনেকে বিদেশ না গেলেও বিদেশি উচ্চারণ অনুকরণ করেন। কারণ এটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়।’

আবার কিছু কিছু প্রবাসী নাইজেরিয়ানের যতটুকু না আর্থিক সামর্থ্য, তিনি তার চেয়েও বেশি দেখান। নাইজেরিয়ার সামাজিক কাঠামোতে প্রদর্শনই মুখ্য—আর যারা এটি করতে পারেন, তারা শ্রেণি বিভাজনের সিঁড়িতে ওপরে ওঠার সুযোগ পান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাড়ি কেনার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

মুক্তি পেয়ে আ.লীগ নেতার ভিডিও বার্তা, বেআইনি বলল বিএনপি

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কাও ঢাকায় এসিসির সভা বর্জন করল

যুদ্ধবিমানের ২৫০ ইঞ্জিন কিনছে ভারত, ফ্রান্সের সঙ্গে ৬১ হাজার কোটি রুপির চুক্তি

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে বিষোদ্‌গার: চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চে বিএনপির হামলা-ভাঙচুর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত