‘সম্মুখ সমরে নারীরা ফিট নয়’ যুক্তিতে ইসরায়েলে প্রশিক্ষণ বন্ধ

শারীরিক সক্ষমতা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগ দেখিয়ে ইসরায়েল সম্মুখযুদ্ধের নারী সেনাদের প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দিয়েছে। ছয় মাস প্রশিক্ষণের পর ‘কমব্যাট মোবিলিটি ইউনিট’ নামের একটি পাইলট প্রোগ্রাম বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী—আইডিএফ। তাদের ভাষ্য—কমব্যাট সেনা হওয়ার জন্য শারীরিক সক্ষমতার শর্তগুলো পূরণ করতে পারছেন না নারীরা। আইডিএফের চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেন ইয়াল জামির এই প্রোগ্রামটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বলছে, পেশাগত ক্ষেত্রে খুবই উচ্চমাত্রার দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন নারীরা। তবে, যুদ্ধক্ষেত্র ও শারীরিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে তাঁরা তাল মেলাতে পারছেন না। যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে ঘায়েল করে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে ধরনের সক্ষমতা প্রয়োজন তা তাঁদের মধ্যে তুলনামূলক কম। আইডিএফ আরও জানিয়েছে, চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখলে অতিরিক্ত কায়িক শ্রমের কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

কমব্যাট মোবিলিটি ইউনিটের কাজ মূলত শত্রু ভূমিতে যুদ্ধরত পদাতিক সেনাদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ এবং আহত সেনাদের উদ্ধার। বর্তমানে ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি পদাতিক বাহিনীতে নারী সেনা রয়েছেন। তবে, তাঁদের পদবি ‘কমব্যাট সেনা’ হলেও সাধারণত ফ্রন্ট লাইন অথবা বিপজ্জনক এলাকাগুলোতে মোতায়েন করা হয় না বলে জানিয়েছে আইডিএফ। ইসরায়েলি সেনা কর্তৃপক্ষ বলছে, কমব্যাট মোবিলিটি প্রকল্পটি বাতিলের পর আগামী বছর থেকে ফের নারী পদাতিক নিয়োগের জন্য নতুন পাইলট কর্মসূচি চালু করা হবে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কিছু ব্যতিক্রম বাদে পুরুষ ও নারীদের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। এটি ইসরায়েলি সমাজে একধরনের জাতীয় সংহতি গড়ে তোলে বলে সাধারণভাবে প্রশংসিত হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে নারীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনাকে ফের সামনে এনেছে।

সেদিন, মিসর ও জর্ডান সীমান্তে কারাকাল ব্যাটালিয়নের নারী সেনারাই হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধ করেন। হামলার আগে একটি নারী নজরদারি ইউনিট হামাসের সন্দেহজনক তৎপরতা নিয়ে সতর্ক করেছিল, কিন্তু ঊর্ধ্বতন কমান্ডাররা তা আমলে নেননি, পরে তাঁরা ক্ষমা চান। অনেকে মনে করছেন, লিঙ্গবৈষম্যের কারণে ওই সতর্কতা উপেক্ষিত হয়েছিল। ৭ অক্টোবরের ওই হামলায় ইউনিটটির একাধিক নারী সেনা নিহত ও অপহৃত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

ইসরায়েলে এ ইস্যু নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে, তখন যুক্তরাজ্যেও সাম্প্রতিক সময়ে সম্মুখযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। গত মাসে, একজন রয়্যাল মেরিন প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, আট মাসের কঠিন ট্রেনিংয়ে নারী সেনাদের পাস করাতে মানদণ্ড শিথিল করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এ নিয়ে প্রায় ১ হাজার সেনা একটি গোপন চিঠিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন, যেখানে বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তি নীতির ফলে বাহিনী দুর্বল ও লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে নারীরা সব ধরনের পদে যোগ দিতে পারেন, এমনকি সরাসরি শত্রুকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে নিয়োজিত ফ্রন্টলাইন ইউনিটেও। এর আগে ইনফ্যান্ট্রি ও আর্মার্ড কোরে নারী নিয়োগ নিষিদ্ধ ছিল।