Ajker Patrika

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং: উপকারী না ক্ষতিকর, বিতর্ক উসকে দিল নতুন গবেষণা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ০৪
এ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলো এই পদ্ধতির পক্ষে ফলাফল দেখিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
এ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলো এই পদ্ধতির পক্ষে ফলাফল দেখিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা সময় নির্ধারণ করে খাদ্য গ্রহণের পদ্ধতি গত দশক থেকে একটি জনপ্রিয় ডায়েট ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে আপনাকে ক্যালরি গুনতে হয় না, শুধু খাবারের সময় বদলাতে হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে কিছুটা সময় না খেয়ে থাকতে হয়।

প্রযুক্তি জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা এই ডায়েটকে জীববিদ্যায় নতুন দিক বলা শুরু করেছেন, আর হলিউড তারকারাও বলছেন এটি তাদের ফিটনেস বজায় রাখতে সাহায্য করে। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাকও সপ্তাহের শুরুতে ৩৬ ঘণ্টার উপবাসের কথা জানিয়েছেন।

এ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলো এই পদ্ধতির পক্ষে ফলাফল দেখিয়েছে। দীর্ঘ সময়ে না খেয়ে থাকা শারীরিক বিপাক ক্রিয়া উন্নত করে, কোষের ক্ষয় সাড়াতে এবং হয়তো আয়ু বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে। তবে পুষ্টিবিদরা সতর্ক করেছেন, ওজন কমাতে খাবার না খাওয়া কোনো জাদু সমাধান নয়, বিশেষ করে যারা পূর্ব থেকেই অসুস্থ তাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ে দিনে সাধারণত আট ঘণ্টার মধ্যে খাওয়া হয়, আর ১৬ ঘণ্টা খাবার গ্রহণ বন্ধ থাকে। এর বাইরে ৫: ২ রেশিও ডায়েটের মতো পদ্ধতিও আছে, যেখানে নির্দিষ্ট দুই দিনে ক্যালরি সীমিত করা হয়।

তবে এখন এক বৃহৎ পরিসরের গবেষণায় নতুন আশঙ্কাজনক তথ্য সামনে এসেছে। ১৯ হাজার বেশি আমেরিকান ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যারা দৈনিক আট ঘণ্টার কম সময়ে খাবার গ্রহণ করেন, তাদের হৃদ্রোগজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি সেই সব মানুষের চেয়ে ১৩৫ শতাংশ বেশি ছিল যারা দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে খাবার খান।

খাবারের সময় এবং মোট মৃত্যু (সব কারণে মৃত্যু) এর মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা দুর্বল ও অনিশ্চিত হলেও, হৃদ্রোগজনিত ঝুঁকি সব বয়স, লিঙ্গ ও জীবনধারা গ্রুপে স্পষ্টভাবেই বিদ্যমান ছিল।

তাই গবেষণাটি সতর্কবার্তা দেয় যে, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংকে ঝুঁকি-শূন্য হিসেবে দেখা উচিত নয়।

গবেষণায় আট বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নেওয়া হয়। তাদের খাওয়ার অভ্যাস বুঝতে বিজ্ঞানীরা প্রায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুইটি আলাদা দিনে খাবারের অভ্যাস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতেন। এই ‘ডায়েটারি রিকল’ থেকে বিজ্ঞানীরা প্রতিটির গড়ে খাবারের সময়কাল হিসাব করে নেন এবং এটিকে তাদের দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাস হিসেবে ধরে নেন।

যারা আট ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে খাওয়া সেরে ফেলেছেন, তাদের হৃদ্রোগজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া, এই ঝুঁকি বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক গ্রুপে সমান ছিল, তবে সবচেয়ে বেশি ছিল ধূমপায়ী, ডায়াবেটিস রোগী এবং পূর্বে হার্ট রোগ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে। অর্থাৎ, এদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ছোট খাবারের সময়সীমা বিশেষ সাবধানতার বিষয়।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ডায়েটের মান, খাবারের পরিমাণ বা অন্যান্য জীবনধারার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েও এই ঝুঁকি রয়ে গেছে।

গবেষক ভিক্টর ওয়েঞ্জে ঝং বলেন, ‘ডায়াবেটিস ও হার্ট রোগের ক্ষেত্রে খাদ্য প্রধান ভূমিকা রাখে, তাই হৃদ্রোগজনিত মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্ক অপ্রত্যাশিত নয়।’ তবে দীর্ঘ মেয়াদে আট ঘণ্টার কম সময়ে খাবার সেরেও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়বে—এই বিষয়টি নতুন ও উদ্বেগজনক।

এই ফলাফল আগে থেকে প্রচলিত ধারণার পরিপন্থী, যেখানে ছোট মেয়াদি গবেষণায় ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের হার্ট ও বিপাকীয় স্বাস্থ্য উন্নত করার কথা বলা হয়েছিল।

অন্যদিকে, প্রসিদ্ধ এন্ডোক্রিনোলজিস্ট আনুপ মিসরা বলেছেন, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের কিছু উপকারিতা যেমন ওজন কমানো, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নতকরণ, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, প্রদাহ কমানো ইত্যাদি আছে। এ ছাড়া এটি পুষ্টি নিয়ন্ত্রণের জন্য সহজ, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় রোজা বা উপবাস সঙ্গে খাপ খায় এবং অনুসরণে সহজ।

তবে সতর্ক করে মিসরা বলেন, এই পদ্ধতি অনুসরণে পুষ্টি ঘাটতি, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ক্ষুধা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, মাথা ব্যথা ও দীর্ঘ মেয়াদে সহনশীলতা কমে যাওয়া হতে পারে।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ছাড়া এভাবে না খেয়ে থাকলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে চিনির মাত্রা হঠাৎ কমিয়ে বিপদ ডেকে আনতে পারে। এ ছাড়া, বয়স্ক ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকা পেশির ক্ষয় বা দুর্বলতা বাড়াতে পারে।

এই প্রথম নয়, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নিয়ে আগেও সংশয় প্রকাশ হয়েছে।

২০২০ সালে ‘জামা ইন্টারনাল মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশিত তিন মাসের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অংশগ্রহণকারীরা সামান্য মাত্রাই ওজন কমিয়েছেন, যার অনেকটাই পেশি থেকেই হয়েছে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা ফলে দুর্বলতা, ক্ষুধা, পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা ও মনোযোগ হারানোর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নতুন এই গবেষণা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের ওপর আরও এক বড় প্রশ্নচিহ্ন তোলে, বিশেষত কার্ডিওভাসকুলার ( হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালি সম্পর্কিত রোগ) ঝুঁকির ক্ষেত্রে।

ভিক্টর ঝং বলেন, যারা হৃদ্যন্ত্রের রোগ বা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের ১৬ ঘণ্টার ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের অভ্যাস গঠনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ নিয়ে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান প্রমাণ অনুযায়ী, কখন খাবেন তার থেকে কি খাবেন তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধ বা আয়ু বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘ সময় ১৬ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার অভ্যাস গঠন করা উচিত নয়।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক নির্যাতনের মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন কারাগারে

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গুলি, এক শ্রমিক নিহত

শিবিরের বট আইডির অ্যাটাক আমিও কম খাই নাই: শিবির প্যানেলের প্রার্থী জুমা

পাকিস্তানকে সমর্থন করায় ভারত এসসিওর সদস্যপদ আটকে দেয়: আজারবাইজান

দেশে চালু হলো ৫-জি নেটওয়ার্ক, কী কী সুবিধা মিলবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত