Ajker Patrika

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

জুবায়ের আহম্মেদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ইচ্ছুক মানবিক, কলা ও বিভাগ পরিবর্তনের ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর দ্বিতীয় পছন্দ দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। জাবির ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও একক। প্রতিটি ইউনিটে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা সিট বরাদ্দ থাকে এবং আলাদা মেধাতালিকা প্রকাশ করে। ভর্তি পরীক্ষার্থী অনেক বেশি হওয়ায় আর জাবি প্রশাসন নিজ ক্যাম্পাসে পরীক্ষা নেওয়ায় প্রতিটি ইউনিটে শিফটভিত্তিক পরীক্ষা হয় এবং প্রতিটি শিফটে বেশ কয়েক সেট প্রশ্ন থাকে। কোনো শিফটে প্রশ্ন তুলনামূলক সহজ ও কোনো শিফটে তুলনামূলক কঠিন প্রশ্ন হলেও সব শিফট মিলেই সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এ জন্য জাবিতে চান্স পেতে যেমন কঠোর পরিশ্রম দরকার, তেমনি দরকার কৌশলী হওয়া।

সি ইউনিট (কলা, মানবিক অনুষদ ও বঙ্গবন্ধু সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট)
পরীক্ষার সময় ও মানবণ্টন
জাবি কর্তৃপক্ষ এখনো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। গতবারের বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, সি ইউনিটে মোট সিট সংখ্যা প্রায় ৪৭০। সি ইউনিটে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার যে কেউ পরীক্ষা দিতে পারে এবং প্রত্যেক শাখার জন্য ও ছেলেমেয়ের আলাদা মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রশ্ন থাকে ৮০টি। এর মধ্যে বাংলা ১৫, ইংরেজি ১৫, সাধারণ জ্ঞান ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন থাকে ৫০টি। সময় ৫৫ মিনিট এবং ওএমআর শিট পূরণের জন্য অতিরিক্ত ৫ মিনিটসহ মোট ৬০ মিনিট বা ১ ঘণ্টা সময় থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের ভুল উত্তরের জন্য ০.২০ নম্বর কাটা হয়। চূড়ান্ত মেধাতালিকায় সর্বাধিক ১০ গুণ শিক্ষার্থীর মেরিট লিস্ট প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত হয়। 

যেসব বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে
বাংলা, ইংরেজি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জার্নালিজম ও মিডিয়া, ইতিহাস, দর্শন, প্রত্নতত্ত্ব, চারুকলা, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট। 

বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি: বাংলা
বাংলায় পড়তে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে বাংলায় A- ইংরেজিতে ন্যূনতম B পেতে হবে এবং ইউনিটে বাংলায় ১৫ এর ৫০% বা ৭.৫ নম্বর ও ইংরেজিতে ১৫-এর ৪০% বা ৬ নম্বর পেতে হবে। বাংলায় ভালো নম্বর তুলতে চাইলে উচ্চমাধ্যমিকে পঠিত সাহিত্য বই ও নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণটি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। 

ইংরেজি
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজিতে A থাকতে হবে। ইংরেজি প্রশ্ন ১৫-এর ৭০% বা ১০.৫ পেতে হবে। ইংরেজিতে ভালো নম্বর পেতে ইংরেজি টেক্সট বুক ও গ্রামাটিক্যাল নিয়মগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
এ বিষয় নিয়ে পড়তে চাইলে উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজিতে অবশ্যই A+ পেতে হবে এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ৭০% নম্বর পেতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকস—সাম্প্রতিক তথ্য, আন্তর্জাতিক সংস্থা, দেশ, রাজধানী, মুদ্রা, প্রণালি, খাল, বিশ্বসাহিত্য, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন দেশের সরকারব্যবস্থা ইত্যাদি। 

জার্নালিজম ও মিডিয়া
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজিতে A পেতে হবে। এই বিষয়ের সাধারণ জ্ঞানে ৬০% নম্বর পেতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকস—আন্তর্জাতিক সংবাদ, মিডিয়াব্যক্তিত্ব, পত্রপত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন ও এগুলোর স্লোগান বা প্রতিপাদ্য। 

এস এম মোবাশ্বের আহমেদ ফুয়াদইতিহাস
উচ্চমাধ্যমিকে বাংলা ও ইংরেজিতে A- পেতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকস—সভ্যতা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, উপমহাদেশের ইতিহাস (প্রাচীন যুগ থেকে বর্তমান) ব্রিটিশ শাসন, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন চুক্তি ও বিপ্লব, যুদ্ধ, বিভিন্ন দেশ, পাকিস্তানি আমল, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ। 

দর্শন
বাংলা, ইংরেজিতে A- পেতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকস—সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য, ধারা, অনুপাত, আইকিউ, সাধারণ জ্ঞান, যুক্তি, অনুধাবনমূলক প্রশ্ন, দার্শনিক উক্তি। 

প্রত্নতত্ত্ব
জাবিতেই প্রথম বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে পড়ানো হয়। জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মুন্সিগঞ্জের উয়ারী-বটেশ্বরে খননকাজ ও গবেষণায় প্রধান ভূমিকা পালন করে। এই বিভাগে পড়তে চাইলে এই বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত আলাদা মেরিট লিস্টে জায়গা করে নিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টপিক প্রত্নতত্ত্বের উদ্ভব ও বিকাশ, আধুনিক প্রত্নতত্ত্ব, বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল ও ইতিহাস, বিভিন্ন জাদুঘর।

চারুকলা, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব
এই দুটি বিভাগে দুটি ধাপে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেতে হয়। প্রথমে MCQ পরীক্ষা দিয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। এরপর ব্যবহারিক পরীক্ষায় পাস করলে চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ টপিকস—চারুকলার জন্য বাংলাদেশের চিত্রশিল্পী, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য, বিশ্বের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ও চিত্রকর, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ। বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও নাট্যকার, নাটক ও নাটকের প্রধান চরিত্র, শেক্‌সপিয়ারের সাহিত্যকর্ম ও নাটক, বাংলা সাহিত্যের যা যা প্রথম ইত্যাদি। 

বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট
গুরুত্বপূর্ণ টপিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীগ্রন্থ ও তাঁকে নিয়ে লেখা গ্রন্থগুলোর লেখক পরিচিতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক লেখা বই ও প্রাপ্ত পুরস্কার ও উপাধি, বিশ্বসাহিত্য। 

বিগত বছরের প্রশ্নব্যাংক
জাবির প্রশ্ন পদ্ধতি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে আলাদা হওয়ায় প্রস্তুতি নিতে কৌশলী হতে হবে। এ জন্য বিগত বছরগুলোতে আসা বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান করে সিলেবাস সম্পর্কে ধারণা রেখে সেই টপিকগুলোর খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নিতে হবে এবং প্রশ্ন যেভাবেই আসুক যেন উত্তর পারা যায়। শিফটভিত্তিক পরীক্ষায় একই টপিকের ওপর ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্ন হয়। যেমন জাতিসংঘ নিয়ে প্রশ্ন আসলে একটা শিফটে প্রতিষ্ঠার বছর জানতে চাইল, আরেক শিফটে জাতিসংঘের সদস্যসংখ্যা জানতে চায়। প্রশ্ন ঠিক এমনই করে করা হয়। তাই সব টপিক ভালোভাবে আয়ত্তে আনতে হবে। 

করতে হবে প্রচুর অনুশীলন
আমরা যখন পড়াশোনা করি, তখন সব উত্তর করতে পারব বলে মনে হয় কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় সব ভুলে গেছি কিংবা প্রশ্নের অপশন দেখলেই কনফিউশনে পড়ে যাই। পরীক্ষার হলে ঠিক এই সমস্যার মুখোমুখি হয়ে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী চান্স পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এ জন্যই প্রতিদিন মডেল টেস্ট অনুশীলন করা প্রয়োজন এবং দ্রুত প্রশ্নের সমাধান করা দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে টাইম ম্যানেজমেন্ট করা যায়। 

ব্যক্তিগত পরামর্শ
জাবির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনেক গুজব শোনা যায় এবং এসব শুনে অনেকে ভীত হয়ে নার্ভ ধরে রাখতে পারে না বিধায় পরীক্ষা খারাপ করে। ফার্স্ট টাইমাররা ভাবে, সেকেন্ড টাইমাররাই সব সিট দখল করে নেয়; কিন্তু আসলে সেটা না। সেকেন্ড টাইমাররা প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হওয়ায় একটা বাড়তি সুবিধা পায়; তবে তাদের অনেক মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সব সময় একটা সংশয় থাকে চান্স না পাওয়ার। এ জন্য তারা নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে ভালো করার চেষ্টা করে। সেকেন্ড টাইমারদের উদ্দেশে আমার উপদেশ থাকবে, এত মানসিক চাপ না নিয়ে শুরু থেকেই আস্তে-ধীরে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং পড়াশোনার মধ্যে থাকতে হবে। হতাশায় হাল ছাড়া যাবে না, লেগে থাকতে হবে। তবেই একদিন জয়ের স্বাদ পাবে আর জাবিকে নিজের করে নিতে পারবে। সবার জন্য দোয়া ও শুভকামনা থাকল।

এস এম মোবাশ্বের আহমেদ ফুয়াদ, ২০২০-২১ সেশনে জাবি ভর্তি পরীক্ষায় সি ইউনিটে ১ম, ইংরেজি বিভাগে ১ম, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ২য়।

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত