Ajker Patrika

সরকারি ওষুধ চুরি করছেন রামেক হাসপাতালের কর্মচারীরা

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৪: ৫৯
Thumbnail image

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী চুরির সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতিনিয়তই দামি দামি ওষুধ, ব্যান্ডেজ, স্যালাইনসহ অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী চুরি করছেন। ওয়ার্ড, স্টোর কিংবা অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) ইনচার্জদের সহায়তায় সরকারি এসব ওষুধ বাইরে নিয়ে বিক্রি করছেন চক্রের সদস্যরা।

সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে বেশ কিছু ব্যান্ডেজ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় কামরুজ্জামান রনি নামের এক কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। রনি অর্থোপেডিক সার্জারির ওটি থেকে এসব ব্যান্ডেজ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি হাসপাতালের দৈনিক মজুরিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিয়ত ওষুধ চুরির কারণে রোগীরা সরকারি ওষুধ বিনা মূল্যে পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এ জন্য ওষুধ ও সরঞ্জাম চুরি রোধে সম্প্রতি হাসপাতালের পরিচালক পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। চুরির সঙ্গে যে-ই জড়িত থাকুন না কেন, তাঁকে আটকের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘হাসপাতালে একটা চোর চক্র রয়েছে। অনেক দিন ধরে তারা ওষুধসহ অন্যান্য মেডিকেলসামগ্রী চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আমার লোকজন দিয়ে এদের শনাক্ত করেছি। তাদের নজরদারি করা হচ্ছে। ফলে মাঝেমধ্যেই তারা ধরা পড়ছে।’

গতকাল পরিচ্ছন্নতাকর্মী কামরুজ্জামান রনি বেশ কিছু ব্যান্ডেজ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় হাসপাতালের পুলিশ বক্সের সদস্যরা তাঁকে আটক করেন। পরে তাঁকে পরিচালকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি তাঁকে থানায় হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া হাসপাতালের পক্ষ থেকে রনির বিরুদ্ধে মামলা করারও নির্দেশ দিয়েছেন পরিচালক।

জানা গেছে, সম্প্রতি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় বাজারে স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ১৯ অক্টোবর রাতে ডেঙ্গু রোগীদের চার কার্টন স্যালাইন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন মেহেদী হাসান নামের এক কর্মচারী। হাসপাতাল সূত্র বলছে, অর্থোপেডিক ওটির ইনচার্জ আব্দুর রহমানের সহযোগিতায় মেহেদী ওই স্যালাইন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আনসার সদস্যরা তাঁকে আটক করলেও পরে কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। এর পাঁচ দিনের মধ্যে এবার ব্যান্ডেজ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লেন কামরুজ্জামান রনি।

গত বছরের আগস্টে হাসপাতাল থেকে এক কর্মচারীর ওষুধ চুরির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ওই চুরির ভিডিও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেডিসিন ব্লকে স্টাফের ওষুধ চুরি। রোগীর ওষুধ কিনতে হয়, আর সরকারি ওষুধ চুরি হয়।’ তবে ওই কর্মচারীকে শনাক্ত করেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর ওষুধ চোর দুই কর্মচারী ধরা পড়েন।

সেদিন দুপুরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দ্বিতীয় গেট দিয়ে ‘ওয়াটার ফর ইনজেকশন’ নামের ১০ প্যাকেট ওষুধ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন দৈনিক মজুরিভিত্তিক দুই ওয়ার্ড বয়। আনসার সদস্যরা তাঁদের আটক করেন। এই দুজন হলেন রেজয়ানুল ইসলাম রেজু (৪০) ও মো. সনি (২৪। সিসি ক্যামেরায় ব্যাগ নিয়ে রহস্যজনক আচরণ দেখে হাসপাতালের পরিচালক তাঁদের আটকের ব্যবস্থা করেছিলেন। এরপর তাঁদের থানার পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।

হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, যাঁরা এখানে কর্মরত, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ওষুধ চুরির সঙ্গে জড়িত। তাঁরা এগুলো বাইরে বিক্রি করেন। রোগীরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনে ওটিতে নিয়ে গেলে সেখান থেকেও চুরি করা হয়। এই চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে। মনিটরিং করা হচ্ছে। এ কারণেই ইদানীং বেশ কিছু চোর ধরা পড়েছে। অন্যদের দিকেও নজর রাখা হয়েছে। যাঁরা ধরা পড়ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। হাসপাতালের একটা তদন্ত কমিটিও সব তদন্ত করছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত