Ajker Patrika

সরকারি হাসপাতালে সেবা: ঘরে বসেই টিকিট অ্যাপয়েন্টমেন্ট

রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
সরকারি হাসপাতালে সেবা: ঘরে বসেই টিকিট অ্যাপয়েন্টমেন্ট

শিশুসন্তানের শরীরে চুলকানি হওয়ায় সকালেই তাকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে হাজির আসিয়া। টিকিট পেতেই তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় ২০ মিনিট। এরপর ডাক্তার দেখাতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন এক ঘণ্টার ওপরে। রোগীর সারি দোতলায় ডাক্তারের কক্ষের সামনে থেকে নিচতলা হয়ে গেটের দিকে চলে গেছে। গত ২৭ জানুয়ারি এমন চিত্র দেখা যায় টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে। যদিও দেশের সব সরকারি হাসপাতালের চিত্র প্রায় একই রকম।

রোগীদের এমন ভোগান্তি কমাতে এবার স্মার্ট হেলথ আইডির উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই উদ্যোগ সফল হলে রোগী অনলাইনে আগেই ই-অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবে। এতে রোগীকে সকালে হাসপাতালে গিয়ে একবার টিকিটের জন্য, আরেকবার ডাক্তার দেখানোর জন্য সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ১০টি হাসপাতালে এই কার্যক্রম চালু করা হবে। তবে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সব নাগরিককে এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যেকোনো নাগরিক তাঁর হাতে থাকা মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটার দিয়ে ওয়েব অথবা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। নিবন্ধন সম্পন্ন হলে তিনি একটি হেলথ আইডি পাবেন এবং নিজেই হেলথ কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন। নাগরিকেরা এই ব্যবস্থার আওতাভুক্ত হাসপাতালগুলোতে ই-টিকিট কিনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে পারবেন। টিকিট কিনতে মোবাইল ব্যাংকিং অথবা অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা মিলবে। এ ছাড়া হাসপাতালে সেবাপ্রাপ্তির তথ্য নাগরিকের হেলথ আইডির মাধ্যমে চিহ্নিত হয়ে তাঁর কেন্দ্রীয় প্রোফাইলে সংরক্ষিত থাকবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটি সম্পন্ন হলে রোগীকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হবে না। নাগরিক তাঁর নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে আসবেন, এতে সময় সাশ্রয় হবে। হাসপাতালে একই সময়ে অনেক রোগীর চাপ কমবে। নাগরিকের স্বাস্থ্য তথ্য হেলথ আইডির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় প্রোফাইলে সংরক্ষিত থাকায় নাগরিককে স্বল্প সময়ে সঠিক ও গুণগত চিকিৎসা প্রদান সহজ হবে।

একই সময়ে সব রোগীর হাসপাতালে আগমন এবং টিকিট কেনাসহ সেবাপ্রাপ্তির চেষ্টা করায় রোগীর চাপ সামলে গুণগত সেবাদান ব্যাহত হয়। কাগজে হাতে লিখে সেবা দিতে সময় বেশি লাগে। নাগরিকের প্রয়োজন অনুযায়ী কোন হাসপাতাল বা কোন বিভাগের চিকিৎসক দেখাবেন, তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ায় অবাঞ্ছিত ব্যক্তির মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

অধিদপ্তরের এমআইএস সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে যে ১০টি হাসপাতালে এই কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে আছে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল, কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, এটি ভালো উদ্যোগ। দ্রুত এটি বাস্তবায়িত হলে জনগণের দুর্ভোগ কমবে। তবে এটা কমিটমেন্ট নিয়ে করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় মাঝপথে যেন থেমে না যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, প্রধানমন্ত্রীর অনেক নির্দেশনাও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে যায়। অধিদপ্তর থেকে নানা প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হারিয়ে যায়।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আপাতত ১০টি হাসপাতালে এই কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এটা একটি অপারেশনাল প্ল্যানে সংযুক্ত করে সারা দেশে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা রোগীদের এনআইডি থেকে তথ্য নিয়ে স্মার্ট হেলথ আইডি তৈরি করে দেব। পুরোপুরি চালু হলে নিজেই নিজের আইডি তৈরি করতে পারবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত