Ajker Patrika

স্তন ক্যানসার রোধে পরিবার থেকেই সচেতনতা প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২২, ১৮: ৫৬
Thumbnail image

দেশে প্রতিবছর ১৫ হাজারের বেশি নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন, যাঁদের বড় একটি অংশ কম বয়সী। এ জন্য এটি রোধে পরিবার থেকে সচেতনতার কার্যক্রম চালাতে হবে। একই সঙ্গে স্কুল-কলেজ পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে পাঠ্যক্রমে এ বিষয়টি যুক্ত করতে হবে বলেও মনে করছেন ক্যানসার চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।

আজ শনিবার দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম আয়োজিত ‘স্তন ক্যানসার সচেতনতায় চাই সামাজিক আন্দোলন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৩ সালে স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম গঠন ও এর উদ্যোগে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বাংলাদেশে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস পালিত হয়ে আসছে। গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রা, সচেতনতা ও ফ্রি স্ক্রিনিংসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দিবস পালন করা হয়। এ বছর এই দিবস উদ্‌যাপিত হবে দশমবারের মতো। একযোগে ৬৪ জেলায় ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সম্পৃক্ত করে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে বলেও ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ ও জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।

হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, গত বছর ঢাকায় সাড়ে ৫০০ নারীর স্ক্রিনিং হয়েছে। ঢাকার বাইরে অন্তত ৩০টি জেলায় সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এবার ৬৪টি জেলায় করার ইচ্ছা। সরকারি হিসেবে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস ঘোষণা করতে হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে জাতীয় কমিটি গঠন করা হবে। ক্যানসার চিকিৎসায় সারা দেশের আরও আটটি মেডিকেল কলেজে ব্যবস্থা হয়েছে। প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চলছে। এই রোগের বেশির ভাগ রোগীই প্রান্তিকের। সচেতনতার অভাবে শেষ সময়ে গিয়ে চিকিৎসা নেন। একই সঙ্গে পাঠ্যক্রমে এটির সচেতনতায় যুক্ত করতে হবে। তাহলে শুরুতেই সচেতন হলে প্রতিরোধ করতে পারবে। 

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন সোসাইটি ফর হেলথ প্রমোশন লিংকসের সভাপতি ডা. হালিদা হানুম আক্তার। তিনি বলেন, নারীর কোনো একটি অঙ্গ তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। স্তন ক্যানসার এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাই এটি নিয়ে সচেতন ও প্রতিরোধ পরিবার থেকে শুরু করতে হবে। বিশেষ করে নারীকেই সচেতন হতে হবে। মা জানলে মেয়ে সুস্থ থাকবে। শুধু নারী নয়, পুরুষদেরও এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে, এই রোগ শুধু নারীর না, ওই পরিবারের জন্য বড় বোঝা এবং ভোগান্তি। প্রটেক্টিভ হেলথের ব্যাপারে আমাদের জোর দিতে হবে। এ জন্য প্রান্তিক পর্যায়ে সচেতন করতে হবে। গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্তন ক্যানসারে এক সময়ে ২২ হাজার নারী আক্রান্ত হতো, বিনা চিকিৎসায় মারা যেত ৭০ ভাগ। সচেতনতা বাড়াতে বর্তমানে সেটি কমেছে। শুরু থেকে আমরা সব ধরনের রোগেরই চিকিৎসা দিতে চেয়েছি। সরকারের সহযোগিতায় ৯২ জন নারী চিকিৎসককে সার্জারি চিকিৎসায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন জেলা পর্যায়েও স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। স্তন ক্যানসারের সার্জিক্যাল অপারেশনের জন্য যাতে কাউকে অন্য কোনো দেশে না যেতে হয় সেই চেষ্টা চলছে। তবে আমাদের গ্রামাঞ্চলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমাদের মায়েদের যদি সচেতন করতে পারি, তাহলে মেয়েসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও সচেতন হবে।

ডা. ছয়েফ উদ্দিন বলেন, ক্যানসার বিশেষ করে স্তন ক্যানসারের রোগী গ্রামে-গঞ্জে খুঁজে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশের থেকে আমাদের দেশীয় চিকিৎসা অনেকটা ভালো। সরকারের কাছে আবেদন, ১০ অক্টোবরকে সচেতনতা দিবস ঘোষণা করতে হবে। সবার উদ্যোগে কিংবা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ দেশ একদিন ক্যানসার মুক্ত হবে এটাই আশা করছি।

হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হাসান সোহেল বলেন, দেশে ক্যানসার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্রতিবছর ১৫ হাজারের বেশি শনাক্ত ও আট হাজার রোগীর মৃত্যু হচ্ছে, যা চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের বেশির ভাগই শেষ পর্যায়ে। তবে যেহেতু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুব বেশি নয়, তাই সচেতনতার পাশাপাশি সরকারিভাবে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা উচিত। আমি বিশ্বাস করি, সরকারের সেই সক্ষমতা আছে। চাইলেই পারা সম্ভব। 

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সচেতনতা চললেও এটি কতটা সম্ভব হয়েছে সেই গবেষণা নেই। দেশে বর্তমানে ধারণার ওপর নির্ভর করে রোগীর সংখ্যা বলা হচ্ছে ৷ অনেক বছর ধরে কোন পরিসংখ্যান নেই। বর্তমানে একটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ডায়াগনস্টিকের ব্যবস্থা নেই। বিকেন্দ্রীকরণ না থাকায় কোনোটাই ঠিকমতো হচ্ছে না। 

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সারা দেশে যদি একটি প্রাণঘাতী রোগ থাকে তার প্রধান পুরুষদের ফুসফুস ক্যানসার, নারীদের স্তন ক্যানসার। দেশের সব জেলা সদর হাসপাতালে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে ছোট বেলা থেকেই যদি ছেলে-মেয়েদের সচেতন করা যায়, তাহলে অনেক বেশি কাজে দেবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সচেতনতায় কাজ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কর্মীরা যদি বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেয়, তাহলে অনেকটা এগোবে। তাহলে ডাটাটা তুলে আনা সম্ভব। 

স্বপন কুমার বলেন, নারীদের স্তন, ওরাল ও সার্ভাইক্যালের ক্যানসার হয়ে থাকে। এগুলো নিয়ে বিশেষ করে স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতামূলক নাটক তৈরির কাজ চলছে, যাতে দ্রুত সচেতন ও শনাক্ত করা যায়। আগে সচেতন না হওয়ায় শেষ পর্যায়ে এসে চিকিৎসা নিতে আসত। তখন ব্যয় বেড়ে যায়। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ সেটাতে ব্যয় হয়। তবে ১০ অক্টোবরকে দিবস ঘোষণা হোক বা না হোক, বছরের পুরো সময় এটি নিয়ে কাজ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত