Ajker Patrika

সৌন্দর্যচর্চায় জনপ্রিয় হচ্ছে মাছের শুক্রাণুর তৈরি ইনজেকশন, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ১৩
ম্যানচেস্টারের একটি ক্লিনিকে ২৯ বছর বয়সী অ্যাবি ওয়ার্নেসের মুখে ইনজেকট করা হচ্ছে ‘পলিনিউক্লিওটাইডস’। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ম্যানচেস্টারের একটি ক্লিনিকে ২৯ বছর বয়সী অ্যাবি ওয়ার্নেসের মুখে ইনজেকট করা হচ্ছে ‘পলিনিউক্লিওটাইডস’। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

বহু বছর ধরে স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বিষয়ে প্রতিবেদন লেখেন বিবিসির স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদক রুথ ক্লেগ। কিন্তু মাছের শুক্রাণুর তৈরি ইনজেকশন কেমন লাগে— এমন প্রশ্ন তাঁকে কখনো করতে হবে, ভাবেননি। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া অভিনব এই রূপচর্চা তাঁকে এমন প্রশ্ন করতে বাধ্য করেছে।

ম্যানচেস্টারের একটি ছোট ক্লিনিকে ২৯ বছর বয়সী অ্যাবি ওয়ার্নেস শুয়ে আছেন কালো প্যাডেড চেয়ারে। তাঁর মুখে ক্যানুলা ঢোকানো হচ্ছে, আর তিনি ব্যথায় কেঁপে উঠছেন। তবে অ্যাবি সরাসরি ট্রাউট বা স্যামন মাছের শুক্রাণু গ্রহণ করছেন না। বরং তাঁর মুখে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে ‘পলিনিউক্লিওটাইডস’। এটি হল মাছের শুক্রাণু থেকে সংগ্রহ করা ক্ষুদ্র ডিএনএ।

বিজ্ঞানীদের দাবি—মানুষের ডিএনএ ও মাছের ডিএনএর মধ্যে বেশ মিল আছে। মানুষের শরীর এগুলো ‘গ্রহণ’ করে ত্বকে কোলাজেন ও ইলাস্টিন উৎপাদন বাড়াতে পারে। এই দুই প্রোটিন ত্বকের গঠন, দৃঢ়তা ও স্থিতিস্থাপকতার জন্য অপরিহার্য।

অ্যাবির লক্ষ্য হলো—ত্বককে সতেজ করা, ব্রণজনিত দাগ কমানো ও লালচে ভাব হ্রাস করা। তাই মাছের শুক্রাণু থেকে সংগ্রহ করা ক্ষুদ্র ডিএনএ নিয়ে তাঁর মুখের ত্বকে ইনজেকট করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ‘স্যামন স্পার্ম ফেসিয়াল’ ট্রেন্ড জনপ্রিয় হয়েছে বিশেষ করে সেলিব্রিটিদের কারণে। জনপ্রিয় ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী চার্লি এক্সসিএক্স বলেন, ‘ফেসিয়াল ফিলারের যুগ শেষ।’ এখন তিনি পলিনিউক্লিওটাইডস ব্যবহার করেন। এ ছাড়া কিম কার্দাশিয়ান, ক্লোয়ি কার্দাশিয়ানসহ আরও অনেকে নিয়মিত নাকি এসব ইনজেকশন নেন।

প্রসঙ্গত, ফেসিয়াল ফিলার হল জেলের মতো একধরনের পদার্থ। এটি ত্বকের ভেতরে বা নীচে ইনজেকট করা হয় যাতে ত্বক মসৃণ হয় ও বলিরেখা দূর হয়। এগুলো সাধারণত হায়ালুরোনিক অ্যাসিড দিয়ে তৈরি হয়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীর দ্বারা শোষিত হয়ে যায়। তবে বর্তমানে এই ফেসিয়াল ফিলারের পরিবর্তে পলিনিউক্লিওটাইডস বা মাছের শুক্রাণু থেকে সংগ্রহ করা ক্ষুদ্র ডিএনএ ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।

সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্বক পুনর্জীবিত করতে পলিনিউক্লিওটাইডস জনপ্রিয় হচ্ছে। ত্বকের পরিচর্যা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘ডার্মাফোকাস’-এর সুজান ম্যানসফিল্ড বলেন, ‘আমরা যেন বেনজামিন বাটন মুহূর্তে!’ ২০০৮ সালের একটি সিনেমার চরিত্র বেনজামিন বাটন, যার বয়স বাড়ার বদলে উল্টো কমে।

জনপ্রিয় ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী চার্লি এক্সসিএক্সও স্যামন স্পার্ম ফেসিয়াল ব্যবহার করেন। ছবি: ইপিএ
জনপ্রিয় ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী চার্লি এক্সসিএক্সও স্যামন স্পার্ম ফেসিয়াল ব্যবহার করেন। ছবি: ইপিএ

যদিও বাস্তবে এমন চরম পরিবর্তন সম্ভব নয়, তবে গবেষণা বলছে—এ ধরনের ইনজেকশন ত্বককে সুস্থ করে, সূক্ষ্ম রেখা কমায় এবং দাগ হ্রাসে সহায়তা করতে পারে।

তবে এসব ইনজেকশনের দাম বেশ চড়া। প্রতিবার ইনজেকশনের খরচ ২০০ থেকে ৫০০ পাউন্ড (বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রায় ২৫ থেকে ৬১ হাজার টাকা)। এটি নিতে চাইলে প্রথমবার ৩টি সেশনের প্রয়োজন। এরপর প্রতি ৬ থেকে ৯ মাস পর আবার নিতে হয়।

ম্যানচেস্টারের ‘স্কিন এইচডি’ ক্লিনিকের নার্স হেলেনা ডাঙ্ক বলেন, ‘গত দেড় বছরে এ চিকিৎসার জনপ্রিয়তা কয়েক গুণ বেড়েছে। যাঁরা এটি নিয়েছেন, তাঁদের অর্ধেকই মনে করেন, ত্বকের দারুণ উন্নতি হয়েছে। অন্যরা খুব বেশি পরিবর্তন না পেলেও ত্বক টাইট ও সতেজ হয়েছে বলে মনে করেন।’

অ্যাবি ইতিমধ্যে চোখের নিচে তিন দফা ইনজেকশন নিয়ে সন্তুষ্ট। ব্যথা হলেও ফলাফলে তিনি খুশি।

তবে কিছু বিশেষজ্ঞ সতর্ক করছেন—এই চিকিৎসা নিয়ে ‘হাইপ’ বৈজ্ঞানিক প্রমাণের চেয়ে এগিয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড. জন পাগলিয়ারো বলেন, ‘আমরা জানি নিউক্লিওটাইড শরীরের জন্য জরুরি। কিন্তু সালমনের ডিএনএ কেটে মুখে ঢোকালে ঠিক কতটা কাজ করবে—এর শক্ত প্রমাণ এখনো নেই। বড় ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা দরকার।’

নিউইয়র্কের ৩১ বছর বয়সী চার্লট বিকলির অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। বিয়ের আগে ‘গ্লো-আপ’ করতে গিয়ে তিনি পলিনিউক্লিওটাইড ইনজেকশন নেন। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো—সংক্রমণ, প্রদাহ ও আরও গাঢ় ডার্ক সার্কেল।

তিনি মনে করেন, চিকিৎসক খুব গভীরে ইনজেকশন দেওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জি, স্থায়ী পিগমেন্টেশন বা সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি ভাবতেই পারি না কেন এটা করলাম! এখনো মুখে দাগ আছে।’

এদিকে যুক্তরাজ্যে এগুলো মেডিকেল ডিভাইস হিসেবে নিবন্ধিত হলেও ওষুধ হিসেবে নিয়ন্ত্রিত নয়। এখন বাজারে এমন অনেক পণ্য ঢুকছে, যা যথাযথ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি—এটাই সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।

‘সেভ ফেস’ সংগঠনের পরিচালক অ্যাশটন কলিন্স বলেন, ‘প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও সঠিক ব্র্যান্ড ব্যবহার করলে সাধারণত এটা নিরাপদ। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত পণ্য বাড়ছে, সেটাই ভয়।’

ব্রিটিশ কলেজ অব অ্যাস্থেটিক মেডিসিনের সভাপতি ড. সোফি শটার বলেন, ‘আমি রোগীকে এটি দিই, তবে এটা কোনো সমাধান নয়। এটা ছাড়াও বাজারে অনেক পরীক্ষিত চিকিৎসা আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকের শরীরের প্রতিক্রিয়া আলাদা। সবাই একই ফল পাবেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিমানবন্দরে দুই কোটি টাকার স্বর্ণসহ হজের মুয়াল্লিম গ্রেপ্তার

ধানের শীষের বাইরে কেউ নির্বাচন করলে কোনো কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারবে না: বিএনপি নেতা স্বপন

নির্বাচন কমিশন: সংলাপে না ডাকলেও ৭ দলের ভোটে বাধা দেখছে না ইসি

আজকের রাশিফল: প্রতিশোধের প্রবল ইচ্ছা জাগবে, আজ কিছু একটা হারাবেই

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৪৪ ভবন: ঝুঁকিতে হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ