Ajker Patrika

ব্যাডমিন্টন খেলায় চোখে আঘাত পেলে করণীয়

ডা. মো. আরমান হোসেন রনি 
ব্যাডমিন্টন খেলায় চোখে আঘাত পেলে করণীয়

ব্যাডমিন্টন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও দ্রুতগতির ইনডোর খেলা। শাটলককের গতিবেগ কখনো কখনো ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ফলে খেলোয়াড়দের চোখ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বিশেষত ডাবলস খেলায় হঠাৎ শাটলকক বা র‍্যাকেটের আঘাত চোখে লাগা অস্বাভাবিক নয়। চোখে আঘাত পেলে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। না হলে দৃষ্টিশক্তির স্থায়ী ক্ষতি, এমনকি অন্ধত্বের মতো ঘটনা পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী করণীয়, তা জানা সবার জন্যই জরুরি।

চোখে আঘাতের সাধারণ লক্ষণ

ব্যাডমিন্টনের শাটলকক বা র‍্যাকেট চোখে লাগলে যে উপসর্গ দেখা দিতে পারে:

  • তীব্র ব্যথা বা জ্বালা
  • চোখ ও চোখের পাতা ফুলে যাওয়া
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা রক্তক্ষরণ
  • আলোতে তাকাতে অসুবিধা
  • চোখের ভেতরে কালো দাগ, ছোপ ছোপ দেখা
  • চোখ থেকে পানি পড়া
  • চোখ নাড়াচাড়া করলে ব্যথা
  • এগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলেও বিষয়টি হেলাফেলা করা উচিত নয়।

আঘাত পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক করণীয়

শান্ত থাকুন এবং চোখ নাড়াচাড়া কমান: আঘাতের পর অতিরিক্ত চোখ ঘষা, চেপে ধরা বা নাড়াচাড়া করলে ভেতরের ক্ষতি আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রথমেই শান্ত থাকুন এবং চোখটি যতটা সম্ভব স্থির রাখুন।

ঠান্ডা সেঁক দিন: একটি পরিষ্কার কাপড়ে বরফ বা ঠান্ডা পানি নিয়ে বন্ধ চোখের পাতার ওপর ১০-১৫ মিনিট ধরে হালকা সেঁক দিন। এতে ব্যথা ও ফোলা ভাব কমে আসবে। তবে খুব বেশি চাপ দেবেন না।

চোখ ঘষা বা চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন: চোখে ভেতরে রক্তক্ষরণ বা কর্নিয়ায় ক্ষত থাকলে ঘষা বা চাপ দিলে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।

কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে সঙ্গে সঙ্গে খুলে ফেলুন: লেন্সের ওপর আঘাত লাগলে এটি ভেঙে চোখের ভেতরে বেশি ক্ষতি করতে পারে। তবে খুলতে গিয়ে ব্যথা বা অসুবিধা হলে জোর করবেন না। চিকিৎসকের সাহায্য নিন।

কোনোভাবেই ঘরোয়া চোখের ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন না: চোখে আঘাতের ধরন না জেনে ওষুধ ব্যবহার করলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। বিশেষত স্টেরয়েডজাতীয় আই ড্রপ কখনোই নিজে থেকে ব্যবহার করা যাবে না।

জরুরি চিকিৎসা নেওয়া কেন প্রয়োজন?

চোখ অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ। আঘাতের পর বাহ্যিকভাবে সামান্য ফোলা বা লাল ভাব দেখালেও ভেতরে রেটিনা, আইরিশ বা লেন্সে গুরুতর ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে, যা সাধারণ মানুষের চোখে বোঝা যায় না। বিশেষভাবে কয়েক ধরনের আঘাত খুব বিপজ্জনক—

চোখের ভেতরে রক্ত জমা হওয়া: ব্যাডমিন্টনের আঘাতে এটি সবচেয়ে সাধারণ। চোখের কালো অংশে রক্ত জমে গিয়ে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায় এবং চোখের চাপ বেড়ে গ্লুকোমা হতে পারে। এটি জরুরি অবস্থা।

কর্নিয়ায় ক্ষত বা আঁচড়: আঘাতের ফলে চোখে তীব্র ব্যথা, আলো সহ্য না হওয়া, পানি পড়া দেখা দেয়। দ্রুত চিকিৎসা না হলে সংক্রমণ হয়ে চোখে স্থায়ী দাগ পড়তে পারে।

রেটিনার আঘাত বা রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়া: রেটিনা ছিঁড়ে গেলে চোখের সামনে আকস্মিক আলো ঝলকানি, কালো দাগ, ছায়া দেখা দিতে পারে। এটি উপেক্ষা করলে দৃষ্টি নষ্ট হতে পারে।

চোখের হাড় ভেঙে যাওয়া: র‍্যাকেটের শক্ত আঘাতে চোখের চারপাশের হাড় ভেঙে যেতে পারে। এতে চোখ ভেতরে ঢুকে যাওয়া, ডাবল ভিশন বা চোখ নাড়াতে সমস্যা হতে পারে।

ওপরের যেকোনো অবস্থাই অত্যন্ত গুরুতর, তাই দ্রুত চক্ষুবিশেষজ্ঞ বা কাছের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যেতে হবে।

চোখের আঘাত প্রতিরোধে করণীয়

প্রোটেকটিভ আই গ্লাস বা স্পোর্টস গগলস ব্যবহার করুন: বিশেষ করে দুজন এক পক্ষে খেলার সময় চোখের ঝুঁকি অনেক বেশি। স্পোর্টস গগলস আঘাতের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়।

খেলায় পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখুন: পার্টনারের কাছাকাছি দাঁড়ালে র‍্যাকেট চোখে লাগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

শট মারার সময় সতর্কতা: জোরে স্ম্যাশ মারার আগে সতর্ক করলে পার্টনার প্রস্তুত হতে পারে।

শিশুরা বা নবীন খেলোয়াড়দের জন্য বাড়তি সতর্কতা: তাদের সমন্বয় দক্ষতা কম থাকায় চোখে আঘাত লাগার ঝুঁকি বেশি।

লেখক: চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ধানের শীষের বাইরে কেউ নির্বাচন করলে কোনো কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারবে না: বিএনপি নেতা স্বপন

নির্বাচন কমিশন: সংলাপে না ডাকলেও ৭ দলের ভোটে বাধা দেখছে না ইসি

আজকের রাশিফল: প্রতিশোধের প্রবল ইচ্ছা জাগবে, আজ কিছু একটা হারাবেই

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৪৪ ভবন: ঝুঁকিতে হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন

তিতুমীর কলেজে ছাত্রদল-শিবিরের সংঘর্ষ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ