Ajker Patrika

মিসরের ফেরাউনের মমির কি পাসপোর্ট আছে

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ৩০
Thumbnail image

দ্বিতীয় রামেসিস, বাইবেল ও কোরআনে যাকে ফেরাউন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ছিলেন মিসরের ১৯তম রাজবংশের তৃতীয় ফারাও, যিনি খ্রিষ্টপূর্ব ১৩ শতকের বেশির ভাগ সময় ধরে প্রাচীন রাজ্যটি শাসন করেছিলেন। তাঁর শাসনকাল ছিল প্রায় ৬৭ বছর, মিসরীয় ইতিহাসে যা দ্বিতীয় দীর্ঘতম। যিনি ১২২৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মারা যান। মৃত্যুর সময়ে তাঁর বয়স সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। মৃত্যুর পর অন্যান্য ফারাও রাজাদের মতো তাঁর মরদেহও মমি আকারে মিসরে সংরক্ষিত আছে। 

নিউইয়র্ক টাইমসে ১৯৭৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই সময় ছত্রাক সংক্রমণজনিত ‘রহস্যময়’ রোগের চিকিৎসার জন্য ফেরাউনের মমি করা দেহাবশেষ মিসর থেকে ফ্রান্সের প্যারিসে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘১৯৭৪  সালে উন্নতমানের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য তাঁর মমিকে ফ্রান্সে নেওয়ার প্রয়োজন হলে পাসপোর্টের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এটাই ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন ব্যক্তির পাসপোর্ট হিসেবে গণ্য করা হয়’—এমন একটি দাবি পাসপোর্টের ছবিসহ প্রচার করা হচ্ছে।

ফেরাউনের মমির কি আসলেই পাসপোর্ট করা হয়েছিল? তাঁর পাসপোর্ট দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সত্যতা কী?
ফেরাউনের পাসপোর্ট দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে হেরিটেজ ডেইলি নামের প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, জীবাশ্ম নৃতত্ত্ব এবং জীবাশ্মবিদ্যা-সম্পর্কিত একটি ব্লগসাইটে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ দ্বিতীয় রামেসিসের পাসপোর্ট শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ছবিটি পাওয়া যায়। ছবিটি সম্পর্কে ব্লগসাইটটিতে বলা হয়েছে, এটি হেরিটেজ ডেইলি ব্লগসাইটটিরই তৈরি। প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবহারের উদ্দেশে ছবিটি তৈরি করা হয়। 

ছবিটি সম্পর্কে ব্লগসাইটটির মালিক মার্কাস মিলিগান ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর এএফপি ফ্যাক্টচেককে বলেন, ভাইরাল পাসপোর্টের ছবিটি মার্কাস মিলিগান নিজেই ২০১৮ সালে তৈরি করেছিলেন। পরে ডেটা হারিয়ে যাওয়ায় তিনি ২০২০ সালে এটি পুনরায় প্রকাশ করেন।  

অর্থাৎ ফেরাউনের পাসপোর্টের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, জীবাশ্ম নৃতত্ত্ব এবং জীবাশ্মবিদ্যা-সম্পর্কিত ব্লগসাইটের মালিক মার্কাস মিলিগানের তৈরি করা। ভাইরাল ছবিটির সঙ্গে ফ্রান্স বা মিসর সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। 

ফেরাউনের পাসপোর্ট দাবিতে প্রচারিত ছবিটি একজন ব্লগারের তৈরি। ছবি: হেরিটেজ ডেইলিফেরাউনের মমি মিসর থেকে ফ্রান্সে নেওয়ার জন্য কি কোনো পাসপোর্ট করা হয়েছিল?
ফ্রান্সের অ্যান্টেনা ২ টিভি নেটওয়ার্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস ১৯৭৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় রামেসিস বা ফেরাউনের মমি মিসর থেকে ফ্রান্সে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছত্রাক সংক্রমণজনিত রহস্যময় রোগের চিকিৎসার জন্য ফেরাউনের মমিটিকে ওই সময় ফ্রান্সে আনা হয়েছিল। দেশটিতে মমিটি পৌঁছানোর পর গার্ড অব অনারের মাধ্যমে প্রাচীন মিসরের এই রাজাকে সামরিক সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০১১ সালে দ্বিতীয় রামসেস: দ্য গ্রেট জার্নি’ নামে প্রকাশিত এক ডকুমেন্টারি থেকে জানা যায়, ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভালেরি মারি র‍্যনে জর্জ জিস্কার দেস্তাঁ মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল-সাদাতকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ফ্রান্সে ফেরাউনের মমিকে ‘একজন সার্বভৌম শাসকের সম্মাননা’ দেওয়া হবে। 

তবে অ্যান্টেনা ২ টিভি নেটওয়ার্ক, নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন এবং ‘দ্বিতীয় রামসেস: দ্য গ্রেট জার্নি’ ডকুমেন্টারির কোথাও মিসর থেকে ফ্রান্সে ফেরাউনের মমি নিয়ে যাওয়ার সময় সেটিকে পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। 

ফেরাউনের মমি মিসরে আনার সময় কোনো পাসপোর্ট তৈরি হয়েছিল কি না—এমন প্রশ্নে ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়ামের মিসরীয় পুরাকীর্তি বিভাগের ডকুমেন্টারি স্টাডিজ কর্মকর্তা এলিসাবেথ ডেভিড ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর  এএফপি ফ্যাক্টচেককে বলেন, ফেরাউনের মমি মিসর থেকে ফ্রান্সে আনার সঙ্গে পাসপোর্টের  দাবির কোনো ভিত্তি নেই। 

তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে পাসপোর্ট ধারণাটির উৎপত্তি হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ফ্রান্স সরকার একজন মৃত রাজাকে পাসপোর্ট দিতে বলে না।

ফ্রান্সের টুলুজ ওয়ান ইউনিভার্সিটি ক্যাপিটোলের পাবলিক আইনের অধ্যাপক ম্যাথিউ তুজিল-ডিভিনাও এএফপিকে বলেন, মৃত মানুষের জন্য ফরাসি আইনে কোনো বাধ্যতামূলক পাসপোর্ট নেই। মমির মতো বিষয় স্থানান্তরের ক্ষেত্রে এগুলোকে ক্ল্যাসিক্যাল সম্পত্তি আইনের অধীন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই ফেরাউনের মমির সঙ্গে ‘পাসপোর্ট’ ব্যবহারের তথ্যটি সঠিক নয়। 

উপরিউক্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট, ছত্রাক সংক্রমণজনিত রহস্যময় রোগের চিকিৎসার জন্য ফেরাউনের মমিকে ফ্রান্সে আনার সময় কোনো পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি এবং তাঁর পাসপোর্ট দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ছবিটিও একজন ব্লগারের তৈরি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত