Ajker Patrika

দুঃসহ স্মৃতি ভুলে যাওয়ার কৌশল আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা

অনলাইন ডেস্ক   
Thumbnail image
এটি বাস্তব জীবনের চিন্তা এবং ইতিবাচক বা নেতিবাচক স্মৃতি গঠনের সঠিক প্রতিফলন না-ও হতে পারে। ছবি: সাইকোলগস

বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যা সৃষ্টি করতে পারে খারাপ বা দুঃসহ স্মৃতি। তবে এই ধরনের স্মৃতি ভুলে যেতে বা মুছে ফেলতে নতুন একটি কৌশল খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই কৌশলে ইতিবাচক স্মৃতিগুলোকে পুনরায় সক্রিয় করে নেতিবাচক স্মৃতিগুলো দুর্বল করা যায়।

এই গবেষণার জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে ৩৭ জন অংশগ্রহণকারী নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আন্তর্জাতিক গবেষক দলটি। গবেষকেরা অংশগ্রহণকারীদের কিছু এলোমেলো শব্দের সঙ্গে নেতিবাচক ছবি সম্পর্কিত করতে বলেন। এরপর সেগুলোর মধ্যে অর্ধেকের জন্য সেই সম্পর্কগুলো পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয় এবং খারাপ স্মৃতিগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়।

গবেষক দলটি নেতিবাচক ও ইতিবাচক ছবি নিয়ে পরিচিত ডেটাবেইস ব্যবহার করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, শান্ত প্রাকৃতিক দৃশ্য বা হাস্যোজ্জ্বল শিশুর ছবি। অপরদিকে মানুষের ওপর আঘাতের বা বিপজ্জনক প্রাণীর ছবি ব্যবহার করা হয়।

প্রথম দিন প্রশিক্ষণ মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবীদের নেতিবাচক ছবি অদ্ভুত কিছু শব্দের সঙ্গে যুক্ত করতে বলা হয়, যা শুধু এই গবেষণার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। পরদিন ঘুম থেকে জাগার পর অংশগ্রহণকারীদের মনের মধ্যে অর্ধেক শব্দকে ইতিবাচক ছবির সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেন গবেষকেরা, যাতে স্মৃতিগুলো আরও মজবুত হয়।

দ্বিতীয় রাতের ঘুমের সময় অদ্ভুত শব্দগুলোর রেকর্ডিং শোনা হয়। এই রেকর্ডিংগুলো নন-র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (এরআরইএম) ঘুমের পর্যায় শোনানো হয়েছিল। পর্যায়টি স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্কের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে ইলেকট্রোএন্সেফালোগ্রাফি (ইইজি) ব্যবহার করা হয়েছিল।

অডিও রেকর্ডিংগুলো শোনার পর মস্তিষ্কে থেটা-ব্যান্ড কার্যকলাপ বেড়ে যায়। এই কার্যকলাপ আবেগপূর্ণ স্মৃতি প্রক্রিয়াধীন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ; বিশেষ করে, যখন ইতিবাচক সংকেত ব্যবহার করা হয়েছিল, তখন এই কার্যকলাপ অনেক বেশি ছিল।

পরবর্তী দিন এবং কয়েক দিন পর অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্ন করে গবেষকেরা দেখতে পান, যেগুলো ইতিবাচক স্মৃতির সঙ্গে মেলানো হয়েছিল, সেসব নেতিবাচক স্মৃতি কম মনে করতে পারছিলেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। এই শব্দগুলোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক স্মৃতিগুলো বেশি মনে পড়ছিল এবং সেগুলোকে তারা আরও ইতিবাচকভাবে অনুভব করছিল।

এই গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া গবেষণাটি পরীক্ষাগারে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে করা হয়। তবে এটি বাস্তব জীবনের চিন্তা এবং ইতিবাচক বা নেতিবাচক স্মৃতি গঠনের সঠিক প্রতিফলন না-ও হতে পারে।

গবেষকেরা বলেন, ল্যাব পরীক্ষায় নেতিবাচক ছবি দেখার মাধ্যমে স্মৃতি গঠনে যে প্রভাব পড়ে, তা বাস্তবে একটি ট্রমাটিক ঘটনা অভিজ্ঞতা লাভ করার মতো বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না। বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্ভবত ভুলে যাওয়া কিংবা পরিবর্তন করা আরও কঠিন হতে পারে।

তাঁরা আরও বলেন, ‘আমরা জানি, মস্তিষ্ক ঘুমের সময় স্মৃতিগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করার জন্য সেগুলো অল্প সময়ের জন্য আবার চালিয়ে দেখে। অনেক গবেষণা এরই মধ্যে এই প্রক্রিয়া কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, তা নিয়ে কাজ করেছে, যাতে ভালো স্মৃতিগুলো মজবুত করা যায় বা খারাপ স্মৃতিগুলো মুছে ফেলা যায়।’

স্মৃতি মনে রাখার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের বিষয় প্রভাব ফেলে। যেমন স্মৃতির ধরন, মস্তিষ্কের অঞ্চল এবং ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়। তবে নেতিবাচক স্মৃতিগুলোকে ইতিবাচক স্মৃতির সঙ্গে প্রতিস্থাপন করার এই প্রক্রিয়া কিছুটা প্রতিশ্রুতিশীল মনে হচ্ছে।

গবেষকেরা লেখেন, ‘আমাদের ফলগুলো নেতিবাচক কিংবা যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতিগুলো দুর্বল করার জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।

এই গবেষণা পিএনএএস-জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত