Ajker Patrika

উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়ম, কাজ বন্ধ

নেছার উদ্দিন, ফুলতলা (খুলনা)
Thumbnail image

খুলনার ফুলতলা উপজেলার গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ঘরে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের প্রমাণ পেয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। অভিযোগের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিন পরিদর্শনকালে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে নির্মাণাধীন কিছুসংখ্যক ঘরের পিলার, লিংটন ও গ্রেড বিম ভেঙে ফেলা হয়।

খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর ও আলকা মৌজায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে ২ দশমিক ৬৬ একর জমি কেনা হয়। এ জমিতে গৃহহীন ও ভূমিহীন ৭০টি পরিবারের আবাসনের জন্য ২ শতাংশ জমিসহ ৭০টি ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বোরহান ট্রেডার্সের মালিক ফুলতলার বুড়িয়ারডাঙ্গা গ্রামের শেখ বোরহান উদ্দিন নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান। সদ্য বিদায়ী ইউএনও সাদিয়া আফরিনের তত্ত্বাবধানে গত ১ নভেম্বর চতুর্থ পর্যায়ের ঘরের নির্মাণ শুরু হয়। ইতিমধ্যে ২০টি ঘরের গাঁথুনি ও পলেস্তারা শেষ হয়ে ১০টি ঘরের লিংটন পর্যন্ত এবং ৫টি ঘরের গ্রেড বিমের ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।

গত মঙ্গলবার নবাগত ইউএনও খোশনূর রুবাইয়াৎ আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণাধীন ঘর পরিদর্শনে গিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে রডের ব্যবহার দেখার উদ্দেশ্যে একটি গ্রেড বিম ভাঙতে নির্দেশ দেন। হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতেই ঢালাই গুঁড়া হয়ে গ্রেড বিমের ভেতরের রড বেরিয়ে আসে। ১২ মিলির পরিবর্তে ১০ মিলি রড এবং ৬ ইঞ্চি দূরত্বের রিং আড়াই ফুট দূরত্বে গাথার বিষয়টি প্রকাশ পায়। ঠিক একই অবস্থা পিলার ও লিংটনে। এ অবস্থা দেখে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।

নির্মাণাধীন ঘরে নিম্নমানের ইট, খোয়া ও বালু ব্যবহৃত হচ্ছে—এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পুলক কুমার মণ্ডল নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী সরেজমিন এসে দেখেন। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলামও ঘরের কাজের অগ্রগতি ও নির্মাণকাজ দেখতে আসেন।

এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, সরকারি ছুটির দিনে ঠিকাদারের নিজস্ব লোকের প্রহরায় গোপনীয়তার সঙ্গে নির্মাণশ্রমিকদের শাবল ও হাতুড়ির মাধ্যমে নির্মাণাধীন কিছুসংখ্যক ঘরের পিলার, লিংটন ও গ্রেড বিম ভাঙতে দেখা যায়। তবে ঠিকাদারের নিযুক্ত লোকের বাধার মুখে সাংবাদিকেরা ছবি না তুলেই স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

ওই এলাকার বাসিন্দা মাকিদ সরদার বলেন, সঠিক তদারকির অভাবে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও পরিমাণের তুলনায় কম নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে। আবার নির্মাণকাজ চলার সময় আশপাশের কোনো লোককে প্রকল্পের ধারেকাছে আসতে দেয় না।

প্রকল্পের কথিত ঠিকাদার শেখ বোরহান উদ্দিন নির্মাণকাজের অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট লেবার ও মিস্ত্রিদের ভুলে কাজে সঠিক নিয়ম রক্ষা করা হয়নি। সে কারণে নিজের দায়িত্বে কিছু ঘরের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলা হচ্ছে।’ 
এ ব্যাপারে প্রকল্পের সভাপতি ও নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ঠিকাদার বলে কিছুই নাই। দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বুধবার আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রাথমিকভাবে দেখে এসেছি। শিডিউল অনুযায়ী ঘর নির্মাণ করেছে কি না, তার সব দিক বুঝে নেব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত