Ajker Patrika

দেশে বিরল রোগ উইলসন্সের দুটি নতুন জিনগত রূপান্তর শনাক্ত

দেশে বিরল রোগ উইলসন্সের দুটি নতুন জিনগত রূপান্তর শনাক্ত

দেশে উইলসন্স্স ডিজিজের নতুন দুটি মিউটেশন (রূপান্তর) শনাক্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরোলজি বিভাগ এবং অ্যানাটমি বিভাগের যৌথ গবেষণায় মিউটেশনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৪ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। 

গবেষকেরা বলেন, উইলসন্স ডিজিজ একটি জেনেটিক ডিসঅর্ডার (জিনগত সমস্যা)। এতে শরীরে অতিরিক্ত কপার জমা হয়। লক্ষণগুলো সাধারণত মস্তিষ্ক এবং লিভারের (যকৃৎ) সঙ্গে সম্পর্কিত। লিভার সম্পর্কিত উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে—বমি, দুর্বলতা, পেটে তরল জমা হওয়া, পা ফুলে যাওয়া, ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া এবং চুলকানি। মস্তিষ্ক সম্পর্কিত লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—কাঁপুনি, পেশি শক্ত হওয়া, কথা বলতে সমস্যা, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, উদ্বেগ এবং মনোবিকার ইত্যাদি। 

টার্গেট জিন থেরাপির মাধ্যমে বিএসএমএমইউতে রোগটির চিকিৎসা হয় বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। 

নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, বেসিক সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আহমেদ আবু সালেহ্। 

গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু ও নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহসান হাবিব হেলাল। 

প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু জানান, গবেষণায় মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ৫০ জন, এর মধ্যে পুরুষ ২৮ জন এবং নারী ২২ জন। এর মধ্যে ৬ জন রোগীর মধ্যে ৩টি মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ২টিই বাংলাদেশে নতুন। টার্গেট জিন থেরাপির মাধ্যমে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। 

বাংলাদেশের প্রতি ৩০ হাজার জনে একজন উইলসন্স ডিজিজে আক্রান্ত। সে হিসাবে দেশে এখন এ ধরনের রোগীর সংখ্যা ৬ হাজারের মতো। বিএসএমএমইউতে এ পর্যন্ত ২০০ জনের চিকিৎসা হয়েছে। কারও মধ্যে এই রোগটি শনাক্ত হলে তাঁকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। চিকিৎসা বন্ধ করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। পরিবারের একজনের রোগটি শনাক্ত হলে অন্যদেরও দ্রুত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। 

নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহসান হাবিব হেলাল বলেন, এই গবেষণায় নিউরোলজি বিভাগের মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার ক্লিনিক এবং অন্তঃবিভাগ থেকে রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রোগী থেকে ৩ মিলি লিটার রক্ত সংগ্রহ করে অ্যানাটমি বিভাগের জেনেটিক ল্যাবে পাঠানো হয়। রোগীদের বয়সসীমা ছিল ৯ থেকে ৬০ বছরের ভেতরে। অধিকাংশ রোগী পাওয়া গেছে ৯ থেকে ৩০ বছরের ভেতর এবং এর সংখ্যা ছিল ৪৩ জন। গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রথম প্রজন্মের আত্মীয়দের মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন ৭ জন। 

দেখা গেছে, এই রোগের কারণে স্কুল ছাড়তে হয়েছে ২৬টি শিশুকে। ডা. আহসান হাবিব বলেন, ‘আমরা যেই রোগীগুলো পেয়েছি, তাঁদের ঢোক গিলতে সমস্যা ছিল ২৭ জনের, হাত পায়ের কম্পন ছিল ২৮ জনের, হাত–পা শক্ত হয়ে যাওয়া ছিল ২১ জনের, অনিয়ন্ত্রিত ঘাড় মোচড়ানো সমস্যা ছিল ১৪ জনের, অনিয়ন্ত্রিত হাত পা মোচড়ানোর সমস্যা ছিল ১১ জনের, নৃত্যের মতো অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া ছিল ৪ জনের।’ 

এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘বাবা–মা দুজনেরই যদি এই রোগের জিন থাকে, তাহলে সন্তানও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।’ 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক বলেন, মানবদেহের জন্য কপারের যেমন গুরুত্ব রয়েছে আবার অতিরিক্ত কপার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। উইলসন্স্স ডিজিজের মতো রোগ এড়াতে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে না করাই উত্তম। উইলসন্স ডিজিজটি মূলত উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। এটি নির্দিষ্ট জিনের পরিবর্তনের ফলে ঘটে যা একটি প্রোটিন তৈরির মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত তামা অপসারণ করে। এর ফলে শরীরে বিশেষত মস্তিষ্ক, যকৃৎ এবং চোখে তামা জমা হয়। অতিরিক্ত তামা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতিই উইলসন্স ডিজিজের উপসর্গগুলো তৈরি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থেমে নয়, একটানা হাঁটাই হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্য ও আয়ু বাড়ায়—নতুন গবেষণা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ০০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ সময় হাঁটার অভ্যাস শুধু মন ভালো রাখে না, বরং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে। ‘অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন’-এ প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণা এমনটাই জানিয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা একটানা ১০ মিনিটের বেশি সময় হাঁটেন, তাঁদের মধ্যে হৃদ্‌রোগ ও অকালমৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম। অন্যদিকে, যাঁরা হাঁটেন কিন্তু ছোট ছোট সময় ধরে, তাঁদের মধ্যে এই উপকারিতা কম দেখা গেছে।

গবেষণার প্রধান লেখক স্পেনের ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব মাদ্রিদের সহযোগী অধ্যাপক ড. বোরখা দেল পোজো ক্রুজ বলেন, ‘আমরা সাধারণত দৈনিক পদক্ষেপের সংখ্যা নিয়ে কথা বলি—যেমন ১০ হাজার পদক্ষেপের লক্ষ্য। কিন্তু আমাদের গবেষণা দেখিয়েছে, কীভাবে সেই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ; বিশেষ করে যাঁরা কম সক্রিয়, তাঁরা যদি অল্প সময়ের বদলে কিছু দীর্ঘ হাঁটা যোগ করেন, তাতেও হৃদ্স্বাস্থ্যে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।’

এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২৮ অক্টোবর) সিএনএন জানিয়েছে, বিশ্বের প্রায় ৩১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করেন না। তাঁদের অনেকে সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের কম ব্যায়াম করেন, যা হৃদ্‌রোগ, অনিদ্রা ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল জিউইশ হেলথ ইনস্টিটিউটের হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থতা বিভাগের পরিচালক ড. অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান বলেন, ‘প্রায় সবাই কিছু সময় হাঁটতে পারেন, কিন্তু ২০, ৩০ বা ৬০ মিনিট একটানা হাঁটা কঠিন হয়ে যায়। তাই ধীরে ধীরে সেই ক্ষমতা তৈরি করাটাই আসল বিষয়।’

দীর্ঘ সময় হাঁটার ফলে শরীরে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়, রক্তচাপ কমে এবং রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে প্রদাহ ও মানসিক চাপ কমে, হৃদ্‌পেশি শক্ত হয়। ফ্রিম্যান বলেন, ‘এটা অনেকটা ৪৫ কেজির ডাম্বেল তোলার মতো। প্রথমে পারা যায় না, কিন্তু অনুশীলনে সক্ষমতা বাড়ে—হৃদ্‌যন্ত্রও তেমনি।’

গবেষকেরা বলেন, প্রতিদিন নির্দিষ্ট ধাপের লক্ষ্য না রেখে বরং সময়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। দিনে অন্তত কিছু সময় একটানা হাঁটলে উপকার পাওয়া যায়। গতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে ধারাবাহিক ও দীর্ঘ সময় হাঁটা বেশি ফল দেয়।

ড. দেল পোজো ক্রুজ পরামর্শ দিয়েছেন, ‘দিনে একাধিকবার ২০-৩০ মিনিট করে টানা হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে শরীর সক্রিয় থাকবে, হৃদ্‌যন্ত্র মজবুত হবে।’

হাঁটার সঠিক ভঙ্গিও জরুরি—শরীর সোজা রাখুন, কাঁধ পেছনে দিন এবং হাত দোলান। এতে ভারসাম্য বজায় থাকে ও শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়।

গবেষণাটি যুক্তরাজ্যের ৩৩ হাজার প্রাপ্তবয়স্কের তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি হয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা দৈনিক ৮ হাজার ধাপের কম হাঁটতেন এবং কারও বড় রোগ ছিল না। এক সপ্তাহের ডেটা সংগ্রহের মাধ্যমে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়।

সবশেষে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিয়মিত ও দীর্ঘ সময় হাঁটা এমন একটি সহজ উপায়, যা ব্যয়বহুল চিকিৎসা ছাড়াই হৃদ্‌স্বাস্থ্য রক্ষা এবং আয়ু বৃদ্ধিতে অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে এক দিনে আরও ৬ জনের মৃত্যু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ২৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে এক দিনে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৯৮৩ জন।

এ ছাড়া এক সপ্তাহে সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছে ১০ জন এবং আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১২৬ জন। আর চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৬৯ জন এবং আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৬৬ হাজার ৪২৩ জন।

এ বছরের শুরু থেকে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটেছিল সেপ্টেম্বর মাসে, ১৫ হাজার ৮৬৬ জনের। চলতি অক্টোবরের সপ্তাহখানেক বাকি থাকতেই সংক্রমণের সংখ্যা তা ছাড়িয়ে গেছে। অক্টোবর মাসেই সবচেয়ে বেশি ১৯ হাজার ৮১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে সংক্রমণ গত মাসের রেকর্ড ছাড়াল, এক দিনে মৃত্যু আরও ৪

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ৩১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। কিছুদিন ধরেই কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কয়েকজন করে মারা যাচ্ছে মশাবাহিত এ রোগে। চলতি বছর এ পর্যন্ত মশাবাহিত রোগটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৩ জনে।

ডেঙ্গুবিষয়ক হালনাগাদ তথ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী। মৃত ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরগুনার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সংক্রমণ ও হাসপাতালে ভর্তির হারও ঊর্ধ্বমুখী। গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১৪৩ জন রোগী। এ নিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৪৪০ জনে।

এ বছরের শুরু থেকে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটেছিল সেপ্টেম্বর মাসে, ১৫ হাজার ৮৬৬ জনের। চলতি অক্টোবরের সপ্তাহখানেক বাকি থাকতেই সংক্রমণের সংখ্যা তা ছাড়িয়ে গেছে। অক্টোবর মাসেই সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৯৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৩১৯ জনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায়। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ২৮১, ময়মনসিংহে ৫৬, চট্টগ্রামে ১২১, খুলনায় ৬৫, রাজশাহীতে ৫৬, রংপুরে ৫০, বরিশালে ১৮৬ এবং সিলেটে ৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২ হাজার ৭৩৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৩০, আর রাজধানীর বাইরে ১ হাজার ৮০৩ জন ভর্তি রয়েছে।

দেশে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সে বছর মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন রোগী। এ ছাড়া ২০২৪ সালে ১ লাখ ১ হাজার ২১১,২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২,২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯,২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫ এবং ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দাঁতের যত্নে অবহেলায় হতে পারে বিপদ

ডা. পূজা সাহা
দাঁতের যত্নে অবহেলায় হতে পারে বিপদ

দাঁতের সমস্যা এখন আর শুধু বয়স্কদের নয়, সব বয়সে দেখা দেয়। অনেকে মনে করেন, বয়স বাড়লে দাঁত দুর্বল হয়। আসলে তা নয়। তবে দাঁতের সমস্যায় বেশির ভাগ কারণই প্রতিরোধযোগ্য। নিয়মিত যত্ন নিলে আর সঠিক অভ্যাসেই দাঁত সুস্থ রাখা সম্ভব।

দাঁতে ব্যথা হলে আগে কারণ জানা

দাঁতে ব্যথা মানেই শুধু ক্যাভিটি নয়। দাঁতের গোড়ায় পাথর জমে যাওয়া, স্নায়ুতে প্রদাহ, মাড়ির সংক্রমণ কিংবা দাঁতের ক্ষয়—এসব কারণেও ব্যথা হতে পারে। তাই দাতে ব্যথা হলে প্রথমে কারণটা জানা জরুরি। অস্থায়ী স্বস্তির জন্য দিনে কয়েকবার কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করা যেতে পারে। দাঁতের সেনসিটিভিটি কমানোর টুথপেস্টও কিছুটা সহায়ক। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য অবশ্যই দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

দাঁতের যত্ন মানেই সার্বিক সুস্থতা

দাঁতের যত্ন শুধু সুন্দর হাসির জন্য নয়, শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অংশও। দাঁতের ক্ষয় বা সংক্রমণ অবহেলা করলে তা মাড়ি, হাড় এমনকি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। সঠিক যত্নে এই সমস্যা অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়।

টক খাবারে দাঁতের ক্ষয়

অতিরিক্ত টক বা অ্যাসিডযুক্ত খাবার দাঁতের এনামেল দুর্বল করে দেয়। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল, লেবু, টমেটো বা টক স্যুপ নিয়মিত খেলে দাঁতের বাইরের স্তর ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। এতে দাঁত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, ব্যথা বা ঝাঁজালো অনুভূতি দেখা দেয়। যাদের পারিবারিকভাবে দাঁত দুর্বল, তাদের ঝুঁকি আরও বেশি। দাঁতের ক্ষয় পুরোপুরি বন্ধ না হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে তা মেরামত করা অনেকটা সম্ভব। ক্ষয়ের পরিমাণ অনুযায়ী ফিলিং বা অন্যান্য চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। এই অবস্থায় টক খাবার খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আর দাঁত ব্রাশ করার আগে অন্তত ৩০ মিনিট বিরতি দিন। অ্যাসিডজাতীয় খাবার খাওয়ার পরপরই দাঁত ব্রাশ করলে এনামেল আরও নরম হয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ায়।

স্কেলিং নিয়ে ভুল ধারণা

অনেকের ধারণা, দাঁতের স্কেলিং করালে দাঁত নরম বা আলগা হয়ে যায়। বাস্তবে এ তথ্য ভুল। স্কেলিংয়ের সময় দাঁতের পাথর বা ক্যালকুলাস সরানো হয়। স্কেলিংয়ের পর কিছু সময়ের জন্য দাঁত আলগা মনে হতে পারে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মাড়ি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। দাঁতে দাগ বা পাথর দেখা দিলে স্কেলিং করানো উচিত। তবে দাঁত সাদা করতে চাইলে আলাদা ব্লিচিং বা হোয়াইটেনিং চিকিৎসা লাগে।

দাঁত আঁকাবাঁকা হলে করণীয়

শিশুদের ক্ষেত্রে দুধদাঁত সময়ের আগে কিংবা পরে পড়লে স্থায়ী দাঁত সোজাভাবে ওঠে না। ফলে দাঁত আঁকাবাঁকা হয়ে যায়। এতে শুধু চেহারার সৌন্দর্য নয়, উচ্চারণেও প্রভাব পড়তে পারে। এ সমস্যা থাকলে দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শে অর্থোডন্টিক চিকিৎসা (ব্রেস অথবা অ্যালাইনার) নেওয়া যায়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শিশুর বয়স, দাঁতের অবস্থা এবং মুখের গঠন বিবেচনা করা জরুরি।

কিছু সাধারণ পরামর্শ

  • দিনে অন্তত দুবার নরম ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করুন।
  • প্রতি তিন মাসে একবার টুথব্রাশ পরিবর্তন করুন।
  • আঁশযুক্ত ও ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান।
  • চিনি বা টক খাবার খাওয়ার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • বছরে অন্তত একবার দাঁতের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁত পরীক্ষা করান।
  • দাঁতের ব্যথা, ক্ষয় অথবা সেনসিটিভিটি দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিন। কারণ, দাঁত হারানো মানে শুধু সৌন্দর্য নয়, আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলা। নিয়মিত যত্ন নিলে দাঁত থাকবে মজবুত, আর হাসিও হয়ে উঠবে উজ্জ্বল।

লেখক: ডেন্টাল সার্জন, সিকদার ডেন্টাল কেয়ার, মিরপুর, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত