Ajker Patrika

শিশুদের সুরক্ষায় জরুরি নতুন প্রজন্মের কার্যকর নিউমোনিয়া টিকা: গোলটেবিলে বিশেষজ্ঞরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা। ছবি: সংগৃহীত
গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা। ছবি: সংগৃহীত

শিশুদের উন্নত সুরক্ষার জন্য নতুন প্রজন্মের নিউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিন (পিসিভি) চালু করা দরকার বলে মনে করেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে বর্তমান পিসিভি-১০ ভ্যাকসিনের সীমাবদ্ধতা ও নতুন সেরোটাইপ উদ্ভবজনিত চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সঙ্গে যৌথভাবে গোলটেবিল বৈঠকটি আয়োজন করে আইসিডিডিআরবি।

আজ শুক্রবার আইসিডিডিআরবি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গোলটেবিল আলোচনার মূল বিষয় ছিল বিদ্যমান নিউমোকক্কাল সেরোটাইপের বিরুদ্ধে টিকাদান-পরবর্তী সুরক্ষা বৃদ্ধি এবং নতুন সেরোটাইপ উদ্ভবজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত গবেষণার ফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. মো. জাকিউল হাসান।

গবেষণায় চারটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবা নেওয়া শিশুদের মধ্যে স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এবং এর সেরোটাইপ শনাক্ত করা হয়। যদিও ২০১৫ সাল থেকে ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে পিসিভি-১০ ভ্যাকসিন ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এটি এখন দেশের বিদ্যমান অধিকাংশ সেরোটাইপ থেকে শিশুদের পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারছে না। বিগত বছরগুলোতে পিসিভি-১০ ভ্যাকসিন কিছু নির্দিষ্ট সেরোটাইপজনিত অসুস্থতা ও শিশুর মৃত্যুহার হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে বিদ্যমান সেরোটাইপের ধরন। সময়ের সঙ্গে সেরোটাইপের পরিবর্তনের কারণে নতুন প্রজন্মের ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘নিউমোনিয়া এখনো শিশুদের মৃত্যুতে প্রধান কারণ। প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ জাতীয় টিকাদান কৌশলে সহায়ক হবে।’

গোলটেবিল বৈঠকটি পরিচালনা করেন আইসিডিডিআরবির সিনিয়র বিজ্ঞানী ও জাতীয় টিকাদান কারিগরি পরামর্শক দলের (নাইট্যাগ) সভাপতি ড. ফিরদৌসী কাদরী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশই তাদের টিকাদান কর্মসূচিতে অধিক কার্যকর নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা শিশুদের নিউমোকক্কাল রোগের বিরুদ্ধে আরও বেশি সুরক্ষা প্রদান করে।’

বিশেষজ্ঞরা জানান, পিসিভি-১০ ভ্যাকসিন কার্যকর থাকলেও সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কারণে নিউমোকক্কাল সেরোটাইপের ধরন পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। টিকাদানের ফলে পিসিভি-১০-এর লক্ষ্য সেরোটাইপ এখন কম দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ ৩৫টি দেশে পিসিভি-১০ ব্যবহৃত হচ্ছে। পিসিভি-১৩ চালু ১৩০ দেশে, নতুন প্রজন্মের পিসিভি-১৫ ও পিসিভি-২০ যথাক্রমে ১৬ ও ৯ দেশে।

বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা একমত হন, বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মের ভ্যাকসিন চালু করা বৈজ্ঞানিকভাবে যৌক্তিক ও প্রমাণভিত্তিক, যা শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য আরও টেকসই করবে।

ইপিআইয়ের সাবেক প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. তাজুল ইসলাম এ বারী জানান, অর্থনৈতিকভাবে পিসিভি-১০ থেকে পিসিভি-১৩-তে উন্নীতকরণের খরচ বাংলাদেশের জন্য সাশ্রয়ী হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মো. ফারহাদ হুসাইন বলেন, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে পিসিভি টিকা হালনাগাদ করতে হবে।’

আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য রোগগুলোর শক্তিশালী সার্ভেইল্যান্সের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ইপিআই) ডা. মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ‘নতুন প্রমাণ ও বৈশ্বিক চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভ্যাকসিন পর্যালোচনা ও হালনাগাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।’

নাইট্যাগ সদস্য ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পরবর্তী প্রজন্মের পিসিভি ভ্যাকসিনে উন্নীতকরণ যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয় হলেও এর ব্যয়-সাশ্রয় ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সক্ষমতাও বিবেচনায় নিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নাইট্যাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. চৌধুরী আলী কাওসার, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম, ডা. এম আর খান শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শারমিন আফরোজ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ডা. জাকারিয়া বিন আমজাদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (ইমিউনাইজেশন) ও নাইট্যাগ সদস্য ডা. চিরঞ্জিত দাস, জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সিনিয়র ইমিউনাইজেশন কনসালট্যান্ট ডা. শামসুজ্জামান, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) কাজী দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত