Ajker Patrika

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোনো ফল কি নিষিদ্ধ

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ৫৪
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোনো ফল কি নিষিদ্ধ

আঙুর, তরমুজ, আম, কলা, আনারসসহ বেশ কিছু ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ দাবি করে টিকটকে কিছুদিন ধরে একটি ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে। এটি আজ বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ২টা পর্যন্ত ৫ লাখ ৩৬ হাজার বার দেখা হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই প্ল্যাটফর্মে ভিডিওটি ১ হাজার ৩০০ বারের বেশি শেয়ার হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও উল্লিখিত ফলসহ বেশ কিছু ফলকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর বলা হচ্ছে। বিশেষভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোনো ফল কি ক্ষতিকর বা চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী কোনো ফল কি নিষিদ্ধ?

স্বাস্থ্যবিষয়ক ম্যাগাজিন মেডিকেল নিউজ টুডে এসব প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের (এডিএ) বরাত দিয়ে জানায়, ডায়াবেটিস সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির ফল খাওয়ায় কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তাঁরা যেকোনো ফলই খেতে পারবেন। সেটা হতে পারে তাজা ফল, চিনিমুক্ত ফ্রোজেন ফ্রুট বা ফ্রিজারে সংরক্ষিত ফল ও কৌটাজাত ফল। তবে সংরক্ষিত ফল ও কৌটাজাত ফল খাওয়া ও কেনার সময় পুষ্টিমান দেখে কেনা এবং কম চিনিযুক্তটা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ফলের মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার বিষয়টিও ডায়াবেটিস রোগীকে মনে রাখতে হবে। 

ম্যাগাজিনটি জানায়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের (জিআই) মাধ্যমে খাদ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার পরিমাণ সম্পর্কে জানতে পারেন। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হলো, ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত স্কেলে খাবারের রেটিং। এই স্কোর নির্দেশ করে খাবার কত দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। সাধারণভাবে শরীর মাঝারি বা নিম্ন জিআই খাবারের তুলনায় উচ্চ জিআই খাবার দ্রুত শোষণ করে।  

এডিএ জানায়, জিআই স্কোরের ভিত্তিতে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফল ভালো খাবার। কারণ, বেশির ভাগ ফলে ফ্রুক্টোজ এবং প্রচুর ফাইবার থাকায় এদের জিআই স্কোর কম থাকে। আনারস, তরমুজ ও কিছু শুকনো ফলের জিআই মান মাঝারি ধরনের। যদিও ২০১৯ সালে এডিএর এক গবেষণায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং ডায়াবেটিস নিয়ে গবেষণায় মিশ্র ফল পাওয়া গেছে। কয়েকজন গবেষকের মতে, জিআইয়ের সঙ্গে ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কোনো সম্পর্ক নেই। 

কারণ, ভিন্ন ভিন্ন খাবারের সঙ্গে ফল খেলে জিআই স্কোরেরও পরিবর্তন ঘটে। যেমন পিনাট বাটার বা পনিরের সঙ্গে মিশিয়ে আপেল খেলে এর জিআই স্কোর কেবল আপেলের জিআই স্কোর থেকে কম আসে। আবার ফল পাকার সঙ্গে জিআই রেটিংও বাড়তে থাকে। সর্বোপরি, চিকিৎসক বা খাদ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফল খাওয়ায় কোনো বারণ নেই। 

প্রসঙ্গত, ডায়াবেটিসের তিনটি ধরন আছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ধরন টাইপ ২ ডায়াবেটিস। বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ৯০ শতাংশই এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। 

২০১৭ সালে সাপ্তাহিক মেডিকেল জার্নাল পিএলওএস মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, উচ্চ মাত্রার ফল খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিসের কোনো সম্পর্ক নেই; বরং বেশি ফল খাওয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। ২০০৪ থেকে  ২০০৮ সালের মধ্যে ৫ লাখের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক চায়নিজ নাগরিকের ওপর এই গবেষণা করা হয়। তাঁদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ও ডায়াবেটিস নেই—এমন দুই ধরনের মানুষই ছিল।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশ্বের অনেক দেশে তাজা ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়, যা আসলে উচিত নয়। এ ছাড়া ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে ২০১৩ সালে প্রকাশিত গবেষণার বরাত দিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন জানায়, আপেল, ব্লুবেরি, আঙুর খাওয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের (এডিএ) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, যে ফলগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, সেসব ফল ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারবেন। এই তালিকায় উল্লেখযোগ্য ফলের মধ্যে আছে আপেল, কলা, আঙুর, আম, কমলা, পেঁপে, আনারস, তরমুজ, জাম্বুরা, বরই, স্ট্রবেরি ইত্যাদি।

তবে এসব ফলের মধ্যে তরমুজ, আনারস, অতিরিক্ত পাকা কলা জিআই স্কোর অন্যান্য ফলের তুলনায় মাঝারি থেকে উচ্চমানের। ফলে এসব ফল অন্যান্য ফলের তুলনায় দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। কিন্তু এ জন্য এসব ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ ব্যাপারটি তেমন নয়; বরং তাঁরা এসব ফল অন্যান্য ফলের তুলনায় সীমিত আকারে গ্রহণ করতে পারবেন।

ডায়াবেটিস রোগীরা যেসব ফল খেতে পারবেন। ছবি: আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনযুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক চিকিৎসাকেন্দ্র মায়ো ক্লিনিক জানায়, ডায়াবেটিস হলে নির্দিষ্ট কিছু ফল খাওয়া যাবে না—এটি প্রচলিত ভুল ধারণা। কারণ, ফলমাত্রই অতিরিক্ত মিষ্টি। কিছু কিছু ফলে অন্যান্য খাবারের চেয়ে বেশি চিনি থাকে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে ডায়াবেটিস হলে ওই ফল খাওয়া যাবে না। 

একজন ডায়াবেটিস রোগীর একবারে ১৫ গ্রামের বেশি কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা গ্রহণ করা উচিত না। ছবি: মায়ো ক্লিনিক  তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কেউ ফল খেতে চাইলে তাঁকে মনে রাখতে হবে, একবারে ১৫ গ্রামের বেশি কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা গ্রহণ করা যাবে না। তাই কম কার্বোহাইড্রেট ফলের সুবিধা হলো, একবারে বড় অংশ খাওয়া যায়। মাঝারি আকৃতির আপেল, কলার অর্ধেকে বা মাঝারি আকৃতির কমলায় ১৫ গ্রামের মতো শর্করা থাকে।

উল্লিখিত আলোচনা থেকে স্পষ্ট, কোনো ফল খাওয়াই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ নয়। ডায়াবেটিস রোগীরা যেকোনো তাজা ফলই খেতে পারেন। তবে অবশ্যই শর্করার পরিমাণের ওপর খেয়াল রাখতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতিসংঘে চিঠি লিখলেন মোগল সম্রাটের বংশধর, সুরক্ষা চাইলেন আওরঙ্গজেবের সমাধির

সেভেন সিস্টার্সে বিনিয়োগ টানতে বিশেষ সম্মেলন আয়োজন করছে ভারত

কবি রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে

আফ্রিকা থেকে পিঁপড়া যাচ্ছে ইউরোপে, কেনিয়ার বিমানবন্দরে জব্দ কয়েক লাখ

কফিশপে মারধরের শিকার সেই তরুণীর খোঁজ মিলেছে, থানায় জিজ্ঞাসাবাদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত