Ajker Patrika

হেফাজতে ইসলামকে গালাগাল করায় সংসারে অশান্তি— ডা. মুরাদের ভাইরাল সাক্ষাৎকারটি এডিট করা

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ১৫ মে ২০২৪, ২১: ৫৭
Thumbnail image

অডিও কেলেঙ্কারির জেরে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ২১ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওটিতে দাবি করা হয়েছে, এটি জামালপুর–৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্যের সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের একটি অংশ।

ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, ডা. মুরাদ হাসান বিছানায় শুয়ে বেসরকারি সংবাদমাধ্যম সময় টিভিকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। তাঁর কপালে ব্যান্ডেজ। পাশে একজন নারী বসে আছেন। ডা. মুরাদ হাসান বলছেন, ‘আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিচ্ছে। আমি হেফাজতরে, কওমিকে গালিগালাজ করায় আল্লাহ আমাকে প্রচুরভাবে শাস্তি দিচ্ছে। আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক নেই। শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া! আমি একটা অশান্তির মধ্যে আছি, আমি সবার কাছে ক্ষমা চাই।’

‘মাসুম বিল্লাহ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) রাত ৮টা ৪৪ মিনিটে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ বুধবার (১৫ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ১৮ লাখ বার দেখা হয়েছে, শেয়ার হয়েছে ১৮ হাজার। একই ভিডিও ‘আব্দুল কাদের আল–আমীন’ নামের আরেকটি পেজ থেকে একইদিনে পোস্ট করা হয়। এই পোস্ট আজ একই সময় পর্যন্ত ২২ লাখ বার দেখা হয়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ২৪ হাজার। ভিডিওগুলোর কমেন্টবক্স ঘুরে দেখা যায়, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অধিকাংশ সাক্ষাৎকারটিকে সত্য ভেবে মন্তব্য করেছেন। 

ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১৩ মে ডা. মুরাদের সাক্ষাৎকারের মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি ওইদিন ‘সিলিং ফ্যান থেকেও রক্ষা পেলেন না ডা. মুরাদ!’ শিরোনামে চ্যানেলটিতে পোস্ট করা হয়। 

ডা. মুরাদ সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘হলরুমের বাইরে উঠানের ওপরে টিন শেড করা ওখানে লাইট ফ্যান আছে, ওখানে বসেই আমি কথা বলতেছিলাম, রোগী দেখতেছিলাম। তো আমার ওই সময়টাতে বেশ গরম লাগছিল। তো আমি আমার চেয়ারটা সরিয়ে ঠিক ফ্যানের নিচে গিয়ে বসি। তো বসার দুই তিন মিনিট বাদে ফ্যান অদ্ভুতভাবে...আমি চিন্তাও করতে পারি নাই, এসে খুলে আমার মাথার ডান চোখের ভ্রুর ওপরে এমন জোরে বাড়ি খায় যে, আমি ছিটকে পড়ে যাচ্ছিলাম। তো আমার সঙ্গে যারা ছিল...লোকজন নেতা–কর্মীরা ফ্যানটা ধরছে, নয়তো আরও ক্ষতি হতে পারত। তো আল্লাহর রহমতে আল্লাহ আমায় নিজে বাঁচাইছে। আল্লাহ নিজে আমার চোখটা রক্ষা করেছেন। আমাদের নেতা–কর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে ফ্যান সরিয়ে আমাকে ধরে তোলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এত রক্ত পড়তেছিল, আমি ভয় পেয়ে যাচ্ছিলাম! আরও বড় কোনো ক্ষতি হতে পারত। ফ্যানটা একটা জিআই তারের মধ্যে অ্যাঙ্গেল দিয়ে লাগানো ছিল। এটা হয়তো কেউ খেয়াল করে নাই। আগে কখনো এমন কোনো ঘটনা ঘটে নাই, অন্যান্য সব ফ্যান ঠিক আছে। ওইখানে প্রায় ছয়টা ফ্যান ছিল। ছয়টা ফ্যানের মধ্যে আমি যেই ফ্যানের নিচে ছিলাম, শুধু সেটাই পড়েছে। বাকিগুলো কিন্তু চলছিল। আমি আসলে মানুষের সেবা করার জন্যই এলাকায় আসি, থাকি। আর কোনো উদ্দেশ্য নাই। আমাকে জনগণ ভোট দেয়, নির্বাচিতও করেছে। আমাদের এই উপজেলার, এই নির্বাচনী এলাকার মানুষজনই বারবার নির্বাচিত করেছে, তারা আমাকে ভালোবাসে। আমিও তাদের আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।’

সময় টিভির ২০২২ সালের প্রতিবেদন এডিট করে ডা. মুরাদ হাসানের নকল ভয়েস বসানো হয়েছে। ছবি: সময় টিভি ইউটিউব ৩ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের পুরো ভিডিওটিতে ডা. মুরাদকে হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদ্রাসা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। এ ছাড়া ডা. মুরাদ হাসানের কণ্ঠস্বরের সঙ্গেও ভাইরাল ভিডিওটির কণ্ঠস্বরের মিল নেই।

এ থেকে স্পষ্ট, ২০২২ সালে নিজ বাড়িতে মাথার ওপর সিলিং ফ্যান পড়ে আহত হওয়ার ঘটনায় সময় টিভিকে ডা. মুরাদ হাসানের দেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিওটির শুধু অডিও পরিবর্তন করে প্রচার করা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত